Skip to content

বাংলা ভাষার ইতিকথা- History of Bangla Language

বাংলা ভাষার জন্মকথা

  • বাংলা ভাষার ইতিকথা 

  • বাংলা ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশের সদস্য। যার উৎপত্তি প্রায় সাত হাজার বছর পূর্বে। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ সালে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশ থেকে জন্ম নেয় ‘শতম’। এর প্রায় এক হাজার বছর পর ‘শতম’ ভাষাটি ‘আর্য’ ভাষায় রূপান্তর হয়। তবে তখন পর্যন্ত উপমহাদেশে আর্যভাষার প্রচলন হয় নি। উপমহাদেশে আর্য ভাষার প্রচলন হয় আর্য জাতির আগমনের পর। 
    ইউরাল পর্বত
    ইউরাল পর্বত

    ইন্দো-ইউরোপীয় বা মূল আর্য ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী তাদের আদি বাসস্থান ইউরাল পর্বতের পাদদেশ থেকে আনুমানিক ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি সময় থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়তে আরম্ভ করে। এর ফলে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশ থেকে প্রথমে দশটি শাখার জন্ম নেয়। যথা- ইন্দো-ইরানীয়, বাল্টো স্লাভিক, আলবানীয়, আর্মেনীয়, গ্রীক, লাতিন, জার্মানিক, কেলতিক, তোখারীয় ও হিত্তীয়।
    উপমহাদেশে আর্য ভাষা চালু হওয়ার পরবর্তী ৩০০ বছরে আর্য ভাষায় ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। প্রচুর পরিমাণে সংস্কৃত ভাষার শব্দ যোগ হয়ে আর্য ভাষা ‘প্রাচীন ভারতীয় আর্য’ ভাষায় রূপান্তর হয়। আর্য জাতির পাশাপাশি ধীরে ধীরে উপমহাদেশের সাধারণ মানুষও আর্য ভাষাকে আপন করে নিতে শুরু করে। তখন আর্য ভাষা আরও কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে ‘প্রাচীন ভারতীয় আর্য কথ্য’ ভাষায় যা ‘আদিম প্রাকৃত’ নামেও পরিচিতি পায়। এরপর খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ অব্দ থেকে ৪৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে আদিম প্রাকৃতের রূপান্তর ঘটে প্রথমে ‘প্রাচীন প্রাচ্য প্রাকৃত’ ও পরবর্তীতে ‘গৌড়ি প্রাকৃত’ ভাষা দুটির উৎপত্তি হয়। এই ‘গৌড়ি প্রাকৃত’ থেকে ৪৫০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে ‘গৌড়ি অপভ্রংশ’ ভাষার জন্ম হয়।
    এই গৌড়ি অপভ্রংশ থেকেই ৯০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়।
    ভাষাবিদগণ সে সময়ের বাংলাকে নামকরণ করেছেন ‘প্রাচীন বাংলা’ নামে। এরপর ১৪০০ সালের দিকে আসে ‘মধ্য বাংলা’ যা ১৮০০ সালের দিকে ‘আধুনিক বাংলায়’ রূপান্তর হয় এবং আমরা সে ভাষায় কথা বলি।

     

  • সারা পৃথিবীর প্রায় চার হাজার ভাষাকে তাদের মূলীভূত সাদৃশ্যের ভিত্তিতে প্রধানত ১২টি ভাষাবংশে বর্গীকৃত করা হয়েছে। যথা-

