সিরাজউদ্দৌলা নাটক বিশ্লেষণ- Sirajuddaula Natok (HSC)

সিরাজউদ্দৌলা নাটক বিশ্লেষণ- Sirajuddaula Natok (HSC)

সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রতিটি দৃশ্য ও অঙ্কের বিশ্লেষণ

ইন্টার পরীক্ষার জন্য বাংলা সহপাঠ সম্পর্কে জানা খুব জরুরি। এখানে সিরাজউদ্দৌলা নাটকরে প্রতিটি দৃশ্য ও অঙ্কের বিশ্লেষণ তুলে ধরা হল। যা থেকে পরীক্ষায় কমন পড়বে। 

          ১.১ দৃশ্য (ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ)

১৭৫৬ সালের ১৯ জুন। নবাব সৈন্যরা ফোর্ট উইলিয়ামে আক্রমণ করে। এতে ইংরেজরা চরমভাবে পর্যদুস্ত হয়ে পড়ে।

  • ওয়ালি খান ক্যাপ্টেন ক্লেটনকে যুদ্ধ বন্ধের জন্য অনুরোধ করে। ওয়ালি খান ইংরেজদের হয়ে যুদ্ধ করে কোম্পানির টাকার জন্য
  • উমিচাঁদের গুপ্তচর নবাব ছাউনিতে খবর পাঠায়।
  • হলওয়েলের মনে করে যে গভর্নর রজার ড্রেকের সাথে পরামর্শ করে নবাবের কাছে আত্মসমর্পণ করাই যুক্তিযুক্ত।
  • উমিচাঁদকে নবাবের সেনাধ্যক্ষ রাজা মানিকচাঁদের কাছে পত্র লেখার অনুরোধ করা হয়। এজন্য উমিচাঁদ বলেন, “বন্দির কাছে এ প্রার্থনা কেন সার্জন হলয়েল?
  • নবাবের পদাতিক বাহিনী দমদমের সরু রাস্তা দিয়ে চলে আসে আর গোলন্দাজ বাহিনী শিয়ালদহের মারাঠা খাল পেরিয়ে বন্যার স্রোতের মতো ছুটে আসে। ক্যাপ্টেন মিনচিন দমদমের রাস্তাটা উড়িয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও সে পালিয়ে যায়।
  • নবাবের সৈন্যরা গঙ্গার দিককার ফটক ভেঙে কেল্লার ভেতর ঢুকে পড়ে । সেখান দিয়ে একদল ডাচ সেনা পালিয়ে যায়।
  • গভর্নর ড্রেক ও ক্যাপ্টন ক্লেটন (ব্রিটিশ সিংহ) নৌকা করে পালিয়ে যায়। এছাড়াও ক্যাপ্টেন মিনচিন, কাউন্সিলর ফাকল্যান্ড ও ম্যানিংহাম নৌকায় করে দুর্গ থেকে পালিয়ে যায়।
  • হলওয়েলের পুরো নাম : জন জেফোনিয়া হলওয়েল।
  • কাশিমবাজার কুঠি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে : ওয়াটসকলেটকে
  • ইংরেজদের অপরাধ : কাশিমবাজারে গোলা-বারুদ আমদানি করা, কলকাতার আশেপাশে গ্রামের পর গ্রাম দখল করা, দুর্গে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, কৃষ্ণবল্লভকে আশ্রয় দান ও সিরাজকে নজরানা না পাঠানো।
  • বাংলায় বাণিজ্য করার অনুমতি দেন : ফররুখ সিয়ার (১৭১৭)।
  • ড্রেকের বাড়ি কামান দিয়ে উড়িয়ে দিতে রায়দুর্লভকে আদেশ দেয়া হয়।
  • মানিকচাঁদকে কলকাতার দেওয়ান নিযুক্ত করা হয়। তবে উমিচাঁদ ইংরেজদের পক্ষে কাজ করানোর জন্য তাকে হাত করে নেয়। এর জন্য উমিচাঁদ ইংরেজদের নিকট চিঠি পাঠায়। যেখানে মানিকচাঁদের জন্য ১২ হাজার ও উমিচাঁদের পারিশ্রমিক বাবদ ৫ হাজার টাকা দাবি করা হয়। উমিচাঁদ লাহোর থেকে বাংলাদেশে এসেছে অর্থ উপার্জনের জন্য। মানিকচাঁদ পরবর্তী সময়ে সিরাজের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করায় ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে জেলখানা থেকে মুক্তি পায়।
  • কলকাতা অভিযানের সব খরচ বহন করবে ইংরেজরা- সিরাজ এই আদেশ দেয়।
  • কৃষ্ণবল্লভ বিষয়ে রাজবল্লভের সাথে সিরাজের মিটমাট হওয়ায় কৃষ্ণবল্লভকে ছেড়ে দেয়া হয়।
  • সিরাজ মুর্শিদাবাদে যাওয়ার সময় হলওয়েল, ওয়াটস ও কলেটকে নিয়ে যায়। তবে সেখানে গিয়েই নানান ওয়াদার বিনিময়ে তাদের মুক্তি দিয়ে দেয়। এদের মধ্যে ওয়াটস আলিনগরের সন্ধি অনুসারে সিরাজের দরবারে কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে ছিল। কিন্ত সে গুপ্তচরবৃত্তির কাজ করে।

                     ১.২ দৃশ্য (ফোর্ট উইলিয়াম জাহাজ)

     ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে সিরাজের কাছে পতনের ফলে ইংরেজদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়। এই কঠিন দুঃসময়ের জন্য ইংরেজরা একে অপরকে দোষারোপ করতে থাকে। এমনকি ইংরেজ মহিলারাও নেতৃস্থানীয় ইংরেজদের কটাক্ষ করে।

  • নবাবের আদেশ অমান্য করে রজার ড্রেক কৃষ্ণবল্লভকে আশ্রয় দেয়। কৃষ্ণবল্লভকে কেন্দ্র করে ড্রেক নবাবকে উদ্ধত ভাষায় চিঠি দেয়। এ নিয়ে ইংরেজদের মধ্যে বাক বিতণ্ডা হয়।
  • ড্রেকের মতে ইংরেজ আধিপত্য সহজেই শেষ হয়ে যাবে না। এই জাহাজটিই এখন কলকাতার দুর্গ যা শাসন করছে ইংরেজরা।
  • কিলপ্যাট্রিক ও মার্টিন কোম্পানির ৭০ টাকা বেতনের কর্মচারী। অথচ তাদের ব্যালেন্স ২০ হাজার টাকার কম নয়।
  • উমিচাঁদের অনুমতি পেলেই কলকাতার পাশে জঙ্গল কেটে ইংরেজরা হাট-বাজার বসিয়ে দিবে।
  • ইংরেজদের মতে দেশীয় গাদ্দারদের ১০ হাত পূরণ করতে সমস্যা নেই। সমস্যা হলো যদি নিজেদের মধ্যে বখরা নিয়ে বিরোধ দেয়।


১.৩ দৃশ্য (ঘসেটি বেগমের বাড়ি)

সিরাজের বিরুদ্ধে ঘসেটি বেগমের বাড়িতে ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। যেখানে সিরাজের প্রধান গুপ্তচর নারান সিং রাইসুল জুহালা নামে সভাসদদের মধ্যে স্থান করে নেয়। সভা চলাকালে হঠাৎ সিরাজ চলে আসে এবং মতিঝিলের সভা চিরতের ভেঙে দেন।

  • “আপনারা সরশুদ্ধ দুধ খেয়েও গোঁফ শুকনো রাখেন আর আমি দুধের হাড়ির কাছে যেতে না যেতেই হাড়ির কালি মেখে গুলবাঘা বনে যাই.…..আমি দওলতের পূজারি। দওলত আমার কাছে ভগবানের দাদা মশায়ের চেয়েও বড়”- কথাগুলো উমিচাঁদের।
  • “শওকত জঙ্গ নবাব হবেন নামমাত্র। আসল কর্তৃত্ব দেখাবে ঘসেটি বেগম। আর ঘসেটি বেগমের নামে দেশ চালাবে রাজবল্লভ।”- এটি  জগৎশেঠের মন্তব্য।
  • রায়দুর্লভ পদাধিকার বলে একটা একরারনামায় স্বাক্ষর চান।
    জগৎশেঠ আসল ও লাভ মিলিয়ে কর্জনামায় স্বাক্ষর চান।
  • শওকতজঙ্গকে সিরাজ বিদ্রোহী ঘোষণা করে মোহনলালের অধীন সেনাবাহিনী পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়। রায়দুর্লভকে মোহনলালের অনুগামী হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়।
  • উমিচাঁদের মতে সিরাজের নবাবি নির্বিঘ্ন না হলে সবার স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

২.১ দৃশ্য (নবাবের দরবার)

সিরাজের দরবারে একজন লবণচাষীর উপর ইংরেজদের অত্যাচারের কথা তুলে ধরা হয়। দরবারে সিরাজ তার সভাসদদের সমালোচনা করেন। এতে অনেকেই ক্ষিপ্ত হয়। সভাসদদের থেকে বিভিন্ন বিষয়ে শপথ নেওয়া হয়।

  • সিরাজের পূর্ণনাম : নবাব মনসুর-উল-মুলুক সিরাজউদ্দৌলা শাহকুলি খাঁ মির্জা মুহম্মদ হায়তজঙ্গ বাহাদুর।
  • লবণ প্রস্তুতকারক লোকটি লবণ বিক্রী না করায় কুঠির লোকেরা বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়, বউকে ধর্ষণ করে হত্যা করে, লোকটার নখের ভেতর খেজুরকাঁটা ফুটিয়ে দেয়। এর জন্য সিরাজ ওয়াটসের কাছে জবাব চায়।
  • লবণের ইজারাদার কুঠিয়াল ইংরেজরা স্থানীয় লোকদের তৈরি সব লবণ তিন-চার আনা মণ দরে পাইকারি হিসেবে কিনে নেয় ও সেই লবণ এখানেই বসে স্থানীয় লোকদের নিকট দু-আড়াই টাকায় বিক্রী করে।
  • “দরবারে বসে নবাবের সাথে কী রকম আচরণ করা বিধেয় তা-ও আপনার স্মরণ নেই”- মির জাফরের প্রতি সিরাজের উক্তি।
  • কলকাতায় ওয়াটস ও ক্লাইভ আলিনগরের সন্ধি খেলাফ করে। সিরাজের আদেশের বিরোধিতা করে নন্দকুমারকে ঘুষ দিয়ে ফরাসিদের চন্দননগর আক্রমণ করে।
  • দরবারের লোকদের প্রতি সিরাজের অনুরোধ করে যে ‘মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে যেন সিরাজকে বিভ্রান্ত না করা হয়’।
  • আলিনগর সন্ধির শর্তানুসারে কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে ওয়াটসকে আশ্রয় দেওয়া হয়। কিন্তু সে এখানে বসে গুপ্তচরবৃত্তির কাজ করে। এজন্য তাকে বের করে দেয়া হয়।

২.২ দৃশ্য (মিরজাফরের আবাস)

সিরাজের দরবারে সভাসদদের অপমান করায় সবাই মিরজাফরের বাড়িতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে। সিরাজের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সবাই উঠে পড়ে লাগে। এমন সময় রাইসুল জুহালা সভায় প্রবেশ করে। মিরজাফররা তাকেও সন্দেহ করতে থাকে। তবে রাইসুল জুহালা কথা কাটিয়ে নেয়।

  • মোহনলাল যখন তলোয়ার খুলে রাজবল্লভের সামনে দাঁড়ায় তখন রাজবল্লভ চোখে কেয়ামত দেখে।
  • বিশ্বাসঘাতকতার কারণে মানিকচাঁদকে জেলখানায় যেতে হয়। পরে ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
  • নবাবের হাত থেকে ধন-সম্পত্তি রক্ষার জন্য জগৎশেঠ মাসে মাসে অজস্র টাকা খরচ করে সেনাপতি ইয়ার লুৎফ খাঁয়ের অধীনে দুই হাজার সৈন্য পুষছে।
  • রাইসুল জুহালা উমিচাঁদের চিঠি নিয়ে ক্লাইভের কাছে গেলে তার জীবন ঝুঁকিতে পড়ে।
  • “সন্দেহ করাটা অবশ্য বুদ্ধিমানের কাজ কিন্ত বেশি সন্দেহে বুদ্ধি ঘুলিয়ে যেতে পারে।”- রাইসুল জুহালার উক্তি
  • নবাবের বিশ্বাসী লোক মির মুন্সি আসল চিঠি গায়েব করে নকল চিঠি ইংরেজদের পাঠায়। ফলে ইংরেজদের সহজেই ক্ষেপিয়ে তোলা হয়েছে।
  • নবাব আলিবর্দীর আমলে, উদ্ধত সিরাজের আমলে মসনদের পাশে অবনত মস্তকে দাঁড়িয়ে আমি এই কথা শুধু ভেবেছি, একটা দিন, মাত্র একটা দিনও যদি ওই মসনদে মাথা উঁচু করে আমি বসতে পারতাম।- মির জাফরের উক্তি

২.৩ দৃশ্য (মিরনের আবাস)

মিরজাফরের পুত্র মিরনের বাসায় ষড়যন্ত্র চলে। লর্ড ক্লাইভ চুক্তির খসড়া নিয়ে আসে। এতে উমিচাঁদের সাথে প্রতারণার বিষয়টি খোলাসা করা হয় (আসল চুক্তিতে উমিচাঁদের থাকবে না। নকল চুক্তিতে উমিচাঁদের ভাগের কথা বলা হয়)। মিরজাফররা সই করতে দ্বিধায় পড়ে। চুক্তি শেষ হওয়া মাত্রই মোহনলাল প্রবেশ করলেও ইংরেজরা সুকৌশলে বেঁচে যায়।

    • মোহনলালের গুপ্তচর মিরনের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলে।
    • কোম্পানির প্রতিনিধিবর্গ কাশিমবাজার থেকে মিরনের বাসায় আলোচনার জন্য আসে।
    • মিরনের প্রতিশ্রুতি অনুসারে সিরাজের পতন হলে রায়দুর্লভ সিপাহ সালার হবে। অথচ রায়দুর্লভ মাসে মাসে জগৎশেঠ থেকে যে টাকা পায়, তাতে তার স্বর্গ পাওয়ার কথা। রায়দুর্লভকে ক্ষুদ্র শক্তিধর বলা হয়েছে।
    • মিরজাফর উমিচাঁদকে কালকেউটে বলে আখ্যায়িত করেছে।
    • রাজবল্লভ ক্লাইভকে লক্ষ্য করে বলে, তোমাকে বস্তায় ঢুকিয়ে বিড়ালের মত দু-চারটা চুবানি দেয়ার জন্য নবাবের ফরমান লাগবে না।
    • ক্লাইভের মতে উমিচাঁদ সেরা বিশ্বাসঘাতক। কারণ, ইংরেজদের পরিকল্পনার কথা সেই নবাবকে জানিয়ে দিয়েছে।
    • উমিচাঁদ ত্রিশ লক্ষ টাকা চায়। ক্লাইভের মতে উমিচাঁদকে ঠকানোর জন্য দুটো দুলিল হবে। আসল দলিলে উমিচাঁদের কথা থাকবে না। নকল দলিলে উমিচাঁদের টাকার কথা লেখা থাকবে।
    • নকল দলিলে ওয়াটসন সই করতে রাজি হয়নি। তবে ওয়াটসনের স্বাক্ষর লুসিংটন জাল করে।
    • সিরাজের পতন হলে ইংরেজরা পাবে ১ কোটি টাকা, কলকাতার বাসিন্দারা পাবে ৭০ লক্ষ টাকা, ক্লাইভ পাবে ১০ লক্ষ টাকা…
    • ইংরেজদের দলিলে প্রথম স্বাক্ষর করে মিরজাফর। সে বলে, শুভকাজে দেরি করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়“সবাই মিলে দেশকে বিক্রী করে দিচ্ছি না তো”- দলিলে স্বাক্ষরের সময় মির জাফরের উপলব্ধি। পরবর্তীতে ক্লাইভ মির জাফরদের সান্ত্বনা নেয়।

৩.১ দৃশ্য (লুৎফুন্নিসার কক্ষ)

লুৎফুন্নিসার কক্ষে ঘসেটি বেগম দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে। সিরাজ ঘসেটি বেগমকে এখানে নজরবন্দি করে। ক্ষোভে ঘসেটি বেগম অভিশাপ দেয়। খালার ষড়যন্ত্রের কথা বলে লুৎফুন্নিসাকে জানিয়ে সিরাজ দুঃখ প্রকাশ করে।

