ঈদে মিলাদুন্নবীর প্রকৃত ইতিহাস
- ১২ রবিউল আউয়ার বলা হয় রাসুল (সা.) এর জন্ম তারিখ। যদি দিনে মহানবী সা. এর জন্ম নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণে বিতর্ক আছে। অনেকেই এই দিন উপলক্ষে ইবাদত পালন করেন। একে অনেকেই ইসলামের আবশ্যকীয় বিষয় মনে করেন।
তাদের যুক্তি হল, একজন সাধারণ মানুষের জন্মদিন যদি পালন করা যায় তবে আমাদের প্রাণের নবীর জন্মদিন কেন পালন করা হবে না? তাঁর জন্ম কি আমাদের জন্য সুখকর নয়? এভাবেই তারা নিজেদের ভাবাবেগ প্রকাশ করে থাকেন। - আসলে আমাদের বুঝা দরকার, ইসলাম কী? ইসলাম কাকে বলে?
ইসলাম হল আল্লাহ-রাসুলের নির্দেশিত পথের নাম। নিজের মনের ইচ্ছায় ধর্ম পালন করা ইসলাম নয়। ইসলাম যা বলে, সেটা মানার নামই মুসলান। যেমন দেখুন-
১. ফজরের সময় ঘুম থেকে উঠতে খুব কষ্ট হয়। অথচ তখন মাত্র ৪ রাকাত পড়তে হয়। অথচ যুক্তি বলে, তখন উঠাটা মুজাহাদার ব্যাপার। তাই তখন আরও বেশি রাকাত নামায ফরয হওয়া দরকার ছিল। অন্যদিকে দেখুন, জোহরের সময় মানুষ বেশি ব্যস্ত থাকে। অথচ নামাযের রাকাত সংখ্যা তখনই সবচে বেশি। যুক্তি বলে, জোহরের সময় রাকাত সংখ্যা কম হলেই ভালো ছিল। বলুন, এভাবে নামায পড়লে নামায কী হবে?
২. নামাযের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাসত্ব প্রকাশ পায় সিজদার সময়। মনে হয় যেন খোদার পায়ে মাথা নত করছি। অন্যদিকে সবচেয়ে সুন্দর প্রার্থনা হলো সুরা ফাতেহা তেলাওয়াত। যুক্তি তো বলে, সিজদায় গিয়ে সুরা ফাতেহা পাঠ করা দরকার। কারণ, তখন বেশি দাসত্ব প্রকাশ পায়। এভাবে নামায পড়লে কি নামায হবে? - ঠিক রাসুলের নামে মিলাদুন্নবী পালন করা কোনো সমস্যা্ই নাই। কিন্তু দেখতে হবে, কুরআন-হাদিস কি এটা বলেছে কি না? তাঁর প্রাণ প্রিয় সাহাবারা এটা পালন করেছেনে কি না? বা তাঁরা কেনো পালন করেন নি? আমরা কি সাহাবিদের থেকেও রাসুলকে বেশি ভালোবাসি? তাই অতি আবেগি না হয়ে কুরআন হাদিস দেখুন। আবেগের নাম ইসলাম নয়। মানার নামই ইসলাম।
-
আবেগের নাম ইসলাম না-
- তবে এই দিন রাসুল সা. শুকরিয়া স্বরূপ রোযা রাখতেন। আপনিও নফল রোযা রাখুন।
অনেকে বলেন, এই দিন তো মিলাদুন্নবী পালন করতে নিষেধ করা হয় নি। আপনিই বলুন তো, ফজরের নামায ৫০ রাকাত পড়লে সমস্যা হবে, এটা কোথায় পেয়েছেন? প্রতিদিন আট ওয়াক্ত নামায পড়া নিষিদ্ধ বলা হয়েছে কি? একটু ভালো করে চিন্তা করেন।
আপনি ইবাদত করেন কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু একে আবশ্যক বোধ করলেই বিপদ।
