গণতন্ত্রের পোস্টমর্টেম

গণতন্ত্র কি আসলেই সর্বোত্তম শাসন ব্যবস্থা?

  • গণতন্ত্র কী?

  • একদল যুবক হোটেলে খেতে গেল। কিন্তু খাওয়ার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা কারো কাছেই নেই। বরং সবার টাকা সমন্বিত করলে একজনের খাবার যোগাড় হয়। কিন্তু ঝামেলা হচ্ছে খাবার মাত্র একজন খেতে পারবে অথচ সবার পেটেই ক্ষুধা আছে। এবার সেখানকার বুদ্ধিমান ছেলেটি একটা পরিকল্পনা করল। বলল, আমরা এক প্লেট খাবার অর্ডার করে। তারপর একটা ভোট হবে। ভোটে যে জিতবে সেই খাবার খেতে পারবে। ভোটাভুটিতে একজন জিতল। সে খাবার খেল। অন্যরা কিন্তু অভুক্তই রইল। এর নামই গণতন্ত্র। খাবার পেটে না গেলেও ভোট তো দিতে পেরেছে। এটাই সার্থকতা।
  • বর্তমানে দেশে যে সংকট চলছে, তাতে সবাই গণতন্ত্র টিটে থাকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। গণতন্ত্র-গণতন্ত্র বুলি আওড়িয়ে দেশের শাসন ব্যবস্থার সমালোচনা করা হচ্ছে। এমনও বলা হচ্ছে যে, দুনিয়ার সব শাসন ব্যবস্থা পরীক্ষা করার পর গণতন্ত্রটাই সর্বোৎকৃষ্টরূপে প্রমাণিত হয়েছে। আর আমরাও তা বিনা দ্বিধায় মেনে নিয়েছি।
  • এখন এর বিরুদ্ধে কিছু বললেই নিশ্চিত হিযবুতি সিল লাগিয়ে দেয়া হবে। যে কোনো বাজে ট্যাগ দিয়ে জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হবে। আসলেই আমরা কি কখনো ভেবেছি, গণতন্ত্র কতটুকু সঠিক ব্যবস্থা? “সরিষার ভেতরেই যদি ভূত থাকে, তবে সেই সরিষা দিয়ে ভূত তাড়াবেন কীভাবে?”
  • গণতন্ত্রের সংজ্ঞার ক্ষেত্রে আব্রাহাম লিংকনের সংজ্ঞাটি বেশ সুন্দর ও তাৎপর্যময়। Democracy is the government of the people, by the people and for the people. (সংজ্ঞাগত ভুল নিয়ে পরে আলোচনা করবো)। গণতন্ত্রের অনেক বৈশিষ্ট্য আছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে “সংখ্যাগরিষ্ঠের মত বা শাসন।”
  • আমার আলোচনা আজ, “সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত নিয়ে।”

    গণতন্ত্রে কিন্তু “সংখ্যাগরিষ্ঠের মতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, বাট সেই সংখ্যাগরিষ্ঠের যোগ্যতা কী এবং তাদের মতামতের মানদণ্ড কী? সেটা কিন্তু বলা হয় নি।”যার ফলে আজ আমাদের এই অবস্থা।মনে করুন, আপনার টিচার ক্লাসে বলছেন জার্নালিস্ট হওয়ার জন্য পত্রিকা পড়তে হবে।

