আজ সাধারণত আমাদের সন্তানদের নাম মুসলিম স্কলার বা সাহাবিদের নাম অনুযায়ী রাখা হয় না। মিডিয়ার অপ্রপচারের কারণে মফিজ,কাসেম, কুদ্দুস ইত্যাদি অর্থবোধক নামগুলো কেউ সন্তানদের রাখে না। একটু ব্যাতিক্রম বা কিছুটা আধুনিকতার জন্য আমার নায়ক-নায়িকা বা খেলোয়াড়দের নাম পছন্দ করি। ফলে আমরা বড় হয়ে আমাদের নামের সাথে ইসলামি ব্যক্তিত্ব খুঁজে পাই না। খুঁজে পাই নায়ক-নায়িকার নাম। আর এসব নামে প্রভাব স্বরূপ আমাদের অন্তরে ইসলাম দাগ কাটতে পারে না। এই সংক্রান্ত লেখাটি পড়ুন-মুসলিম নাম নিয়ে ছিনিমিনি
জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবস্থান কোথায়?
জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মুসলমানদের অবদানেরকথা আমরা জানি না। যত বিজ্ঞানীরই পরিচয় দেওয়া হোক না কেন সেখানে কোনো মুসলমানের নাম খুঁজে পাওয়া যাবে না।কারণ, আমরা তাদের অবদানের ইতিহাস পড়ি না। ফলে মনে হয় মুসলমানরা কেবল একটা ফোকলা জাতি। জ্ঞান-বিজ্ঞানে এদের কোনো অবদান নেই। জানি না আল-বেরুনি, ইবনে সিনা বা জাবির ইবনে হাইয়ানের মতো বিজ্ঞানীদের।
Islam is the complete code of lifeএ কথার বিরুদ্ধে প্রোপাগাণ্ডায় তারা শতভাগ সফল। তাই আমরা রাজনীতি-ব্যবসা সর্ব ক্ষেত্র থেকে ইসলামকে বিতাড়িত করতে চাই। ইসলামকে কেবল অন্যান্য ধর্মের মতোধর্মশালায় সীমাবদ্ধ রাখতে চাই। আর মনে হয় যেন ইসলামই সব ভেজালের মুল। ফলে আমরা দিন দিন ধর্ম থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। ধর্মীয় শিক্ষাকে পিছনে ঠেলে দিচ্ছি। তাই শান্তির জন্য যতই পায়রা উড়ানো হচ্ছে শান্তির মা কিন্তু দেখা দিচ্ছে না।
আমাদের ইতিহাস না জানারকারণে আমরা আজ হীনষ্মন্যতায় ভুগছি। আমরা আজ রুশ বিপ্লব,ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাস পড়ি। তাদের থেকে অনুপ্রেরণা নেই। কিন্তু আমরা স্পেন বিজয় বা ক্রুসেডের ইতিহাস জানি না, পড়ি না। ফলে আমরা কেবল লেনিন-মার্কসের ছায়াতেই বিপ্লবের অস্তিত্ব বোধ করি। আর মনে করি মুসলিম জাতির কোনো গৌরবময় অতীত নেই। তারা কেবল পরাজিতই হবে। আমাদের মা-বোনেরা ইতিহাস জানে না। ফলে আর তাদের থেকে সালাহুদ্দিন-তারেকের মতো লোক জন্ম নেয় না। এখন আমাদের প্রজন্ম কেবল ‘আধুনিকতা নির্ভর’।
পাশ্চাত্যদের কল্যাণে আমরা ইসলামি সংস্কৃতির পরিচায়ক বিষয়গুলোকে হাসির পাত্র বানিয়ে নিয়েছি। তাদের অনুসরণকেই কল্যাণ মনে করি। দাড়ি-টুপিকে হেটা করি। আর বিচিত্র ভঙ্গির পোশাককে শ্রদ্ধা করি। এভবে আমরা আমাদের ধর্মীয় সংস্কৃতিকেই ভুলে যাচ্ছি।
মুসলিম দেশসমূহকে ঘৃণা করতে পারা আমাদের স্ট্যাটাস হযে দাঁড়িয়েছে। ঘৃণার উদ্দেশ্যে তাদের ভুল নিয়ে আলোচনা করতে আনন্দ পাই। মনে হয় ‘পাকিস্তান আর আফগানিস্তান’ নামক দুটি রাষ্ট্রই আমাদের মুল ঘৃণার পাত্র। আফসোস, দুটা মুসলিম দেশকে আমরা এভাবে ঘৃণা করি। আমরা কখনো প্রতিবাদ করি না পাকিস্তানে আমেরিকার হামলা নিয়ে। তালেবান নিয়ে আমরা খুব হেটা করি। কিন্তু জানতে চাই না, ১৯৭৯-১৯৯১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে রাশিয়ার হামলার বৈধতা সম্পর্কে। কেন যুক্তরাষ্ট্র আফানিস্তানে গণহত্যা চলালো? কেননা দেশটি ধ্বংস করল? ইরাক, লিবিয়া, তিউনিসিয়া, মিশর তাদের কী দোষ ছিল? আমরা কখনোই বর্তমান শোষক ভারত আর সাবেক শোষক বৃটেননিয়ে বাজে মন্তব্য করি না। দেশকে ধ্বংস করে ফেললেও আমরা ইতিহাসের তাদের জয়ধ্বনি পড়ি। রক্তে মাংসে এদেশী হলেও চিন্তা চেতনায় আমরা এখনো বিদেশি। তারা কী পরিমাণ ক্ষতি করেছে, কত মানুষ মেরেছে, কত এলাকা বিরান করেছে- তার কি কোনো হিসাব আমাদের জানা আছে? কেউ জানাতে চাইলেও আমরা ব্যাকডেটেড বলে গালি দিই। আশ্চর্য BSF এর ওয়েবসাইটে বাংলাদেশি তরুণদের হামলা হওয়া মাত্রই বুদ্ধিজীবীরা ভারত বন্দনায় মুখরিত হয়ে উঠলেন। কিন্তু পাকিস্তানের হিনা রব্বানিকে অপমানের ব্যাপারে কেউ মুখ খুললেন না। এভাবেই নতজানু হয়েই দিন চলছে। শ্লোগান একটাই- যায় যদি যাক প্রাণ, হীরকের রাজা ভগবান।
মুসলিম বীর সালাহুদ্দীন আইয়ূবি বলেছিলেন,“যদি যুদ্ধ ছাড়া দেশ জয় করতে চাও। তবে যুব সমাজকে বিভ্রান্ত করে দাও। দেখবে যুদ্ধ ছাড়াই তোমার দেশ অর্জিত হয়ে গেছে।” আজ মনে হয় ঠিক সেই কথারই বাস্তব প্রতিফলন ঘটছে। তবু আমরা হতাশ না। হাতাশা আমাদের গ্রাস করতে পারবে না। তাই নজরুলের ভাষায় বলবো, “বাজিছে দামামা,বাধরে আমামা; শির উচু করি মুসলমান, দাওয়াত এসেছে নয়া জমানার ভাঙা কেল্লায় ওড়ে নিশান।”