ইসলাম কি আসলেই শ্রেষ্ঠ ধর্ম? যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ
- বর্তমান সময়ে একটি কথা খুব জোরে শোরেই প্রচার করা হয় যে, “আমার কাছে যেটা সত্য, সেটা অন্যের কাছে মিথ্যা হতে পারে।“ বিশেষত ধর্মের ক্ষেত্রেই এটা বলা হয়। একজন মুসলমানের নিকট কুরআন আল্লাহর বাণী কিন্তু একজন হিন্দুর কাছে তা নয়। সুতরাং কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা এটা বিশ্বাসের ব্যাপার। প্রমাণের বিষয় না। সুতরাং ধর্ম সম্পর্কে দাওয়াত না দেয়াই ভালো।”
- এরই প্রেক্ষিতে আমরা দেখতে পাই, কোনো বিশেষ ব্যক্তির মৃত্যুতে যেমনিভাবে মসজিদে দোয়া করা হয়, তেমনি মন্দির-গীর্জা প্যাগোডায় প্রার্থনা করা হয়। অর্থাৎ যদি কোনোক্রমে ইসলাম ভুল হয় (নাউজুবিল্লাহ), তবে অন্য ধর্মের উসিলায় বেঁচে যাবো। অথচ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম।” (আল-ইমরান।)
আসুন, এবার আমরা আবেগ পরিহার করে ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের তুলনামুলক আলোচনা করি।
-
অন্যান্য ধর্মের সাথে তুলনামূলক আলোচনা
- একথা অনস্বীকার্য যে, পৃথিবীতে সব মানুষই স্মরণীয় হন না। অমর থাকে কিছু মানুষ। যেমন, প্রাচীন গ্রিসে অনেক লোকই ছিল। অথচ আমরা কেবল এরিস্টটল, প্লেটোর, সক্রেটিসসহ কয়েকজনের নামই জানি।
- একথা সর্বজনবিদিত যে, স্মরণীয় ব্যক্তিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হলো নবীরা। আপনি যত বিখ্যাত লোককেই খুঁজেন না, দেখবেন সবারই অন্ধকার দিক আছে। কিন্তু নবীদের চরিত্রে কোনো কালিমা দেখবেন না।
- আমারা সবাই জানি, নবীদের কাজ ছিলো আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক তৈরি করা। এবার আমরা দেখি, তুলনামুলক কোন ধর্ম বর্তমানে বৈজ্ঞানিকভাবে টিকে থাকার অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।
- সব নবী আল্লাহ তায়ালার কথা বললেও সব নবীর বিধানগুলো আমাদের কাছে এসে পৌছে নি। আমরা বিশ্বাস করি সবাই সঠিক কিন্তু সবার বিধান সম্পর্কে জানি না। সেদিক থেকে তিনজন নবীর বিধান সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায়। মুসা, ঈসা (আ) ও মুহাম্মদ (সা)।
- এবার আমারা দেখি, জীবনের সব পর্যায়ে কোন নবীর বিধান বেশি কার্যকর।
আপনি যদি মুসা (আ) এর বিধান লক্ষ্য করেন তো দেখবেন সেখানে যুদ্ধ-বিগ্রহ সম্পর্কে অনেক কথা বলা হয়েছে। কিন্ত প্রেম ভালোবাসা নিয়ে সেথানে কিছু বলা হয় নি। অথচ মানব জীবনে প্রেম ভালোবাসার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
- (অর্থাৎ সেখানে কঠোরতা আছে উদারতা নেই।) হয়তো সেই বিধানগুলো ছিল কিন্তু আমাদের হাতে পৌঁছে নি। অন্যদিকে আপনি ঈসা (আ) এর ধর্মের দিকে তাকান, দেখবেন সেখানে উদারতার অভাব নেই।
- অভাব কেবল কঠোরতার। ‘এক গালে থাপ্পড় দিলে অন্য গাল বাড়িয়ে দেওয়ার কথা আছে কিন্তু অন্য গালে থাপ্পড় দেবার কথা নেই।’ মূলত এগুলো ছিল যুগভিত্তিক ব্যবস্থা। যে যুগের জন্য যে নিয়ম দরকার ছিল, তা-ই আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন।
অন্যদিকে ইসলামের দিকে তাকান, Islam is complete code of life.