  • কিন্তু আপনারা ৫০ জন ছাত্র তার উল্টো বলছেন। তো বলুন, গণতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে আপনারা বিজয়ী কিন্তু আপনারা কি সঠিক?
  • আবার দেখুন, এখানে জনগণের মতামতের মানদণ্ড নিয়েও কোনো কিছু বলা হয় নি। অর্থাৎ জনগণ যেটা ভালো মনে করে সেটাই ঠিক। সেটা যতই কুৎসিত হোক না কেন? যেমন- ব্রিটেনে যখন সমকামিতার বৈধতা নিয়ে চরম বিতর্ক দেখা দেয়, তখন তাদের বিভেদ নিরসনে Wolf ender committee গঠিত হয়। তারা জনগণের মতামত নেওয়ার পর রিপোর্টে বলেছিলেন, সমকামিতা একটা অন্যায় এতে কোনো সন্দেহ নেই। 
  • কিন্তু যেহেতু আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমরা জনগণের মতকেই প্রাধান্য দেই, তাই এই বিলটিও পাশ হওয়া উচিত। কারণ, চরিত্র ব্যক্তিগত ক্ষেত্র আর আইন জনগণের রায়ের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। দেখুন, অকপটে অন্যায় স্বীকার করার পরও তারা বাধ্য হয়ে সমকামিতার মতো জঘন্য কাজকে স্বীকৃতি দেয়।
  • এবার বলুন দেশের মধ্যে অশিক্ষিত লোক বেশি না শিক্ষিত লোক? ডক্টরেট বেশি না সাধারণ লোক? একজন ডক্টরেটের ভোটের যেই দাম, পাগলেরও তাই? সুতরাং গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতে কি যোগ্য লোক আসবে?
    অন্যদিকে আমাদের অধিকাংশ ভোটার নারী। যারা মোটেও সচেতন নন। স্বামী বা বাবার মতানুযায়ীই তারা ভোট দিয়ে থাকেন। তবে দেখুন, অর্ধেকই ভোটই পাচ্ছেন অসচেতন নাগরিক থেকে। যারা অসচেতন, তাদের ভোটে কীভাবে সচেতন নেতা আসবে?

    দেখুন, আমাদের ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের বিভিন্ন ভোট হয়। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের মত ঠিক আছে। কারণ সবাই এখানে শিক্ষা সম্পর্কে সচেতন ও কোয়ালিফাইড। কিন্তু যেখানে লোকেরা রাজনীতি সম্পর্কে বুঝেই না, তারা কীভাবে যোগ্য সরকার আনবে?
  • আপনারা কি জানেন, গণতন্ত্রের এই সংখ্যাগরিষ্ঠের কারণেই Socrates এর ফাঁসি হয়েছিলো। Aristotle একে সর্বনিকৃষ্ট শাসন ব্যবস্থা বলেছেন? কারণ, আপনার মতো একজন ডক্টরটকে বশে আনা কঠিন (যদি বিবেকহীন না হোন), কিন্ত একজন রিকশাওয়ালা বা গরিবকে তো ২০০ টাকা দিলেই সে ভোট দিয়ে দিবে। এবার বলুন, দেশে রিকশাওয়ালা বেশি না ডক্টরেট? সবার ভোট তো একই পর্যায়ের।
  • আমার মতে গণতন্ত্র শিক্ষার পক্ষে সহায়ক নয়। যে যাই বলুক না কেন, মানুষ তার সর্বোচ্চ নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করে ভোটের মাধ্যমে। কিন্তু সেই ভোট দেবার সময় যখন শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ভদ্র-পাগলের কোনো ভেদাভেদ থাকে না, তখন শিক্ষার সার্থকতা কোথায় থাকে? তাই গণতন্ত্র সফল করার জন্য আমার মতে যা করা দরকার-
    ১. সুশিক্ষা ও নৈতিকতার ব্যবস্থা করা। (তবে সেই শিক্ষা কেমন হবে, সেটা অন্য আলোচনা)
    ২. ভোটের মান ভেরিফাই করা। শিক্ষিত-অশিক্ষিত লোকের ভোটের মান এক হবে না। তাহলেই হয়তো শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে।
    ৩. নারীদের সচেতন করে তুলতে হবে। তাদের রাজনীতি জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তবে তা যদি সম্ভব না হয় তবে ভোটাধিকার সীমিত করতে হবে। শিক্ষিত ও সচেতন নারী হলে অন্য কথা। (রাষ্ট্র সম্পর্কে নারীর না জানাটা কোনা দোষ নয়)
    ৪. জনগণের মতামত ইলমে ওহীর সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারবে না। কারণ আমার আপনার থেকে উপরওয়ালা খুব ভালো জানেন। নয়তো সমকামিতাসহ সব ধরনের গর্হিত কাজ জায়েয হয়ে যাবে।

