Skip to content

দাসব্যবস্থা বনাম ইসলামি দাসব্যবস্থা : অভিশাপ না আশীর্বাদ

ইসলামি দাসব্যবস্থা: অভিশাপ নাকি আশীর্বাদ

  • ইসলামে দাস ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকার কারণে পশ্চিমা ও পশ্চিমাপ্রীতি প্রাচ্যের জনগণের আপত্তির শেষ নেই। বিভিন্নভাবে ইসলামকে হেয় করে এই কথা বলে যে, ইসলাম যদি শান্তির ধর্মই হত তবে সর্বপ্রথম এই দাস ব্যবস্থা বিলুপ্ত করত। কিন্তু এরা তা চায় না। সুতরাং ইসলাম একটি বর্বর ধর্ম। (নাউযুবিল্লাহ)
    বিশেষ করে কিছু দার্শনিকের দর্শনই এর জন্য দায়ী। এজন্য আমরা পরাধীনতা ও স্বাধীনতা বুঝি না। যেমন রুশো বলেছেন, Man is born free but he is everywhere in chains.
    এটি রুশোর আগে বলেছিলেন হযরত ওমর (রা)। তিনি বলেন, তোমরা কবে লোকজনকে গোলাম বানিয়ে ফেললে অথচ তাদের মায়েরা তো তাদের স্বাধীন প্রসব করেছে। (কানযুল উম্মাল, হাদিস নং ৩৬০১০)
    আফসোস আজ আমরা রুশোর কথাটা জানি। কিন্তু ওমর (রা) এর কথা জানি না।

  • সামাজিক ক্ষেত্রে দাসদের হুকুম-

  • সামাজিক ক্ষেত্রে দাসদের ব্যাপারে ইসলামের হুকুম হলো “তোমার গোলামের ৭০ টি অপরাধ থাকলেও তাকে ক্ষমা করে দাও। আরো অধিক হলে লঘুদণ্ড প্রদান কর। কোনো অমুসলিম গোলামের সাথে এমন ব্যবহার তো দূরের কথা, আপন সন্তানের ক্ষেত্রেও এমন আচরণ করতে দেখা যায় না।
    ইসলাম প্রদত্ত দাসপ্রথা নিয়ে যারা আপত্তি তোলেন,তাদের নিকট উত্তর চাই। মনে করুন, ভারতের সাথে আমাদের যুদ্ধ লাগল। ভারত আমাদের দেশে আক্রমণ করল। কিন্তু তারা যুদ্ধে হেরে গেল। তাদের ২ লাখ সৈন্য আমাদের কাছে আটকা পড়ল। এখন এই সৈন্যদের ব্যাপারে কী করা যাবে?
  • প্রথম অবস্থা : এদের সবাইকে মুক্তি দেয়া হোক।

  • তার অর্থ এই দাঁড়াবে যে, আমরা তাদের শক্তি তাদেরকে ফিরিয়ে দিলাম। মানে তাদের সশস্ত্রবাহিনী তো তাদেরকে পুরাই দিয়ে দিলাম, এবার এরা নতুন উদ্যমে আমাকে আক্রমণ করবে। বলুন, এটা কি বোকামি নয়?
  • দ্বিতীয় অবস্থা :  এদের সবাইকে হত্যা করা হোক।

  • যেখানে দাসব্যবস্থা নিয়েই এত আপত্তি সেখানে হত্যার অনুমতি দিলে তো তো পশ্চিমারা শোরগোল তুলবে যে, এবার ইসলাম একেবারে রসাতলে গেলো। বর্বরতার আর কোনো কিছু বাকি রইল না।
    (অথচ এরাই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সাধারণ লোককে দেদারসে হত্যা করে চলছে আবার এরাই মানবতার কথা বলে)
  • তৃতীয় অবস্থা : এদের দিয়ে বন্দী বিনিময় করা হোক।