- আপনি সেসব নবীদের জীবনী দেখেন, কারো জীবনী নির্ভরযোগ্য সুত্রে বর্ণিত নেই। কিন্তু আমাদের নবীর জীবনী নির্ভরযোগ্য সুত্রে বর্ণিত। দেখুন, এমন একজন লোক পাবেন না, যিনি তাওরাত ইঞ্জিলের-গীতার হাফেজ। কিন্তু দেখুন, কোরআনের হাফেজের অভাব নেই।
- ইসলাম বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য হওয়ার বড় প্রমাণ হলো, এর সনদ বা সুত্র পরম্পরা বর্ণনা করা। এইজন্য মুহাদ্দিসরা বলেন, “সনদ দ্বীনের অন্যতম স্তম্ভ। যদি সনদ না থাকে, তবে যার যা মন চায়, সে তা-ই বলবে।”
দেখুন, তাওরাত-যাবুর-ইঞ্জিল ধর্মগ্রন্থ হলেও ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের কাছে এই ধর্মগ্রন্থ বর্ণনার কোনো সুত্র বা সনদ নেই। লুক-মথির পত্র এগুলো কি আসলেই তাদের পত্র নাকি অন্যের বানানো কিতাব- এটা তারা প্রমাণ করতে পারবে না। এইজন্য দেখা যায় রোমান ক্যাথলিক যে গ্রন্থগুলোকে কিতাব বলে, প্রোটেস্টেন্টরা তার অনেকগুলো কিতাবকে মানে না।
কিন্তু আপনারা যারা হাদিসের কিতাব পড়েছেন, দেখেছেন হাদিস বর্ণনার আগে কিছু নাম দেওয়া থাকে।
- অর্থাৎ হাদিসটি গ্রন্থবদ্ধ হওয়ার আগে কারা হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, তাদের নাম।
এবার রিজাল শাস্ত্রের কিতাব খুললে আপনি এই ব্যক্তিদের জীবনী পাবেন। তারা কেমন লোক ছিল, সেটাও জানতে পারবেন। তার জীবনে কোনো খারাপ রেকর্ড আছে কি না? সে সৎ কি না? এভাবে প্রায় ৫ লক্ষ লোকের জীবনী সংকলিত হয়েছে। অন্যদিকে গ্রন্থবদ্ধ হওয়ার পরও এখনো মাদ্রাসা লাইফ শেষ করলে দেখবেন, একটা সনদ দেয়া হয়। সব ক্বওমী মাদ্রসায় হাদিস বর্ণনার পূর্বে এই সনদটি পড়া হয়।
- ইসলামের সুদৃঢ়তার আরেকটি প্রমাণ হলো, এর ইতিহাস সংরক্ষণ।
আপনি ভারত-আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখবেন, ‘ইসলামের ইতিহাস নামে একটা সাবজেক্ট আছে।’ শিক্ষার্থীরা এর উপর ডিগ্রি অর্জন করে। কিন্তু অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রে তুলনামূলক তা অনেক কম।
- (যদিও অনেক স্থানে সমালোচনার জন্য ভুল ইতিহাস পড়ানো হয়)। আমাদের ইতিহাস গ্রন্থ আল-বিদায়া, মুকাদ্দিমা, সীরাতের গ্রন্থগুলো দেখলেই বুঝবেন। এমনকি ইতহাসের গ্রন্থগুলোও সনদ আকারে বর্ণিত হয়েছে।
- যারা হাদিস পড়েন, দেখবেন অনেক জাল হাদিসেরও কিতাবও সংরক্ষিত আছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে এগুলা সংরক্ষণ করে লাভ কী? আসলে এগুলো যদি বিলুপ্ত করা হত, তাহলে ইয়াহুদী
- খ্রিস্টানরা বলত, তারা তাদের কিছু সত্য কথা গোপন করছে। সেই অপবাদ থেকে ইসলামকে সংরক্ষিত রাখার জন্য এমনটা করা হয়েছে। এমনকি জাল হাদিসের কিতাবের সংখ্যারও কিন্তু কম নয়। মাশাল্লাহ, পূর্বসূরিরা কত বড় বড় খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন।
- ইসলামের সবচেয়ে বড় সফলতার একটি হলো, এখানে এমন একজন পয়গম্বর এসেছেন যে, যিনি যেই বিধানগুলো দিয়েছেন, তার প্রায় সব পালন করেছেন। রাজনীতি-অর্থনীতি-পারিবারিক সব ক্ষেত্রেই বিধি পালন করেছেন। তিনি যেমন দেশ চালিয়েছেন, তেমনি স্ত্রীর সাথে থেকেছেন। যেমন ছিলেন উদার, তেমনি ছিলেন পাপের বিরুদ্ধে কঠোর।
- এইজন্য THE HUNDREDS বইয়ের লিখক মাইকেল এইচ হার্ট বলেছেন, “আমি যেদিকেই তাকাই, সেখানেই মুহাম্মদকে দেখতে পাই। অন্য কা্উকে এমনটা পাই না। তাই বাধ্য হয়ে আমি তার নামটাই আগে এনেছি। এই কথাগুলো সাইয়েদ সুলাইমান নদভি (র) রচিত ‘পয়গামে মুহাম্মদী (সা)’ বই থেকে নেওয়া হয়েছে। যা ইতোমধ্যে আব্দুল মান্নান তালিবের অনুবাদ সহকারে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশ করেছে।
Like this:
Like Loading...
এই জাতীয় আরও এরকম পোস্টসমূহ: