Skip to content

ভারতবর্ষে মুসলমানদের আক্রমণ- Muslim Attack on India

ভারতবর্ষে মুসলিম আক্রমণের সূচনা

মুসলিম আক্রমণের পূর্বে ভারতের আর্থ-সামাজিক অবস্থা

  • প্রাচীন আমলে ভারতবর্ষ : আফগানিস্তান, কনৌজ, কাশ্মীর, দিল্লী ও আজমির, সিন্ধু, গুজরাট, নেপাল ও আসাম।
  • প্রাচীন ভারতে তিনটি ধর্ম অধিক প্রচলিত ছিল। যথা- হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন। এদের মধ্যে জৈন ধর্ম খুব বেশি প্রচলিত ছিল না। বৌদ্ধ ধর্ম প্রায় বিলুপ্তির পথে চলে এসেছিল। সাম্প্রদায়িক কলহ ও ধর্মীয় কোন্দল লেগেই থাকত। অধিকাংশ রাজা হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ায় বৌদ্ধ ধর্ম বেশ সংকটের মধ্যে পড়েছিল। ব্রাহ্মণ্যবাদের পুনর্জাগরণ ও এর আক্রমণাত্মক মনোভাব বৌদ্ধদের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করেছিল। বৌদ্ধরা হিন্দু শাসকদের নির্যাতন থেকে পরিত্রাণ পেতে সিন্ধু আক্রমণকারী আরবদের স্বাগত জানায়।

মুহাম্মদ বিন কাসিমের আক্রমণ

  • মুহাম্মদ বিন কাসিমের আক্রমণ : উমাইয়া বংশের প্রথম ওয়ালিদ আরব জাহানের খলিফা থাকা অবস্থায় পূর্বাঞ্চলের গভর্নর ছিলেন হাজ্জাজ-বিন-ইউসুফ। সিন্ধু ও মুলতানের সাথে আরব সাম্রাজ্যের সাধারণ সীমান্ত ছিল। আরবের অনেক অপরাধী ভারতের রাজা দাহিরের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করে। এসব বিষয় নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বৈরি সম্পর্ক সৃষ্টি হয়।
    বেশ কয়েকজন আরব বণিক শ্রীলংকায় মারা যান। শ্রীলংকার রাজা তাদের মৃতদেহ, পরিবার-পরিজন, অর্থসামগ্রী ও খলিফার জন্য কিছু উপহারসহ আটটি জাহাজ বোঝাই করে মুসলিম সাম্রাজ্যের রাজধানী দামেস্কের উদ্দেশ্যে পাঠান। সিন্দুর দেবল বন্দরের (বর্তমান করাচি) নিকট জাহাজগুলো জলদস্যু দ্বারা লুণ্ঠিত হয়। হাজ্জাজ সিন্ধুর রাজা দাহিরের নিকট ক্ষতিপূরণ ও অপরাধীদের শাস্তি দাবি করে। কিন্তু অপরাধীদের ধরতে দাহির অস্বীকৃতি জানায়। ফলে হাজ্জাজের নির্দেশে মুসলমানগণ ৭১২ সালে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অভিযান চালায়। হাজ্জাজ প্রথমে ওবায়দুল্লাহবুদাইলের নেতৃত্বে পরপর দুটি অভিযান পরিচালনা করে কিন্তু দুটি অভিযানই ব্যর্থ হয়। অবশেষে হাজ্জাজ ভাতিজা মুহাম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে যা সফল হয়।

    মুহাম্মদ বিন কাসিম মাকরানের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হন। মাকরানের শাহের সাথে তিনি বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। রাজা দাহিরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ জাঠ ও মেডগণও মুসলমানদের পক্ষে যোগ দেয়। মুহাম্মদ প্রথমেই দেবল বন্দর অবরোধ করেন। দেবলের প্রধান মন্দিরের চূড়ায় একটি লাল নিশান উড়ানো ছিল যাতে হিন্দুদের বিশ্বাস ছিল যে যতক্ষণ এই নিশান উড়বে ততক্ষণ বাইরের শত্রুরা দেবল দখল করতে পারবে না। মুহাম্মদ পাথর ছুড়ে নিশানটি নামিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। হিন্দুদের মনোবল ভেঙে যায় ও দেবল মুসলমানরা দখল করে। সিন্ধু নদীর তীরে রাজা দাহিরের সাথে তাঁর ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধক্ষেত্রেই রাজা দাহির মারা যায় ও অন্তঃপুরের নারীরা আগুনে ঝাঁপ দিয়ে জহরব্রত পালন করে। এরপর তিনি উত্তরে অগ্রসর হয়ে মুলতান দখল করে। কিন্তু মুহাম্মদ ভারতবর্ষে স্থায়ী সাম্রাজ্য স্থাপন করতে পারেন নি। খলিফা সোলাইমান তাঁকে দামেস্কে নিয়ে হত্যা করেন।