  • মতিঝিল থেকে ঘসেটি বেগমকে সিরাজ তাড়িয়ে দেয়।
  • সিরাজ নবাব হওয়াটাই ঘসেটি বেগমের সবচেয়ে বড় ক্ষতি। এছাড়াও সিরাজ কলকাতা অভিযানের জন্য ঘসেটি বেগম থেকে কিছু টাকা ধার নেয়। ঘসেটি বেগমকে নজরবন্দি করা হয়।
  • ঘরের লোক অবিশ্বাসী হলে বাইরের লোকদের সম্পর্কে সবকিছু করা সম্ভব।- সিরাজের উক্তি
  • আমাদের মাঝখানে (সিরাজ ও লুৎফা) একটি রাজত্বের দেয়াল।

৩.২ দৃশ্য (পলাশিতে সিরাজ শিবির)

যুদ্ধের প্রস্তুতি ও ইংরেজদের সাথে সিরাজের লোকদের আঁতাত দেখে দুঃখ প্রকাশ করে। এসময় মির জাফরের প্রধান গুপ্তচর উমর বেগকে হত্যা করায় সিরাজ ক্রোধান্বিত হয়।

  • ইংরেজদের পক্ষ থেকে সৈন্য মাত্র ৩ হাজার। তবে তারা অস্ত্র চালনায় শিক্ষিত। তাদের কামান ১০টি। ইংরেজ সেনারা লাক্ষবাগে আশ্রয় নেয়। ক্লাইভ ও সেনাপতিরা গঙ্গাতীরের ছোট বাড়িটায় আশ্রয় নেয়।
  • নবাবের সৈন্য ৫০ হাজারের বেশি। নবাবের কামান ৫০টিরও বেশি।
  • সিপাহসালারের একটি ও ক্লাইভের তিনটি গোপন চিঠি ধরা পড়ে।
  • সিরাজের মতে ক্লাইভ একজন সাংঘাতিক লোকমতলব হাসিল করার জন্য যে কোনো পরিস্থিতিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে
  • সিরাজের ছাউনির সামনে গড়বন্দি করা হয়েছে। ছাউনির সামনে থাকবে মোহনলাল, সাফ্রেমিরমর্দান (ইংরেজদের ঘায়েল করার জন্য এই বাহিনীই যথেষ্ট- মোহনলালের উক্তি)।
    গঙ্গা তীরের ডানদিকে পদাতিক সেনারা মিরমর্দানের জামাই বদ্রিআলি খাঁর অধীন যুদ্ধ করবে। তাদের ডান পাশে থাকবে নৌবে সিং হাজারির বাহিনী। বাঁ দিক দিয়ে লাক্ষবাগ পর্যন্ত অর্ধচন্দ্রাকারে সেনাবাহিনী সাজিয়েছে মির জাফর, রায়দুর্লভরাম ও ইয়ার লুৎফ খাঁ।
  • মির জাফরদের সৈন্যদের যুদ্ধে আনা হয়েছে চোখে চোখে রাখার জন্য। অন্যথায় তারা সিরাজের রাজধানী দখল করত।
  • সিরাজের ভরসা সেনাবাহিনীতে নয়। সিরাজের ভরসা দেশের স্বাধীনতা মুছে যাওয়া দেখে যদি মির জাফর ও তার দোসরদের যদি দেশপ্রেম জেগে ওঠে।
  • মির জাফরের গুপ্তচর উমর বেগের ভাই কমর বেগ ধরা খায়। উমর বেগ ক্লাইভের চিঠিসহ ধরা পড়ায় প্রহরীদের তরবারিতে মারা যায়।
  • কথায় কথায় মৃত্যুবিধান করাটাই শাসকের সবচেয়ে যোগ্যতার পরিচয় কিনা সে বিষয়ে সিরাজ সন্দিহান।– উমর বেগকে হত্যা করার প্রেক্ষিতে সিরাজের উক্তি

৩.৩ (পলাশিতে সিরাজ শিবির)

পলাশির যুদ্ধক্ষেত্রে নবাব প্রথমে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও পরবর্তী সময়ে বৃষ্টির কারণে নবাব পিছিয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত নবাবের সেনাপতিরা শহিদ হলে সিরাজ প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মুর্শিদাবাদে ফিরে আসেন। একমাত্র মোহনলাল বেঁচে থাকে।