  • কিন্তু আমি আগেই বলেছি যে, ভারত আমার দেশে আক্রমণ করতে এসে হেরে গেলো। মনে করুন, ভারতের হাতে আমার লোক বন্দি আছে ৫ হাজার। এখন আমি যদি ভারতে সাথে ৫ হাজার বন্দীর বিনিময়ে ২ লাখ শত্রুকে ছেড়ে দিই, তবে এটা বোকামি ছাড়া আর কী হবে? কারণ বন্দী বিনিময় তো তখন হবে, যখন উভয়ের সৈন্য সে পর্যায়ে বন্দী হয়েছে।আর একথাও সত্য যে, সবাইকে দিয়ে কিন্তু বন্দী বিনিময় করা যায় না। যেমন একজন সেনাপতিকে বন্দী করলে তাকে সহজ শর্তে মুক্তি দেয়াটা সমীচীন না। কারণ, এ আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষমতা রাখে।
  • চতুর্থ অবস্থা : এদেরকে কারাগারে রাখা হোক।

  • সেখানেই তাদের অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। আপাতদৃষ্টিতে এই সিস্টেমকে খুব ভালো মনে হয়। কিন্তু এই সিস্টেমেও অনেক অসুবিধা আছে। যেমন
    ক. এর ফলে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক চাপ বেড়ে যাবে।
    খ. এসব বন্দীকে উৎপাদনমূলক কাজে লাগিয়ে এদের শ্রমলব্ধ অর্থের মাধ্যমে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক চাপ কিছুটা কমিয়ে আনাটা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থা। অপরদিকে কয়েদীদের নিরাপত্তা ও স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বিরাট সংখ্যক আমলা নিয়োগ করতে হবে। যাদের অন্য কোনো কাজে লাগানো সম্ভব হবে না।
    গ. অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায়, আপনি তাদের বন্দী রেখে যতই সুযোগ-সুবিধা দেন না কেন, এসব তাদের নিকট মুল্যহীন। কেননা, তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও চাপা ক্ষোভ এতই তীব্র হয় যে, রাষ্ট্রের সকল সুবিধাতেও তারা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। আর সুযোগ পেলেই তারা সেই রাষ্ট্রের ক্ষতি করে বসে।
    ঘ. এছাড়াও এই সকল বন্দি শিক্ষা-সভ্যতা ও বাহিরের আলো হতে বঞ্চিত রইলে, যা মানবতাবিরোধী অপরাধ।
    এবার বলুন, এতসব করে আপনার কী লাভ হলো? আপনি কী বিন্দুমাত্র শত্রু আশঙ্কামুক্ত রইলেন। মনে রাখেতে হবে,উপরের পরিস্থিতি তখনই যখন যুদ্ধের বিনিময়ে দেশ জয় করা হবে। যদি সন্ধির মাধ্যমে দেশ জয় করা হয়, তাহলে এগুলোর কিছুই করা যাবে না। যেমনটি করেছিল স্পেনের ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলা।

  • ইসলামের নির্দেশনা-

  • এক্ষেত্রে ইসলাম কী বলে দেখুন। যুদ্ধবন্দীদেরকে সেনাদের মাঝে ন্যায়ানুগ বণ্টন করে দেওয়া হবে। যার ফলে কী কী লাভ হচ্ছে দেখুন-
    ১. একটি পরিবারের জন্য একজন গোলামের ব্যয়ভার গ্রহণ করা কোনো ব্যাপারই নয়। অপরদিকে রাষ্ট্রও বিরাট অর্থনৈতিক চাপ হতে বেঁচে গেল। যদি পরিবার আরও স্বচ্ছল হয়, তবে সে অধিক গোলাম নিতে পারে।
    ২. প্রয়োজনবোধে মনিব কর্তৃক স্বীয় গোলাম দ্বারা উপার্জন বৈধ হওয়ায় গোলামের ভরণ-পোষণের ব্যাপারটা মনিবের জন্য বিরাট চাপ হবে না। এমতাবস্থায় মালিকের অনুভূতি এমন হবে যে, চাকরের পিছনে আমার যে টাকাটা ব্যয় হত তা এর পিছনে ব্যয় হচ্ছে, আর বিনিময়ে আমি তাকে খাটিয়ে নিচ্ছি
    ৩. এক্ষেত্রে গোলামেরও একটা মানসিক প্রশান্তি আছে। গোলাম যেহেতু বন্দীর তুলনায় অবাধ স্বাধীনতা পায় তাই মনিবের বিরুদ্ধে তার ক্রোধ বিদ্বেষ সঞ্চার হয় না। তথাপি মনিব যদি আন্তরিক থাকে, তখন গোলাম মনিবের বাড়িকেই নিজের বাড়ি বলে পরিচয় দেয়। এটা কোনো রূপকথা নয়। যেমন যায়দ ইবনে হারিসা (রা) রাসূলের (সা) বাড়িকেই নিজের বাড়ি বলতেন।
    ৪. গোলামের বন্দির তুলনায় অধিক ব্যক্তি স্বাধীনতা পাওয়ায় সে তার ভেতরের প্রতিভাগুলো সমাজে প্রকাশের সুযোগ পায়। যার ফলে সমাজে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
    এগুলো কোনো কাল্পনিক কথা নয়, এটাই বাস্তব। ইসলামের ইতিহাস পড়লে দেখা যায়, হাজার হাজার বিখ্যাত ব্যক্তি গোলাম ছিলেন। এমনকি তারা বেশ ভালোভাবেই দেশ চালিয়েছেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানে তাদের পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। যেমন মিসর-ভারতসহ অনেক দেশে ‘মামলুক’ বংশের লোকেরা শাসন করেছে। অথচ এটা একটা গোলামী বংশধর।
  • ইসলাম বিন্দুমাত্র অন্যায় করে নি যুদ্ধবন্দিদের উপর। তবে ইসলাম দাসব্যবস্থা খুব বেশি সাপোর্ট করে নি। বরংচ অনেক জায়গায় দাস মুক্তির প্রতি উৎসাহ দিয়েছে। দাস মুক্তিদানকে দিয়েছে অনেক ফযীলতের কাজ।
    রোযার কাফফারা তো দাস আযাদ কর। কসমের কাফফারা দাস আযাদ কর। কিছু থেকে কিছু হলেই দাস আযাদের কথা বলা হয়েছে। আবু হুরায়রা রা. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, কেউ কোন মুসলিম গোলাম আযাদ করলে আল্লাহ সেই গোলামের প্রত্যেক অঙ্গের বিনিময়ে তার একেকটি অঙ্গ (জাহান্নামের) আগুন থেকে মুক্ত করবেন। (বুখারি)শুধু আযাদের কথাই বলা হয় নি, বলা হয়েছে গোলামের সাথে সৎ ব্যবহার করতে। তাকে ভাই হিসেবে বরণ করে নিতে। প্রতিটি ফেকাহ ও হাদীসের কিতাবে গোলাম সম্পর্কে একটা বিরাট অনুচ্ছেদ আছে।  তবুও কী ইসলামের ব্যাপারে আপত্তি তোলা যাবে?
  • দাসমুক্তির ব্যবস্থা-

  • ইসলাম মালিক ও দাস উভয়কেই একথা বলেতোমরা উভয়ই সমান। যে তার দাসকে হত্যা করবে আমরা তাকে হত্যা করব। যে তার দাসের নাক কর্তন করবে আমরা তার নাক কর্তন করব। যে তার দাসের সাথে ভাল ব্যবহার করবে আমরা তার সাথে ভাল ব্যবহার করব।“
    ইসলামের প্রথম পর্যায়ে দাসদের অধিকার, দাসদের প্রতি ব্যবহার, সমাজে দাসদের অবস্থান ইত্যদি ব্যাপার সঠিক করে। শুধু এতেই থেমে থাকে নি। প্রথমে দাসদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদল করে। এরপর ক্রমান্বয়ে তাদের মুক্তির পথে এগোয়। দুটি পদ্ধতিতে এই দাসত্ব থেকে মুক্তির উপায় বের করে ইসলাম। এই পদ্ধতি দুটি হচ্ছে-
    ১। মালিকদের স্বেচ্ছায় তাদের অধীনতা দাসদের মুক্তিদানে উৎসাহ প্রদান। (Al Itq)
    ২। লিখিত চুক্তির মাধ্যমে। (Mukatabah)
    ঠিক এই নিয়মটিই ইসলামের নিয়ম চালু হওয়ার ৭০০ বছর পর ১৪০০ শতকে ইউরোপে দাসমুক্তির ক্ষেত্রে চালু হয়েছিল। ইসলাম এই আইন করে ঐসব দাসদের মুক্তির উপায় করে দেয় যারা মালিকের দয়ার জন্য অপেক্ষা না করে নিজ উদ্যেগে মুক্তি পেতে ইচ্ছুক। শুধু তাই নয়, ইসলাম এমন দাসদের সাহায্যের জন্য যাকাত বা বায়তুল মাল থেকে অর্থ দানের ব্যবস্থা করে। এভাবে আস্তে আস্তে ইসলাম তৎকালীন সমাজ থেকে দাসপ্রথার বিলোপ ঘটিয়েছিল। 
  • দাসদের অধিকার সম্পর্কে কিছু হাদিস-

