আমার জীবনের লক্ষ্য কী?
- আমরা যারাই SSC-HSC পাশ করেছি, তাদের সবাইকে বাংলা বা ইংরেজিতে পরীক্ষায় মার্কস পাবার জন্য একটা রচনা ঠোঁটস্থ করতে হয়েছে। তা হচ্ছে My aim in life অর্থাৎ মোর জীবনের লক্ষ্য।
সেই মার্কসের লক্ষ্যে মোটামুটি আমরা সবাই ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারের কথাটাই বেশি পড়েছি। মনে হয় যেন ডাক্তার ইঞ্জিনিয়াররাই সব। বিচারক, সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এগুলো কোনো পদ না। আশ্চর্য লাগে কেউ এটা পড়েনি যে আমি প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হতে চাই।অথচ এটা দেশের সর্বোচ্চ পদ।
যাক, আসলে এটা কি আমাদের লক্ষ্য না উপলক্ষ্য সেটা সম্পর্কে জানা উচিত।লক্ষ্য তো হবে মাত্র একটি যা কখনো বিভাজ্য নয়। চূডার পর যেমন পর্বত নেই, শেষের পর যেমন ‘অবশেষ’ নেই, মোহনার পর যেমন নদী নেই, ঠিক জীবনের লক্ষ্য কখনো পরিবর্তনশীল নয়। লক্ষ্য হাসিল হলো কি না তার হিসাব জীবনের শেষ বিদায়ে জানা যায়। লক্ষ্য অর্জনের পর আর কোনো অতৃপ্তি থাকে না। কারণ, আমার লক্ষ্যে আমি পৌছতে পেরেছি।
মনে করুন, আপনি ২৫ বছরে ডাক্তার হয়েছেন। এটা আপনার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু কিছুদিন পর আপনার লক্ষ্য হয় ভালো ক্যারিয়ার। একটা সুন্দরী স্ত্রী। কয়েকটা গাড়ি-বাড়ি।
তাহলে এবার বলুন, ডাক্তারি পাশ করাটা কি আপনার লক্ষ্য ছিল? নাকি গাড়ি বাড়ি পাবার জন্য এটা একটা উপলক্ষ হিসেবে কাজ করেছে। আপনার লক্ষ্য অর্জিত হওয়ার পরও কেন আপনি অতৃপ্ত?
ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়াটা কখনো জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না। সেটা বড় জোর হতে পারে লক্ষ্য হাসিলের একটা উপলক্ষ্য মাত্র। অথচ এই ভুল শিক্ষা আমাদের যুগ-যুগান্তর যাবত চলে আসছে।আর আমি আমার লক্ষ্য ঠিক করছি বৈষয়িক বিষয়াদি দেখে। তাই আমাকে আজ কৃত্রিমভাবে শান্তির পথ খুঁজে নিতে হচ্ছে। মৃত্যুর পর দেখি আমার লক্ষ্যের সবকিছুই আমি ছেড়ে চলে এসেছি। আমি এখন খালি হাতে শূন্য জগতে যাচ্ছি। আমার জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিলো, “আমি কে, কোথায় ছিলাম এবং কোথায় থাকব?”
তবেই আমি প্রকৃত মানুষ হতে পারতাম। কিন্তু আমি তো তা করি নি।একজন বাংলা শিক্ষক তার ছাত্রদের জীবনের লক্ষ্য নিয়ে প্রশ্ন করলেন। সবাই যে যার মতো উত্তর দিল। পরে শিক্ষক বললেন, “লক্ষ্য হাসিলের পর যে জীবনটা থাকবে, সে জীবনের কি কোনো লক্ষ্য থাকবে না?“
সুতরাং রচনা পুস্তকে “আমার জীবনের লক্ষ্য” বলে যেই রচনাটি আছে, সেটা ধাপ্পাবাজি মাত্র। এই ধাপ্পার শিকার আমরাও। আমরা উপলক্ষ্যকে লক্ষ্য বানিয়ে হা-হুতাশ হয়ে ঘুরছি। কারণ লক্ষ্য যদি কারো ঠিক না থাকে, তবে তার জীবনটা অনর্থক। রাডার বিহীন জাহাজের মতো।
তাই আগে আমাদের জীবনের লক্ষ্য ঠিক করা দরকার। আমরা যেন উপলক্ষ্যকে লক্ষ্য বানিয়ে না রাখি। তবেই আমি মানুষের মতো মানুষ হতে পারবো। তাই বলছি My aim in life রচনা আর ঘোড়ার ডিমের মাঝে পার্থক্য কোথায়?
দুটোই তো অলীক, দুটোই তো অবাস্তব। (জহুরী)