    ক. ইন্দো-ইউরোপীয় বা আর্য
    খ. সেমীয়-হামীয়
    গ. বান্টু

    ঘ. ফিন্নো-উগ্রীয়
    ঙ. তুর্ক-মঙ্গল-মাঞ্চু
    চ. ককেশীয়

    ছ. দ্রাবিড়
    জ. অস্ট্রিক
    ঝ. ভোটচীনীয়

    ঞ. উত্তর-পূর্ব সীমান্তীয়
    ট. এস্কিমো
    ঠ. আমেরিকার আদিম ভাষাগুলো

  • প্রাচীন ভারতীয় আর্যের দুটি রূপ ছিল- সাহিত্যিক ও কথ্য। কথ্য রূপটির চারটি উপভাষা ছিল। প্রাচ্য, উদীচ্য, মধ্যদেশীয় ও দাক্ষিণাত্য।
    ভাষাবিজ্ঞানের বিচারে বাংলা ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাপরিবারের সদস্য। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর একটি প্রধান শাখা ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠী যারা আর্য নামে অভিহিত। ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠী কালক্রমে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে। যথা-
    ১. ইরানীয় ভাষা : ইরানীয় ভাষার দুটি প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যায়। যথা- আবেস্তীয় ও প্রাচীন পারসিক।
    ২. ভারতীয় আর্য ভাষা
    ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর অন্যতম শাখা হচ্ছে ভারতীয় আর্যভাষা।
    বৈদিকসংস্কৃতকে বলা হয় প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা। প্রাকৃত ভাষাগুলোকে বলা হয় মধ্যভারতীয় আর্যভাষা।
    ইন্দো-ইউরোপীয় মূল ভাষাটি দুটি শাখায় বিভক্ত। যথা- শতমকেন্তম। এ প্রাকৃত ভাষাগুলোর শেষ স্তরের নাম অপভ্রংশ অর্থাৎ যা খুব বিকৃত হয়ে গেছে। বিভিন্ন অপভ্রংশ থেকেই উৎপন্ন হয়েছে নানান আধুনিক ভারতীয় আর্যভাষা– বাংলা, হিন্দি, গুজরাটি, মারাঠি প্রভৃতি ভাষা। সংস্কৃত ভাষার সাথে পালির সম্পর্ক অনেকটা বোনের মতো। তবে দুটোই স্বাধীন ভাষার শাখা ছিল। ভারতীয় আর্যভাষা বিকাশের তিনটি স্তর আছে। যথা-

    ক. প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা : এই স্তরে বিভিন্ন অপভ্রংশ থেকে নব্য ভারতীয় আর্যভাষাগুলোর জন্ম হয়। প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার একটি সাহিত্যিক রূপ বৈদিক ভাষা।
    খ. মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা/ প্রাকৃত ভাষা : গৌড়ী, শৌরসেনী প্রভৃতি নামে কয়েকটি শাখা এই ভাষায় রয়েছে। এ পর্যায়ে প্রমিত কথ্য ও সাহিত্যিক ভাষারূপে সংস্কৃত ভাষার সৃষ্টি হয়েছে। মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার আদি স্তরে পালি নামক একটি মানকথাসাহিত্যিক ভাষারও উদ্ভব ঘটে। খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ অব্দের দিকে ব্যাকরণিক পাণিণির হাতেই সংস্কৃত ভাষা চূড়ান্তভাবে বিধিবদ্ধ হয়। পাণিনি রচিত গ্রন্থ ব্যাকরণ অষ্টাধ্যায়ী।

    অনুশীলন বাংলা ব্যাকরণ
    অনুশীলন বাংলা ব্যাকরণ


    গ. আধুনিক ভারতীয় আর্যভাষা :
    ভাষাবিজ্ঞানীদের মতে মাগধী প্রাকৃতের অপভ্রংশের পূর্বী শাখা থেকে অহমিয়া, ওড়িয়া ও বাংলা ভাষার জন্মলাভ করে। নব্য ভারতীয় আর্য ভাষাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল বাংলা ভাষা। বৈদিক সাহিত্যই প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার একমাত্র নিদর্শন। প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার ক্ষেত্রে দুটি ভাষারীতি লক্ষ্য করা যায়। যথা-

    ১. প্রাচীন ভারতীয় আর্য কথ্য রীতি : যে ভাষা তখনকার ভারতীয় আর্য ভাষাভাষীরা দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করত। কথ্য রীতি হিসেবে বিভিন্ন কথ্য প্রাকৃত। কথ্য প্রাকৃত থেকে মান কথ্য পালি।
    ২. প্রাচীন ভারতীয় আর্য সাহিত্যিক রীতি : বেদ গ্রন্থে যে ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে। বেদে ব্যবহৃত হওয়ায় এর নাম বৈদিক ভাষা। ছন্দোবদ্ধ বলে একে ‘ছান্দস’ বলা হয়। পাশাপাশি গড়ে ওঠে সাহিত্যিক পালি ও সাহিত্যিক প্রাকৃত। পালি ভাষায় বৌদ্ধ ধর্মীয় গ্রন্থ ত্রিপিটক লেখা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page