ফুটবল নিয়ে যুদ্ধ। মজার ও দুঃখের ইতিহাস।
- ১৯৬৯ সালে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব চলছে। ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের মূল পর্ব। হন্ডুরাস ও এল সালভেদর এর মধ্যে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ইতঃপূর্বে এই দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এই ফুটবল প্রেস্টিজ ইস্যুতে কোন দল বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলবে তা নিয়ে তীব্র উত্তেজনা চলছিল।
- ১৯৬৯ সালের ৬ জুন। ইনজুরি টাইমে গোলের সুবাদে প্রথম ম্যাচে এল সালভেদরকে ০-১ গোলে পরাজিত করে হন্ডুরাস। নিজ দেশের পরাজয় সহ্য করতে না পেরে ৮ বছর বয়সী অ্যামোলিয়া বোলানোস নামে এক কিশোরী আত্মহত্যা করে সেই রাতে। পরদিন খুব গুরুত্বের সাথে সংবাদটি ছাপানো হয়। বিষয়টি এতটাই গুরুত্ব পায় যে, স্বয়ং দেশটির প্রেসিডেন্ট মেয়েটির শেষকৃত্যে উপস্থিত হয় এবং মেয়েটিকে ‘শহীদ’ বলে আখ্যা দেয়।১৫ জুন সান সালভেদরে পরবর্তী ম্যাচ ছিল। Amelia Bolanos ইস্যুতে তখনো উত্তপ্ত সালভেদর। হন্ডুরানের প্লেয়ারদের হোটেলের জানালায় সারা রাত ধরে ইট, পঁচা ডিম ও বিভিন্ন আবর্জনা নিক্ষেপ করে ক্ষুব্ধ সালভেদর সমর্থকরা। রীতিমত সামরিক প্রহরা দিয়ে মাঠে নিয়ে আসতে হয় হয় নির্ঘুম ও দুঃসহ রাত কাটানো হন্ডুরাস প্লেয়ারদের। গ্যালারিতে পতাকার চেয়ে বেশি শোভা পাচ্ছিল অ্যামেলিয়ার ছবি। সেই ম্যাচে ৩-০ গোলে জয়লাভ করে সালভেদর। ম্যাচ শেষে হন্ডুরাসের কোচ মারিও গ্রিফিন বলেন, “আমরা ম্যাচ হেরেছি তাতে আমার খুশি। জীবিত ফেরত আসতে হলে এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।” সেদিনও খেলা শেষে দাঙ্গায় কিছু মানুষ মারা যায়।

- তারপরও একটা ম্যাচ বাকি ছিল। এবারে ভেন্যু ছিলো মেক্সিকো। দুই দেশের জন্যই এই খেলাটা প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রচুর পরিমাণে ফাউল ও গ্যালারিতে বারংবার সংঘর্ষের ভেতর অনুষ্ঠিত এই খেলায় এল সালভেদর ৩-২ গোলে বিজয়ী হয়। সেই ম্যাচের ৫০ বছর পর গোলদাতা Mauricio Alonso Rodriguez বলেন, “আমি যখন গোল করি, তখন আমার মনে হয়েছিল যে

তাদের পক্ষে এতো কম সময়ে গোল শোধ করা সম্ভব না। জয়ের ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ছিলাম।”
খেলা শেষ হওয়ার ঠিক কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দাঙ্গা লাগানো আর উত্তেজনা প্রশমনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগে হন্ডুরাসের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে এল সালভেদর।
এরপর ১৪ জুলাই, খেলার ঠিক তিন সপ্তাহের মাথায় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। চারদিনব্যাপী চলা এই যুদ্ধে প্রাণ হারায় দুই হাজার মানুষ। লক্ষাধিক মানুষ হয় উদ্বাস্তু। ১৮ জুলাই উভয় দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় এবং ২০ জুলাই থেকে তা কার্যকর হয়।
-
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট-
- ১৯৬৯ সালে এল সালভেদরের জনসংখ্যা ছিল ৩০ লাখ। ভূমির মালিকরা দেশটি নিয়ন্ত্রণ করত। কৃষকদের জন্য খুব কম জমি ছিল।
অন্যদিকে এল সালভেদরের তুলনায় হন্ডুরাস ছিল পাঁচগুণ বড় ও জনসংখ্যা ছিল ২৩ লাখ। হন্ডুরাসও জমির মালিক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত। ফলে এল সালভেদরের অনেক মানুষ চাষাবাদের জন্য হন্ডুরাস যেত। একই সাথে মার্কিন ফলের কোম্পানিগুলোতে কাজ করার আশাও ছিল তাদের মনে।
ততদিনে এল সালভেদরের প্রায় তিন লক্ষ মানুষ হন্ডুরাস

গিয়ে বসবাস করছিল। বিষয়টি হন্ডুরাসের কৃষকদের মনে ক্ষোভ তৈরি করে। ক্ষোভ প্রশমনের জন্য দেশটির সরকার ভূমি সংস্কার আইন করে। এই সংস্কার আইনের উদ্দেশ্য ছিল এল সালভেদরের শ্রমিকদের জন্য। এটি নিয়ে তখন উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এই সময়ের মধ্যেই সেই ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।
অনুশীলন আন্তর্জাতিক বইতে তথ্যগুলো সবিস্তারে পাবেন।