  • সর্বপ্রথম ঘায়েল হন : সেনাপতি নৌবে সিং হাজারি।
  • বৃষ্টিতে সিরাজের বারুদ বন্দুক অকেজো হয়ে যায়। তাই মিরমর্দান কামানের অপেক্ষা না করে হাতাহাতি লড়াইয়ে এগিয়ে যান।
  • সিরাজের পক্ষে যে বিদেশি লড়াই করেন : ফরাসি সেনাপতি সাঁফ্রে।
  • আমি তো ফ্রান্সের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়ছি। দরকার হলে যুদ্ধক্ষেত্রে আমি প্রাণ দিব। কিন্ত আপনার বিরাট সেনাবাহিনী পিলারের মতো দাঁড়িয়ে আছে।– সাঁফ্রের উক্তি
  • মির জাফর যুদ্ধ বন্ধের আদেশ দিলেও মোহনলাল মানতে চায়নি। ক্লান্ত সেনাবাহিনী শিবিরে ফিরতে থাকে। এই সুযোগে কিলপ্যাট্রিক নবাবের সেনাদের উপর হামলা করে।
  • দ্য ব্রেভেস্ট সোলজার ইজ ডেড মিরমর্দানের প্রতি সাঁফ্রের কথা
  • আমার শেষ যুদ্ধ পলাশিতেই। মোহনলালের উক্তি
  • ক্লাইভ রাইসুল জুহালাকে বুটের লাথি মেরে সিরাজের অবস্থান জানতে চায়। রাইসুল জুহালার প্রকৃত নাম নারান সিংসিরাজের প্রধান গুপ্তচর। তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে সে বলে, “এ দেশে থেকে এ দেশকে ভালোবেসেছি। গুপ্তচরের কাজ করেছি দেশের স্বাধীনতার খাতিরে।”

৩.৪ (মুর্শিদাবাদে সিরাজের দরবার)

ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সিরাজ মুর্শিদাবাদে সৈন্য সংগ্রহের জন্য আসে। সৈন্য সংগ্রহের জন্য কোষাগার উন্মুক্ত করে দিলেও লোকেরা এমনকি সিরাজের শ্বশুর পর্যন্ত প্রতারণা করে। মোহনলালের গ্রেফতারের কথা শুনে জনগণ শহর ছেড়ে চলে যায়। সিরাজ পাল্টা প্রতিশোধের জন্য পাটনা যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে।

  • সেনাবাহিনী গঠনের জন্য রাজকোষ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
  • বিজয়ী সেনাদের লুটতরাজের ভয়ে বহু মানুষ মুর্শিদাবাদ ছেড়ে পালিয়ে যায়।
  • এবার সৈন্য পরিচালনা করবে স্বয়ং সিরাজ। তার সাথে যোগ দিবেন বিহার থেকে রামনারায়ণ ও পাটনা থেকে ফরাসি বীর মসিয়ে ল
  • সেনাপতি মোহনলালের বন্দির কথা শুনে সবাই সব আশা ত্যাগ করে শহর ছেড়ে পালাতে লাগল।
  • সিরাজের মতে পাটনায় যেতে পারলে কিছু একটা করা যেতে পারে।
  • সিরাজের শ্বশুর ইরিচ খাঁ সেনা সংগঠনের নামে বহু টাকা নিয়ে মুর্শিদাবাদ ছেড়ে পালিয়ে যায়।

৪র্থ অঙ্ক (মিরজাফরের দরবার)

মিরজাফর ইংরেজদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ক্লাইভের হাত ধরে সিংহাসনে বসে। উমিচাঁদ ভাগের টাকা না পেয়ে হতাশ হয়ে যায়। সিরাজ গ্রেফতার হওয়ার সংবাদ আসে। তাকে অত্যন্ত অপমানজনকভাবে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মিরনের নির্দেশে মোহাম্মদি বেগ তাকে জাফরগঞ্জের কয়েদখানায় হত্যা করে।