  • ১. তাদের মনিবদের মত খাদ্য ও পোশাক-পরিচ্ছদের নিশ্চয়তা : আবূ দাউদ র. মা‘রুর ইবন সুয়াইদ থেকে বর্ণনা করেন, “আমরা ‘রবযা’ নামক স্থানে আবু যরের নিকট উপস্থিত হলাম। অতঃপর দেখা গেল যে, তাঁর গায়ে এবং তাঁর গোলামের গায়ে একই ধরনের চাদর। অতঃপর তিনি বললেন, “হে আবু যর! আপনি যদি আপনার গোলামের চাদরটা আপনার চাদরের সাথে মিলেয়ে ব্যবহার করতেন, তবে তা সুন্দর হত। আর তাকে আপনি অন্য আরেকটি কাপড় পরাতন? তখন তিনি (আবু যর) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শুনেছি,
    “তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা যার ভাইকে তার অধীন করে দিয়েছেন, সে যেন তাকে তাই খাওয়ায় যা সে নিজে খায়; আর সে যেন তাকে পোশাক হিসেবে তাই পরিধান করায় যা সে নিজে পরিধান করে এবং যে বোঝা বহন করতে সে অক্ষম, সে যেন এমন বোঝা তার উপর চাপিয়ে না দেয়। তারপরেও যে বোঝা বহন করতে সে অক্ষম, এমন বোঝা যদি তার উপর চাপিয়ে দেয়,তবে সে যেন তাকে সহযোগিতা করে।—(বুখারি, কিতাবুল আদব, হাদিস নং- ৫৭০৩)।
  • ২. তাদের সম্মান রক্ষা করা : আবু হুরায়রা রা.  নবী আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, “যে ব্যক্তি তার নির্দোষ গোলামকে অপবাদ দেবে, কিয়ামতের দিন তাকে অপবাদের শাস্তি স্বরূপ বেত্রাঘাত করা হবে। তবে সে যা বলেছে তা যথাযথ হলে ভিন্ন কথা।” —(বুখারি, কিতাবুল হুদুদ, হাদিস নং- ৬৪৬৬)।
    ইবন ওমর রা. তাঁর গোলামকে স্বাধীন করে দিয়ে মাটি থেকে এক খণ্ড কাঠ অথবা অন্য কিছু হাতে নিয়ে বলেন, “এর মধ্যে আমার জন্য এমন কোন প্রতিদান নেই, যা এর সমান হতে পারে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি তার গোলামকে চড় মারল অথবা প্রহার করল, তবে তার কাফ্‌ফারা হল তাকে মুক্ত করে দেওয়া।” — (আবু দাউদ, আদব, হাদিস নং- ৫১৭০; মুসলিম, কিতাবুল আইমান, হাদিস নং- ৪৩৮৮)।
  • ৩. দীন ও দুনিয়ার বিষয়ে মর্যাদাবান গোলামকে স্বাধীন ব্যক্তির উপর প্রাধান্য দেওয়া : সালাতে গোলামের ইমামতি করাটা তাদের জন্য জায়েয। আর বর্তমান ইমামতির মতো তখন এটা খুব সস্তা বিষয় ছিল না।  আয়েশা রা. একজন গোলাম ছিল, সে সালাতে তাঁর ইমামতি করত। এমনকি গোলামের কথা শোনা ও তার আনুগত্য করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যখন সে তাদের শাসন ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং অন্যদের থেকে অধিক যোগ্য হয়।
  • স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক অধিকার; আপতিত কোনো কারণ ব্যতীত কোন ব্যক্তির এই অধিকার হরণ করা যায় না। ইসলাম সেই মানুষকে দাস করেছে যে তার স্বাধীনতার চূড়ান্ত অপব্যবহার করেছে। ফলে যখন সে কোনো সীমালঙ্ঘনের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে যুদ্ধবন্দি হবে, তখন তাকে যুদ্ধবন্দিত্বের সময় আটক রাখা একটি সঠিক আচরণ।