মাহমুদ গযনভির ভারত আক্রমণ

  • মাহমুদ গযনভির আক্রমণ : গজনির সুলতান ছিলেন সুলতান মাহমুদ। ১০০০-১০২৭ সালের মধ্যে তিনি ১৭ বার ভারতে আক্রমণ করেন। রাজা জয়পালের সাথে তাঁর বাবার পুরোনো শত্রুতা ছিল। তাই ভারতে আক্রমণের ইচ্ছা তাঁর ছিল। ১০০০ সালে তিনি প্রথম রাজা জয়পালকে পরাজিত করেন। জয়পাল বিভিন্ন শর্তে মুক্তি পায় কিন্তু পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করতে পারে নি। ছেলে আনন্দপালের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করে তিনি স্বেচ্ছায় আগুনে ঝাঁপ দিয়ে মারা যান। মাহমুদ গযনভির ১৬তম অভিযান কাথিওয়ারের সোমনাথ মন্দিরের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়। সোমনাথকে হিন্দুরা অজেয় মন্দির মনে করত। তাদের এই দম্ভ চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হয়। তাঁর শেষ অভিযান পরিচালিত হয় জাঠদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তিনি স্থায়ী সাম্রাজ্য স্থাপন করতে পারেন নি। হিন্দু রাজা পরাজিত হলেও আনুগত্য ও কর দেওয়ার শর্তে তারা দেশ পরিচালনা করত যা ১০৩০ সালে মাহমুদ গযনভির মৃত্যুর সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যায়।

শিহাবুদ্দিন ঘুরির ভারত আক্রমণ

  • শিহাবুদ্দিন ঘুরির আক্রমণ : হিরাত ও গজনির মধ্যবর্তী অঞ্চল ঘুর নামে পরিচিত। ১১৭৫ সালে মুহাম্মদ ঘুরি কারামতি শিয়াদের পরাজিত করে মুলতান দখল করেন। ১১৭৯ সালে তিনি পেশেয়ার দখল করেন। পরবর্তীতে তিনি গজনি বংশের শেষ সুলতান খসরু মালিককে পরাজিত করে পাঞ্জাবকে ঘুর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত করেন।
    মুহাম্মদ ঘুরি পাঞ্জাব দখল করলে ভারতের হিন্দু রাজারা শঙ্কিত হন। দিল্লী ও আজমিরের রাজা পৃথ্বিরাজ চৌহান একটি শক্তি সংঘ গঠন করেন। তবে কনৌজের রাজা জয়চাঁদের সাথে পৃথ্বিরাজের সম্পর্ক ভালো ছিল না। ১১৯১ সালে মুহাম্মদ ঘুরি তরাইনে হিন্দুদের সাথে যুদ্ধ করেন। ঘুরি তুর্কি স্টাইলে আক্রমণ না করে (পালানো ভাব ধরে আক্রমণ) সম্মুখ আক্রমণ করতে গিয়ে পৃথ্বিরাজের আক্রমণের শিকার হন। ফলে তিনি সে যুদ্ধে পরাজিত হন।

    এদিকে পৃথ্বিরাজ চৌহান জয়চন্দ্রের মেয়েকে অপহরণ করে। ফলে জয়চাঁদ ঘুরিকে আক্রমণের অনুরোধ করে। জয়চাঁদ মনে করেছিল ঘুরি মাহমুদ গযনভির মতো আক্রমণ করে সম্পদ নিয়ে চলে যাবে। দ্বিতীয় যুদ্ধে ঘুরির সেনা ছিল ১ লাখ ২০ হাজার আর রাজপুতদের সেনা ছিল প্রায় তিন লাখ। ঘুুরি কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিজেকে ভীত হিসেবে প্রকাশ করেন। এতে রাজপুতদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় এবং ঢিলেঢালা মনোভাব চলে আসে। ফলে প্রতিপক্ষের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস তাদের কাল হয়ে দাঁড়ায়। যুদ্ধে ঘুরি বিজয়ী হন ও পৃথ্বিরাজকে হত্যা করা হয়। অতঃপর কুতুবউদ্দিন আইবেককে বিজিত অঞ্চলের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে শিহাবউদ্দিন গজনিতে ফিরে যান।

    কুতুবউদ্দিন মুসলিম সাম্রাজ্য আরও সম্প্রসারিত করেন। তিনি হানসি, মিরাট, দিল্লী ও কুইলি দখল করেন। জয়চাঁদের সাথে মোকাবিলার জন্য মুহাম্মদ ঘোরি ১১৯৪ সালে আবার ভারতে ফেরত আসেন। কুতুবউদ্দিন তাঁর সাথে যোগ দেন। কনৌজ মুহাম্মদ ঘুরির দখলে আসে। তিনি আরও অগ্রসন হয়ে বারাণসি দখল করেন। পরবর্তীতে কুতুবউদ্দিন আনহিলওয়ার ও কালিঞ্জর দখল করেন। ১২০৬ সালে শিহাবউদ্দিন ঘুরি আততায়ীর হাতে নিহত হন।

  • প্রাচীন ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম আক্রমণ করেন আলেকজান্ডার। তাঁর আক্রমণ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন এখানে-
  • পরবর্তী আলোচনা পড়ুন : মামলুক শাসনের ইতিহাস 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page