    প্রথমেই মনে রাখতে হবে, রাজতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদে যেমন মুক্ত চিন্তার কোনো সুযোগ ছিলো না, theocracy এর ভয়ানক থাবা জনগণের টুটি চেপে ধরেছিল, গণতন্ত্র তা থেকে অনেক ভালো।
  1. গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় বলা হচ্ছে, এটি জনগণের শাসন।
    এখন প্রশ্ন আসে যে তবে শাসিত কে? কারণ একই লোক তো শাসক ও শাসিত দুটো হতে পারে না।
    তখন এর উত্তরে বলা হয়, এটি জনগণের
    নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা শাসন। তাহলে বলা হবে, “তবে শাসনের ক্ষেত্রে অধিকাংশ লোকের এক্টিভিটি কোথায়? (যাক এটি অন্য আলোচনা)
  2. প্রথমেই দেখবো গণতন্ত্রের ক্ষমতার স্থায়িত্ব নিয়ে।
    আমাদের সরকার ব্যবস্থার মেয়াদ পাঁচ বছর, যুক্তরাষ্ট্রের চার বছর। অর্থাৎ চার বছর পর তাকে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হয়। ক্ষমতার পালাবদলটা অবশ্যই ভালো দিক। এতে স্বৈরাচামূলক আচরণ হ্রাস পায়।

    কিন্তু একথাও সত্য যে, যদি কেউ ভালোভাবে দেশ পরিচালনা করে, তবে সেও একটা অস্বস্তিতে থাকে। দেশের অর্থনীতিতে বিরাট চাপ পড়ে। যেমন- আমাদের রাজনীতিতে ৫ বছর পর পর নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন দল বিভিন্ন দাতা সংস্থা বা ব্যবসায়ীদের থেকে ঋণ নেয়। ক্ষমতার পর ২ বছর এগুলো পরিশোধ করে।
    এরপর আবার দেখুন, পরবর্তী নির্বাচনের জন্য সে আবার প্রিপারেশন নিতে থাকে। যার ফলে স্বাধীনভাবে সময় নিয়ে সে দেশ চালাতে পারে না।

    আমি ক্ষমতার পালাবদলের ক্রেডিট অস্বীকার করছি না। কিন্তু কেউ যদি শান্তিতে দেশ চালায়, তবে প্রচলিত গণতন্ত্রে অবশ্যই নির্বাচনের জন্য তাকে এক্সট্রা মানি গুণতে হয়। যেমন মালয়শিয়া, মালদ্বীপ এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। শাসন ব্যবস্থার স্থায়িত্বের জন্যই আজ দেশগুলো হয়তো এতটা ভালো পজিশনে আছে।
    এছাড়াও দেখুন, অনেক দেশে শাসন করার জন্য একটা সংক্ষিপ্ত সময় দেওয়া হয়েছে। যেমন- আমেরিকায় জর্জ ওয়াশিংটনের উপর সম্মান রেখে দুইবারের বেশি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা যায় না। আপনারাই বলুন, যদি আমি যোগ্য হই, তবে দুই বারের বেশি নির্বাচন করলে সমস্যা কোথায়? যদিও এটি সব দেশে প্রচলিত নয়।
    আবার এদিকে দেখুন, মোটামুটি কোনো সরকার পাঁচ বছর সুযোগ পায়। অর্থাৎ পাঁচ বছরে সে যত কিছুই করুক না, একটা সেফটি আছে। ব্যাস, এই সুযোগে সে মনের সাধ মিটিয়ে নেয়। এই পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় আসাকে তারা ইনভেস্ট মনে করে।
  3. এছাড়া দেখবেন, গণতন্ত্রে সরকারের যোগ্যতা নিয়ে কোনো কথা বলা হয় নি। আমাদের সংবিধানেও দেখবেন, সরকার বা মন্ত্রীপরিদের শিক্ষাগত-কর্মগত ও চারিত্রিক যোগ্যতা নিয়ে কোনো কিছু বলা হয় নি। কেবল বলা হয়েছে, ২৫ বছর হলেই নির্বাচনের যোগ্য। সাথে আরো কিছু শর্ত আছে।
    মোটকথা অধিকাংশ লোক যা বলে তাই ঠিক। যেহেতু জনগণ সব ভালো-মন্দ বুঝার মালিক। তাই আমরা আজ পর্ন গায়িকাদের সংসদে দেখতে পাই, পার্লামেন্টে নর্তকীদের কথা শুনি।