      • ক্লাইভ হাত ধরে না বসালে মির জাফর মসনদে বসবে না।
      • বাংলার মসনদে বসার জন্য মিরজাফর ইংরেজদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ক্লাইভ মিরজাফরকে হাতে ধরে মসনদে বসিয়ে দেয়।
      • উমিচাঁদ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ২০ লাখ টাকা না পেয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেয়।
      • নবাবের রাজকোষ লুট করে ক্লাইভের ভাগে ২১ লাখ টাকা পড়ে।
      • মিরজাফরকে ক্ষমতায় বসানোয় সে ইংরেজদের চব্বিশ পরগনার স্থায়ী মালিকানা ইংরেজদের দেয় যার বার্ষিক ইনকাম চার লক্ষ টাকা।
      • সিরাজ মির কাশেমের সেনাদের হাতে ভগবানগোলায় বন্দি হয়। তাকে শিকল বাঁধা অবস্থায় পায়ে হেটে জাফরগঞ্জের কয়েদখানায় পাঠানো হয়। এসময় তার মুথে থুথু ফেলার কথা বলা হয়।
      • ক্লাইভের মতে সিরাজ একটি ডেড হর্স। ক্লাইভের মতে পাবলিকের মনে টেরর জাগিয়ে রাখতে পারাটাই ক্ষমতার গ্রানাইট ফাউন্ডেশন।
      • দশ হাজার টাকার বিনিময়ে মোহাম্মদি বেগ সিরাজকে হত্যা করে। মিরন তাকে নিযুক্ত করে। মোহাম্মদি বেগকে সিরাজের বাবা-মা পুত্রস্নেহে বড় করেছে। মাথায় আঘাত করে সে সিরাজকে মেরে ফেলে।
      • মিরনের মতে আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেখার কোনো অধিকার থাকে না।

 

  • সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর:

     

    প্রশ্নঃ নবাব সিরাজউদ্দৌলা কত সালে বাংলার নবাব হন?

    উত্তরঃ নবাব সিরাজউদ্দৌলা ১৭৫৬ সালে বাংলার নবাব হয়েছিলেন।

    প্রশ্নঃ নবাব সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী কয়টি?

    উত্তরঃ নবাবের জীবদ্দশায় ৩জন স্ত্রী ছিলেন। তার ১ম স্ত্রীর নাম হলো লুৎফুন্নেসা বেগম। অন্য ২ স্ত্রী গণের নাম জেবুন্নেসা বেগম, উমদাদুন্নেসা বেগম।

    প্রশ্নঃ নবাব সিরাজউদ্দৌলা কোন ভাষায় কথা বলতেন?

    উত্তরঃ শুনতে খুব আজব মনে হলেও নবার সিরাজউদ্দৌলা বাঙ্গালী ছিলেন না। তার মাতৃভাষা ছিলো ফার্সি। তিনি বাংলায় কথা বলতে পারতেন না। অনেক বছর বাংলার মাটিতে থাকার ফলে দু-একটা বাংলা বলতে পারতেন। মজার বিষয় হলো, শুধু নবাব সিরাজউদ্দৌলা নন এমনকি বাংলার কোনো নবাবই বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারতেন না।

    প্রশ্নঃ নবাব সিরাজউদ্দৌলা কোথাইয় বন্দি হন?

    উত্তরঃ নবাব সিরাজউদ্দৌলা নাজিমপুর নামক জায়গার কাছাকাছি একটা বাজারে বন্দী হন।

    প্রশ্নঃ নবাব সিরাজউদ্দৌলার বাড়ি কোথায়?

    উত্তরঃ নবাবের জন্মসূত্রে বাড়ি ছিল মুর্শিদাবাদের সুবাহ বাংলায়।

    প্রশ্নঃ সিরাজউদ্দৌলার পুরো নাম কি?

    উত্তরঃ সিরাজউদ্দৌলার পুরো নাম হলো নবাব মনসুর উল-মুল্ক সিরাজ উদ্দৌলা শাহ কুলী খান মির্জা মুহম্মদ হয়বৎ জঙ্গ বাহাদুর।

    প্রশ্নঃ সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করেন কে?

    উত্তরঃ মোহাম্মদী বেগ নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করেন।

  • আরও পড়ুন : লালসালু উপন্যাস সম্পর্কিত চরিত্রসমূহ বিশ্লেষণ 
  • উপন্যাস ও নাটক বই আকারে পেতে অর্ডার করুন।

5 thoughts on “সিরাজউদ্দৌলা নাটক বিশ্লেষণ- Sirajuddaula Natok (HSC)”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart

You cannot copy content of this page

Scroll to Top