    যখন কোনো কারণে মানুষ দাস-দাসীতে রূপান্তর হয় এবং পথভ্রষ্টতা থেকে ফিরে আসে, তখন সে তার অতীতকে  ভুলি গিয়ে ভালো মানুষ হলে তার স্বাধীনতা লাভের আবেদন মঞ্জুর করা হবে কি?

  • ইসলাম তার আবেদন মঞ্জুর করার পক্ষে অভিমত পেশ করে। ফিকহবিদগণের কেউ কেউ এই আবেদন মঞ্জুর করাকে আবশ্যক মনে করেন এবং কেউ কেউ এই আবেদন মঞ্জুর করারকে মুস্তাহাব (পছন্দনীয়) মনে করেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাসদের ব্যাপারে অনেক ওসিয়ত করেছেন। তিনি সাহাবাদের মাঝে বদরের যুদ্ধের যুদ্ধবন্দীদের বণ্টন কররা সময় বলেন,
                         “استوصوا بالأسرى خيراً”
           তোমরা যুদ্ধবন্দীদের সাথে ভালো ব্যবহার কর।
  • বর্ণিত আছে যে, ওসমান ইবন আফফান রা. কোন অপরাধ করার কারণে তাঁর গোলামের কান মলে দিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে পরবর্তীতে বললেন, “তুমি আস, আমার কানে চিমটি কাট। কিন্তু গোলাম তাতে অপারগতা প্রকাশ করল। তখন তিনি তাকে পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন। তারপর সে হালকাভাবে কানে চিমটি কাটতে শুরু করল।
    তখন তিনি তাকে বললেন, “ভাল করে চিমটি কাট। কেননা আমি কিয়ামতের দিনের শাস্তি ভোগ করতে পারব না। তখন গোলাম বলল, “হে আমার মনিব, আপনি যেই দিনকে ভয় করেন, অনুরূপভাবে আমিও তো সেই দিনকে ভয় করি।”
    **আবদুর রহমান ইবন আউফ রা. যখন তাঁর গোলামদের সাথে হাঁটতেন, তখন তাদের কেউ তাঁকে পৃথক কেউ ভাবতে পারতেন না। কেননা, তিনি তাদের সামনে চলতেন না এবং তারা যেই পোশাক পরিধান করত তিনিও সেই পোশাক পরিধান করতেন।
    **ওমর রা. একদিন মক্কার পথ অতিক্রম করতেছিলেন। তিনি গোলামদেরকে মনিবদের সাথে না খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। তখন তিনি রাগ হয়ে তাদের অভিভাবকদেরকে বললেন, এই জাতির কী হল যে, তারা তাদের খাদেমদের উপর নিজেদেরকে প্রাধান্য দেয়? তারপর তিনি খাদেমদেরকে ডাকলেন, তারা তাদের সাথেই খাওয়া-দাওয়া করল।
    **জনৈক ব্যক্তি সালমান রা. এর নিকট প্রবেশ করলে সে তাঁকে ময়দার খামির তৈরি করতে দেখল। তখন বলল, “হে আবু আবদিল্লাহ! এ কী হচ্ছে?” তিনি বললেন, আমরা খাদেমকে এক কাজে পাঠিয়েছি এবং আমরা তার উপর দু’টি কাজ এক সাথে চাপিয়ে দিতে পছন্দ করি না।
  • এমনকি ইন্তেকালের সময় রাসুল (সা.) এর শেষ কথা الصَّلاَةُ الصَّلاَةُ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ নামায ও দাসদের ব্যাপারে। তবুও কী পশ্চিমারা দেখবে না যে, ইসলামে দাসপ্রথা বিন্দুমাত্র অত্যাচারের জন্য নয়। বরং এর থেকে সুবিচার আর কোথাও পাওয়া যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page