ইলবার্ট আইন (১৮৮৩)- Ilbert Bill

ইলবার্ট আইন কী?

  • ১৮৬১ সালের সিভিল সার্ভিস অ্যাক্টের পূর্ব পর্যন্ত ব্রিটিশ ভারতের প্রশাসন সামগ্রিকভাবে শ্বেতাঙ্গদের অধীন ছিল। এই সিভিল সার্ভিস অ্যাক্টের মাধ্যমে ইন্ডিয়ান ও অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের জন্য নিম্নতর নির্বাহী কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করা হয়। ১৮৭৯ সালে আইন সংশোধন করে অধিক পরিমাণে ভারতীয়দের নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়।
    ১৮৭৩ সালে ফৌজদারি আইন অনুসারে ইউরোপীয় অপরাধীদের বিচার করার ক্ষমতা ভারতীয় বিচারকদের ছিল না। একমাত্র ইউরোপীয় বিচারকগণই ইউরোপীয়দের বিচার করতে পারতেন। ১৮৮০ সালের মধ্যে অনেক ভারতীয় বিশেষত বাংলা অধিবাসীরা নিম্নতর নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে তাদের অনেকেই জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও সেশন জজ পদে নিয়োগ পান। ব্রিটিশ ভারতের বিচারব্যবস্থায় বৈষম্য দূর করার জন্য লর্ড রিপনের পরামর্শে কাউন্সিলর ইলবার্ট একটি আইনের খসড়া তৈরি করেন। এই খসড়াটি ইলবার্ট বিল নামে পরিচিত।
    খসড়া আইনে ভারতীয় বিচারকদের ইউরোপীয় বিচারদের সমান মর্যাদা ও ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। শ্বেতাঙ্গদের বিচার করার ক্ষমতা ভারতীয় বিচারকদের দেওয়া হয়।
    এই খসড়া আইন ইউরোপীয় শাসকদের অহংকারে আঘাত করে। বিশেষত যারা দেশীয় বিচারক দ্বারা দণ্ডিত হয়েছিল তারা ক্ষুব্ধ হয়। ইউরোপীয়দের এই আন্দোলন শ্বেতাঙ্গ বিদ্রোহ (White munity) নামে খ্যাত। বিলটি প্রত্যাহারের জন্য ইংরেজ আইনজীবী মিলার ব্রানসন এর নেতৃত্বে ‘ডিফেন্স অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি সংস্থা গঠিত হয়। ভারতের বিভিন্ন স্থানে তারা শাখা স্থাপন করে ভারতীয়দের বিরুদ্ধে বিষাদগার করতে থাকে। তারা বলতে থাকে যে, ইউরোপীয়দের বিচার করার যোগ্যতা ভারতীয়দের নেই। বিলটি যেন আইনে পরিণত না হয় তার সকল প্রচেষ্টা ইংরেজরা করে।
    অন্যদিকে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারতসভা প্রতি-আন্দোলন গড়ে তোলে। ইলবার্ট বিলের সমর্থনে ভারতসভা দেশের নানা স্থানে জনসভা করে এবং সংবাদপত্রে মতামত জানাতে থাকে। সরকার শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয়দের দাবির কাছে মাথা নত করে। প্রস্তাবিত আইনের খসড়া বাতিল করা হয় না তবে এমনভাবে সংশোধন করা হয় যাতে বিলটির উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যায়। সংশোধনীতে বলা হয় ভারতীয় বিচারকরা ইউরোপীয়দের বিচার করতে হলে ইউরোপীয়দের মনোনীত জুরির সাহায্য নিতে হবে।
  • ইলবার্ট বিলের ফলাফল-

    ক. ইলবার্ট বিল আন্দোলন জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার ভিত রচনা করতে সাহায্য করে।
    খ. এই আন্দোলন থেকে ভারতীয়রা সংঘবদ্ধ আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।
    গ. এর ফলে ভারতীয় ও ইউরোপীয়দের মধ্যে জাতিবৈষম্য বৃদ্ধি পায়।
    ঘ. ইংরেজরা যে নিজেরে স্বার্থের ব্যাপারে আপোষহীন তা খুব ভালো করে বুঝা যায়।
    ঙ. ভারতীয় জাতীয়তাবাদ বিকশিত হয়।

     

  • পরবর্তী আলোচনা পড়ুন- ভারতবর্ষে কোম্পানি শাসন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart

You cannot copy content of this page

Scroll to Top