আবেগ দিয়ে নয়, কুরআন-হাদিস দিয়ে ইসলাম মানুন। তবেই মুসলমান হতে পারবেন। নয়তো কখনোই মুসলিম হতে পারবেন না। - যারা আমরা আবেগ দিয়ে বেদাতগুলো পালন করি, তারা আল্লাহর ওয়াস্তে দুটি বদ রুসুম থেকে নিজেদের রক্ষা করুন। নয়তো মুসলমানই দাবি করতে পারবেন না। যথা-
১.“বান্দার কোনো নির্দিষ্ট গুণ খোদার সাথে মিলানোর নাম তাজাসসুমের বা সাদৃশ্যের গুনাহ। অর্থাৎ, আমাদের কান আছে। এখন যদি আপনি বলেন, আল্লাহরও আমাদের মতো কান আছে। তবে সেটা সাদৃশ্যের গুনাহ হবে। কারণ, বান্দার কোনো কিছুই আল্লাহর সাথে মিল নেই।”২. আল্লাহর কোনো গুণকে বান্দার সাথে নির্দিষ্ট করার নাম শিরক। যেমন, আল্লাহ তায়ালা চিরঞ্জীব, অনাদি-অনন্ত। এগুলো কেবল আল্লাহরই গুণ।
এখন যদি আবেগের চোটে আমরা কোনো বান্দাকে আল্লাহর গুণ লাগিয়ে দেই, সেটা হবে শিরক। আল্লাহ কখনোই শিরকের গুনাহ মাফ করবেন না। এবার দেখুন সেই বিশ্বাসগুলো-ক. রাসুল সা. গায়েব জানেন। এটা অনেকের বিশ্বাস।
অথচ গায়েবের কথা একমাত্র আল্লাহই জানেন। কুরআনে আছে, অদৃশ্যের কথা একমাত্র আল্লাহই জানে। (সূরা লোকমান)
কিন্তু আমরা অতি আবেগে বলি, রাসুল সা. গায়েব জানেন। আমরা ভুলে যাই, “রাসুল (সা) হলেন সৃষ্ট আর আল্লাহ হচ্ছে স্রষ্টা।” আর স্রষ্টার গুণ সৃষ্টিতে লাগানোই শিরক।
আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন, রাসুল সা. যদি গায়েব জানতেন, তবে আয়েশা (রা) এর চরিত্র নিয়ে অপবাদের কথা তিনি জানতে পারলেন না কেন? কেন তিনি তাঁর উপর মনঃক্ষুণ্ন ছিলেন? দয়া করে কুরআনের আঠারো পারায় সুরা নূরের শানে নুযুল দেখেন।খ. রাসুল সা. সর্বত্র উপস্থিত থাকেন। অথচ সর্বত্র উপস্থিত থাকা একমাত্র আল্লাহরই গুণ।
একই গুনাহ বারবার করছেন। তাই দয়া করে কুরআন হাদিস পড়ুন।
মনে রাখবেন, ‘আমল কম আকিদা সহীহ’ জান্নাতে যেতে পারবেন। কিন্তু ‘আমল বেশি, আকিদা ভ্রান্ত’ জান্নাতে যেতে পারবেন না।
শয়তান যখন দেখল মানুষ পাপ করে এক সময় তওবা করে নেয়, তার সব চেষ্টাই শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়, তখনি সে ইবাদতের নামে এমন পন্থা উদ্ভাবন করল যাতে মানুষ ইবাদত মনে করে পাপ করে। এদের যদি আপনি তাওবা করতে বলেন, কখনোই করবে না। কারণ, তাওবা তো হয় পাপ থেকে। নেক থেকে তাওবা করবে কেন? যার প্রেক্ষিতে আজ মাজার পুজা, অনেক ভ্রান্ত পীরের অনুসারি ইত্যাদি বাড়ছে
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।