Skip to content

বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের সমস্যা ও প্রস্তাবিত একটি সমাধান

    গার্মেন্টস শিল্পের সংকট ও সমাধান

    একটু অবাকই হওয়ার কথা। দেশে যখন এত এত সংকট চলছে তখন কি না গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে বলার কী আছে। আমরা এক্ষেত্রে এমনিতেই সফল। বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি। বড় বড় সমস্যা বাদ দিয়ে ছোট সমস্যা নিয়ে আলোচনার হেত কী? এ যেন আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর।

    মূলত আমাদের গার্মেন্টস শিল্প যতটা এগিয়েছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকলে ততটাই পিছিয়ে যেতে পারে। একসময় পাট ছিল বাংলার প্রধান অর্থকারি ফসল। কিন্তু সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে এখন পাটকল শ্রমিকরা বেতনই পায় না। তাই উন্নতির সাথে সাথে উন্নতিকে স্থিতিশীল রাখাটা জরুরি।       
    আমাদের দেশের শ্রমিকরা নিজেদের রক্তের শ্রম বিক্রী করে দিনরাত খেটে যাচ্ছেন। বিনিময়ে তারা পাচ্ছেন নামমাত্র মজুরি। আর তাদের চাপা পড়া আবেগকে কাজে লাগাচ্ছে অদূরদর্শী বিভিন্ন দল। শিখাচ্ছে তাদের চটকদার শ্লোগান। বিনিময়ে গার্মেন্টস ধ্বংস হচ্ছে আর শ্রমিকরা কর্মহীন হচ্ছে। 

    বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে এক বিরাট ভূমিকা পালন করছে আমাদের গার্মেন্টস শিল্প। বিদেশের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আমাদের এই শিল্পের বিরাট অংশ রয়েছে। কিন্তু আফসোসের বিষয় হচ্ছে, কেবল স্বার্থের কারণে দেশের এই শিল্পকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। রীতিমত অখ্যাত ব্যক্তিরা এই সব শ্রমিকদের জননেতা (?) হয়ে যাচ্ছেন।এই খাতে এত অসন্তোষের কিছু কারণ আছে-

    গার্মেন্টস শিল্পের দুরবস্থা কেন?

    ১. শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি না দেওয়া : ন্যায্য মজুরির কোনো সংজ্ঞা হয় না। আপনার প্রয়োজন একরকম আমার প্রয়োজন ভিন্ন থাকতে পারে। এছাড়াও অর্থের যোগানের পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতির সমূহ সম্ভাবনা থাকে। এজন্য কারো পক্ষেই ন্যায্য মজুরির সংজ্ঞা বের করা বেশ কঠিন। 
    ২. স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন সুবিধার জন্য শ্রমিকদের আবেগ কাজে লাগিয়ে গার্মেন্টসে অস্থিতীশীলরিবেশ সৃষ্টি করে : একদিকে অল্প বেতনে শ্রমিকদের সংসার চলা দায়। অন্যদিকে বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন কর্তৃক ধর্মঘট, হরতাল, কাজে যোগ না দেওয়া ইত্যাদি কারণে মালিকরা বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ফলে একসময় মালিক বাধ্য হয়ে শ্রমিক ছাটাই শুরু করে।
    ৩. মালিক ও শ্রমিকের মাঝে একটা দূরত্ব বা প্রভুসুলভ আচরণ থাকা : শ্রমিক মালিককে আপন মনে করে না অন্যদিকেও মালিকও শ্রমিকদের সাথে মিশতে চায় না। এই দূরত্ব থেকেও সংঘাতের সৃষ্টি হয়।
    ৪. চাপের মুখে শ্রমিকদের অন্যায় দাবির প্রতি মালিকপক্ষের আশ্বাস। পরিণামে মালিক তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয় এবং শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। আপনিই বলুন ৬ হাজার টাকা বেতন থেকে এক লাফে ১২,০০০ টাকা বেতন হয় কীভাবে??

