ইসলামি নামের বিকৃতি কেন?
এমন দার্শনিক উক্তি অনেকেই করে থাকেন। শেক্সপিয়র বলেন, What is name? That which we call a rose by any other name would smell as sweet. এসব মারেফতি কথা যেই বলুক না কেন নামের প্রয়োজনীয়তা কেউ অস্বীকার করতে পারে নি। আপনার প্রাথমিক পরিচয় প্রদানের জন্য হলেও নাম প্রয়োজন।
নাম নিয়ে কেউ ব্যঙ্গ করলে মনে আঘাত লাগে। এমনকি নাম নিয়ে ব্যঙ্গ করলে মানহানির মামলা পর্যন্ত করা যায়। জেলের ঘরের ভাতও খেতে হয়। সবচেয়ে বড় অপরাধ হচ্ছে,নাম নিয়ে খেলা করা। কোরআনের ভাষায় ঈমানের পর সবচে বড় ফাসেকি কাজ হচ্ছে নাম নিয়ে ব্যঙ্গ করা (হুজরাত)।
মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ ঈমান আসলে তাকে মন্দ নামে ডাকা বড় গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম।
অন্যান্য সব নামের তুলনায় মুসলিম সংস্কৃতির নামগুলো কিছুটা ভিন্ন এবং এর অনেক বৈশিষ্ট্য আছে। সাধারণত মুসলিম নামগুলো থাকে অর্থবহ এবং বিশেষ মনীষীদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কিন্তু আমদের সমাজে আজ সেই সব নাম নিয়েই খেলা করা হচ্ছে। তেমনি কিছু নাম নিয়ে আজকের আলোচনা-
যে নামগুলো বিকৃত করা হয়-
আমরা কি কখনো চিন্তা করে দেখেছি এই নামটির অর্থ কী? মোখলেস নামটি আরবি ‘এখলাস’ শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ একনিষ্ঠভাবে এবাদত করা। ছোটবেলায় যারা মক্তবে গিয়েছে তারা একটি হাদিস পড়েছে যে, ‘তোমার ইমান খাটি করো অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট হইবে”। এই হাদীসটায় এখলাস শব্দ এসেছে যার থেকে এসেছে মোখলেস। অর্থাৎ,আল্লাহর নিকট ইখলাস ছাড়া কোনো আমলই গ্রহণযোগ্য নয়। আর সেই নামকেই আমরা ফান বানিয়েছি? আমাদের মধ্যে তো এখলাস নেই। কারও নাম যদি সেই এখলাসের শব্দ দিয়ে থাকে তাকেও আমরা অপারেশন করতে ছাড়ি নি। আফসোস।
২. মফিজ : এটি একটি আরবি নাম যার অর্থ সফলকাম হওয়া। সাধারণত পরকালের সফলতা বুঝাতেই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আমরা কে না চাই পরকালে সফল হতে। তবে কেন ‘ম্যাজিক টুথ পাওডারের কল্যাণে’ এই নাম নিয়ে খেলা করি। পরকালের সফলতা নিয়ে যদি খেলা করি তবে কি আসলেই সফল হতে পারবো? সুন্দর সুন্দর অর্থবোধক নামগুলো আজ মজার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৩. কাসেম / কাশেম : ‘ইত্যাদির’ মতো একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে টিভির চ্যানেলের নাম দিয়ে এই নাম নিয়ে ফান করা হয়। আমরা কি এই নামের অর্থ ও মাহাত্ম্য জানি। আমাদের নবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপনাম আবুল কাসেম। সেই থেকেই এই কাসেম নামের উৎপত্তি। এক হাদীসে তিনি বলেন, আল্লাহই নিয়ামতদাতা আর আমি তা বন্টনকারী। কাসেম শব্দের অর্থও বন্টনকারী। দেখুন, নবীর নাম নিয়ে ফাজলামি করছি। আমাদের শেষ ঠিকানা হবে কোথায়? রোজ হাশরে আমরা কীভাবে মুখ দেখাব?
৪. কুদ্দুস : সর্বাধিক মজা করা হয় এই নামটি নিয়ে। অথচ আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম। যার অর্থ ‘মহাপবিত্র’। চিন্তা করে দেখুন, আমরা আল্লাহর নাম নিয়েও রসিকতা করছি। আমাদের ঈমানের অবস্থা কেমন? এমনকি এসব নাম ‘আবদ’ শব্দ ছাড়া ব্যবহার করা ঠিক না। এমন অসংখ্য নাম নিয়ে আজ ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। আসলে আমরা যতটাই না আবেগি ততটাই আমাদের ইতিহাস-সংস্কৃতি সম্পর্কে অসচেতন। তাই আমাদের ভিত্তি মজবুত হচ্ছে না। নিজেরাই নিজেদের ট্রলের ব্যবস্থা করছি।
মৌলভী ফরিদুদ্দীন তার বক্তব্যের সময় জুলফিকার আলিকে একবার ‘ভুট্টো’ একবার ’ভুট্টা’ একবার ‘ভাট্টা’ এভাবে ডাকতে থাকে। জুলফিকার আলি এ ব্যাপারে স্পিকারের নিকট নালিশ দেন। স্পীকার ফরিদ উদ্দিনের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “স্যার,আমাদের মন্ত্রী মহোদয়ের নামের যতুটুকু অংশ ইসলামিক ততটুকু আমি শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করেছি। কিন্তু ‘ভুট্টো’ আরবি, ফার্সি, উর্দু, বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি ভাষার কোনো শব্দ নয়। তাই বিকৃত উচ্চারণ হওয়াটাই স্বাভাবিক। এ ধরনের উচ্চারণে জিহ্বার স্লিপ কাটতেই পারে।”
ঘটনাটি সামান্য হলেও এর শিক্ষা কিন্তু অসামান্য।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশের গার্মেন্টস সমস্যা উত্তরণের উপায়