স্বত্ববিলোপ নীতি কী? ভারতবর্ষে স্বত্ববিলোপ নীতির প্রভাব
ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে ডালহৌসি তিনটি নীতি অনুসরণ করে। যথা- ক. যুদ্ধে জয়ের মাধ্যমে রাজ্য বিস্তার : এর মাধ্যমে ইংরেজ কোম্পানি প্রোম, দক্ষিণ বার্মা, পাঞ্জাব ও সিকিমের একাংশ দখল করে।
খ. স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করে রাজ্য বিস্তার : এই নীতি প্রয়োগ করে সাতারা (১৮৪৮), স্বম্বলপুর (১৮৪৯), ঝাঁসি, নাগপুর ইত্যাদি দখল করে। গ. কুশাসনের অজুহাতে রাজ্য দখল : এর মাধ্যমে ইংরেজরা অযোধ্যা রাজ্য দখল করে।
লর্ড ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতির উদ্ভাবক ছিলেন না। তবে তিনি এই নীতির কার্যকারিতা প্রসঙ্গে আশাবাদী হয়ে বলেছিলেন- The extinction of all native states of India is just a question of time.
১৮৩৪ সালে লন্ডনের ডাইরেক্টর সভাদত্তক প্রথা নিয়ন্ত্রণে একটি জরুরি সিদ্ধান্ত নেয় যা ডালহৌসি প্রয়োগ করেছিলেন।
স্বত্ববিলোপ নীতি-
এই নীতির মূলকথা হচ্ছে, ইংরেজদের আশ্রিত কোনো রাজা পুত্রহীন অবস্থায় মারা গেলে সেই রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা হবে এবং দত্তক পুত্রের বা কন্যার উত্তরাধিকার স্বীকার করা হবে না। ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতি ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করে রাজ্য বিস্তারে উদ্যোগী হন। এই নীতি প্রয়োগ করার আগে ডালহৌসি দেশীয় রাজ্যগুলোতিনভাগে বিভক্তকরেন এবং এসব ক্ষেত্রে বিভিন্ন নির্দেশনা দেন। যথা- ক. কোম্পানির সৃষ্ট দেশীয় রাজ্য : এই শ্রেণির রাজ্যগুলোতে দত্তক-প্রথা নিষিদ্ধ করেন।
খ. কোম্পানির অধীন করদ রাজ্য : এই শ্রেণির রাজ্যে কোম্পানির অনুমতি ছাড়া দত্তক গ্রহণ নিষিদ্ধ করেন।
গ. স্বাধীন দেশীয় রাজ্য : এই ধরনের রাজ্যগুলোতে দত্তক প্রথা বহাল রাখেন।
স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগ-
এই নীতি প্রয়োগ করে ডালহৌসি ১৮৪৮ সালে ব্রিটিশ প্রভাবাধীন সাতারা দখল করে। এরপর ১৮৫৩ সালে নাগপুরের রাজা অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে তার রাজ্যটি গ্রাস করা হয়। এক্ষেত্রে ডালহৌসির যুক্তি ছিল যে, নাগপুর রাজ্যটি ইংরেজরাই সৃষ্টি করেছিল। ঝাঁসির রাজা গঙ্গাধর রাও মারা গেলে রানির মতামত উপেক্ষা করে রাজ্যটি দখল করা হয়। এছাড়াও জৈন্তিয়া, করাচি, উদয়পুর, পাঞ্জাব, নাগপুর, রামগড়সহ বিভিন্ন এলাকা ইংরেজরা স্বত্ববিলোপ নীতির মাধ্যমে গ্রহণ করে।
ডালহৌসি অনেক ক্ষেত্রেই লন্ডনের বোর্ড অব ডিরেক্টরের পরামর্শ অমান্য করে স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগ করেছিলেন। তিনি কেবল হিন্দু রাজ্যগুলোতেই এই নীতির প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন। এই নীতির ফলে একসময় ভারতবর্ষে স্বাধীনতা আন্দোলন (সিপাহী বিদ্রোহ) দেখা দেয়।