    আপনি হয়তো বলতে পারেন, মালিকপক্ষ ঐরকম লাভ করে বলেই তো এই দাবি উঠেছে। ভাই যেসব বুদ্ধিজীবী এসব কথা বলে তাদের ড্রাইভারের ক্ষেত্রে দেখুন কত টাকা বেতন দেয়। বাংলাদেশের শ্রমিকদের বেতন কম বলেই বিদেশ থেকে এখানে অর্ডার আসে। আমরা যদি আমেরিকা বা চীনের মতো উচ্চমূল্যের শ্রমিক দিতাম তবে কিন্তু এত অর্ডার আসত না।

     

    যত গর্জে তত বর্ষে না। বাহিরের বাজারে আমাদের দ্রব্যের দাম কম বলেই আজ তারা আমাদের থেকে কাপড় বানিয়ে নেয়।…..এর মধ্যে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে একটা লভ্যাংশ দিতে হয়।…..একবার শ্রমিক আন্দোলন দেখা দিলে মালিককে পুরা মাটিতে বসে যেতে হয়।….রাজনৈতিক দলকে উৎকোচ দিতে হয়।….তো বলুন,তারা এত লাভ পায় কোথায়? হ্যা, বেতন যে বাড়াতে পারে না ব্যাপারটা এমন নয়। তবে এক লাফে কখনোই ১২০০০ হাজার নয়।

     

    প্রস্তাবিত সমাধান

     

    শ্রমিকদের সাথে মালিকপক্ষ শেয়ারে বিজনেস করতে পারে। মডেলটা এমন যে, মালিকপক্ষ একটা পোশাক গার্মেন্টস দিতে চায়। তাদের থেকে 50% টাকা কাজে লাগানো হবে। বিশেষ করে তাদের টাকা দিয়ে জমির ইজারা বা বিল্ডিং (যে জিনিসগুলো সহজে ক্ষতি করা যায় না) সেগুলো কেনা হবে।

    তারপর বাকি অংশ মালিকপক্ষ গার্মেন্টের জন্য কতজন শ্রমিক প্রয়োজন, সেই অনুযায়ী শেয়ার ছাড়বে। যেমন আমার গার্মেন্টসে ৫ হাজার শ্রমিক দরকার। প্রত্যেকের কাছে ২ হাজার টাকার শেয়ার ছাড়া হবে। যারাই শ্রমিক থাকবে, তারাই কেবল শেয়ার কিনতে পারবে এবং কিনতে বাধ্য থাকবে। তবে সবাইকে সমান সংখ্যক শেয়ার কিনতে হবে। কেউ দুটি, কেউ চারটি এমন করা যাবে না। পাশাপাশি শ্রমিকদের কাজের জন্য একটা সময়োপযোগী বেতন ফিক্সড করা হবে। শ্রমিকদের টাকা দিয়ে মেশিন, যন্ত্রপাতি (যেগুলো আন্দোলনের সময় ভাংচুর হয়) কেনা হবে।

     

    কোম্পানি প্রতি বছর তার লাভের ৫০% শ্রমিকদের শেয়ারের মাঝে বণ্টন করে দিবে এবং ঘোষণা করে দিবে যে, এই বছর প্রত্যেকের শেয়ারের দাম এতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং যদি কোনো শ্রমিক গার্মেন্টে চাকরি ছাড়তে চায়, তবে সে তার শেয়ার অন্য শ্রমিকের কাছে বিক্রী করে লাভবান হতে পারবে। এর ফলে যে লাভ হবে-

    ১. মালিক-শ্রমিকের মাঝে দূরত্ব কমে আসবে।
    ২. শ্রমিকদের শেয়ারের টাকায় মেশিন কেনায় তারা আন্দোলনের সময় এগুলো ভাঙচুর করবে না।
    ৩. শ্রমিকদের শেয়ার গার্মেন্টসে থাকায় তারা কাজের ব্যাপারে আন্তরিক হবে।
    ৪. শেয়ার ট্রান্সফারের সুযোগ থাকায় শ্রমিকরা কোনো অনিশ্চয়তায় ভুগবে না।
    ৫. মালিকের তুলনামূলক পুঁজি কম লাগায় খুব সহজেই দেশে বেশি ফ্যাক্টরি গড়ে উঠবে।
    ৬. বিনিয়োগে রিস্ক কম থাকায় বিদেশিরা আমাদের দেশে বিনিয়োগ করবে। এমনকি পুঁজি কম লাগায় দেশীয় ব্যবসায়ীরাই অধিক বিনিয়োগ করতে পারবে। যার ফলে আমাদের অর্থ বাহিরে পাচার হবে না।
    ৭. তবে এর জন্য ব্রোকারেজ হাউসগুলোর দৌরাত্ম্য হ্রাস করতে হবে।

    ৮. রাজনীতিবিদদের অবশ্যই আন্তরিক হতে হবে।

    এগুলো যদিও প্রাথমিক পর্যায়ের সমাধন তবে কাজে আসবে বলে আশা করি। তারপরও এগুলো নিয়ে বিস্তর আলোচনা প্রয়োজন। সেই ভার পাঠকের উপর ছেড়ে দিচ্ছি।

    লেখক
    ওমর ফারুক
    রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
    01921122611

    Leave a Reply

    You cannot copy content of this page