    এবার বলুন এই যদি পার্লামেন্টের সদস্যদের অবস্থা তবে দেশের অবস্থা কী হবে?
    একজন সচিব, একজন স্কুল মাস্টারের ক্ষেত্রে দক্ষতা-যোগ্যতা ইত্যাদি বিষয় দেখা হয়, অথচ একজন সরকারের ক্ষেত্রে এগুলো দেখতে হয় না।
  4. প্রচলিত গনতন্ত্র সুইডেনের মতো টেকসই নয়, যেখানে আনুপাতিক ক্ষমতার বিষয়টা অনেক কম।
    যেমন- আপনার এলাকায় নির্বাচনে পাঁচ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী দাঁড়িয়েছে। তাদের ভোট এমন ৩৫%, ৩০%, ২৫%, ১০%। এখন দেখুন, গনতান্ত্রিক ব্যবস্থানুযায়ী ৩৫% ভোটপ্রাপ্ত কিন্ত বিজয়ী। তিনিই এখন শাসন করবেন। অথচ দেখুন, গ্রামের ৬৫% লোকই তার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। অথচ তিনিই সবাইকে শাসন করবেন।
  • গণতন্ত্রের টেকসই উন্নয়নের জন্য যা করা যেতে পারে-

  • যোগ্য সরকারকে দেশের সেবা করার জন্য যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া। অর্থাৎ, জনগন যদি মনে না করে, এই সরকারের পরিবর্তনের কোনো দরকার নেই, তবে সে সরকারকে স্থায়ী রাখা। এর জন্য প্রয়োজনে ‘গণভোট’ হতে পারে। যার ফলে রাষ্ট্র বিরাট অর্থনৈতিক অপচয় থেকে মুক্তি পাবে।
  • সরকার যদি দুর্নীতির সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখন গণভোটের মাধ্যমে সরকারকে অপসারণ করে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা। তবে এই নির্বাচন দেওয়া হবে একটা বিশিষ্ট বোর্ডের মাধ্যমে। যারা আমেরিকার সিনেটরের মতো চাকুরি ও জীবনের স্থায়িত্ব পাবেন এবং স্বাধীনভাবে কাজ করে যাবেন। এতে সরকার চাপের মুখে থেকে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে বাধ্য থাকবে
  • আনুপাতিকভাবে ক্ষমতা বণ্টন করতে হবে। এমন নির্ধারণ করা, যারা ৩৫% এর বেশি ভোট পাবে, তারা অংশীদারভাবে ক্ষমতা পরিচালনা করবেন। দরকার হলে এলাকা ভাগ করে দেওয়া হবে। এতে যদিও সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধীরতা আসবে, তবুও প্রত্যেক প্রতিনিধি নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাবেন। ফলে নিজের ক্রেডিট বাঁচানোর জন্য হলেও এলাকার উন্নয়ন তাড়াতাড়ি হবে। (তবে এর জন্য প্রয়োজন, নেতা নির্ধারণে পর্যাপ্ত গুণাবলি নির্দিষ্ট করে দেওয়া)
  • যারা বিরোধী দল হিসেবে নির্বাচনে যাবে, দেশ পরিচালনায় তাদের প্রতিনিধিদের কিছু অংশ দেওয়া্। যার ফলে দেশে সংঘাত অনেক কমে যাবে।
  • সরকার ও পার্লামেন্ট মেম্বার নির্বাচনের জন্য অবশ্যই শিক্ষাগত ও চারিত্র্রিক যোগ্যতার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। তবেই যোগ্য নেতৃত্ব আসতে পারে।
  • অবশ্যই নির্বাচনী ব্যয়ভার কমাতে হবে। কারণ, রাজনীতি এখন দেশ সেবা না হয়ে ব্যবসা হয়ে দাড়িয়েছে। এটা মোটামুটি বেশিরভাগ দেশেই। তাই খুব তাড়াতাড়ি এসব থেকে উত্তরণ প্রয়োজন।

  • আরও বিস্তারিত জানতে আমাদের অনুশীলন সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক গুলো নিতে পারেন ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart

You cannot copy content of this page

Scroll to Top