Skip to content

বাংলাদেশের নদ-নদী ও প্রাকৃতিক সম্পদ- ৫ম অধ্যায়- বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়

    বাংলাদেশের নদ-নদী

    বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। অসংখ্য নদ-নদী উত্তরের হিমালয় ও ভারতের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে নেমে এসেছে। বর্তমানে ছোট বড় মিলিয়ে বাংলাদেশে ৭০০টি নদী আছে। এগুলোর আয়তন দৈর্ঘ্যে ২২,১৫৫ কিলোমিটার।

     

     

    নদী

    অপর নাম

    উৎপত্তিস্থল

    প্রবেশস্থল

    মিলনস্থল

    অন্যান্য তথ্যাদি

     

    পদ্মা

    ভারতের উত্তরবঙ্গে গঙ্গা নামে পরিচিত

    হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ

    রাজশাহী

    যমুনা (গোয়ালন্দ)

    মেঘনা (চাঁদপুর)

    শাখা নদী- ভাগীরথী, কপোতাক্ষ, ভৈরব, আড়িয়াল খাঁ ইত্যাদি
    পদ্মা নদী বরিশাল ও নোয়াখালী জেলা অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
    পদ্মা বিধৌত অঞ্চলের আয়তন ৩৪১৮৮ বর্গ কিলোমিটার।

    মেঘনা

    বরাক

    আসামের নাগা মণিপুরের
    দক্ষিণে লুসাই পাহাড়

    সুনামগঞ্জ

    পুরাতন ব্রহ্মপুত্র
    (ভৈরব বাজার)
    পদ্মা (চাঁদপুর)
    শাখা নদী- তিতাস, গোমতী
    (প্লাবন ও পলি মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে)
    কর্ণফুলী মিজোরামের লুসাই পাহাড় চট্টগ্রাম উপনদী- কাপ্তাই, হালদা
    দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদী। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত। এর তীরে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র অবস্থিত।
    ব্রহ্মপুত্র তিব্বতের মানস সরোবরে কুড়িগ্রাম উপনদী- ধরলা ও তিস্তা
    ১৭৮৭ সালে ভূমিকম্পের কারণে ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে যমুনা নদীর সৃষ্টি হয়।
    গোমতি ত্রিপুরা পাহাড়
    যমুনা উপনদী- করতোয়া, আত্রাই।
    শাখানদী- ধলেশ্বরী।
    সাঙ্গু উত্তর আরাকান পাহাড় বান্দরবানের থানচি
    ফেনী পার্বত্য ত্রিপুরা ফেনী
    মাতামুহুরি লামার মাইভার কক্সবাজার এর দৈর্ঘ্য ১২০ কি.মি.
    তিস্তা সিকিমের পার্বত্য অঞ্চল নীলফামারি
    ১৭৮৭ সালের প্রবল বন্যায় এটি ব্রহ্মপুত্রের পরিত্যক্ত গতিপথে প্রবাহিত হয়। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় তিস্তার গুরুত্ব সর্বাধিক। ১৯৯৮ সালে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পটি নির্মিত হয়।
    পশুর এর গভীরতা এত বেশি যে, সারা বছর সমুদ্রগামী জাহাজ এর মোহনা দিয়ে মংলা সমুদ্রবন্দরে প্রবেশ করতে পারে। খুলনা-বরিশাল নৌপথে পশুর নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
    নাফ বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের অবস্থিত। এর দৈর্ঘ্য ৫৬ কিলোমিটার।

     

    • বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর নদীর প্রভাব অপরিসীম। সেচের পানি, শিল্পে ব্যবহৃত পানি ও জলবিদ্যুৎ শক্তির উৎস এসব নদী। মৎস্য, পরিবহণ ও যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এসব নদী। জমির উর্বর শক্তি বৃদ্ধিতে এসব নদী পলি বহন করে।
    • নদ-নদী ও জনবসতির সম্পর্ক-

      সব ধরনের সভ্যতা গড়ে ওঠার পেছনে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাচীন যুগ থেকেই মানুষ নদীর তীরবর্তী সমতল ভূমিতে বসবাস শুরু করে। নদী থেকে মানুষ প্রতিনিয়ত ব্যবহার্য পানি পায়। এছাড়াও কৃষিকাজের জন্য পানির যোগান নদী থেকে দেওয়া সম্ভব। কৃষিকাজের পাশাপাশি মাছ শিকার ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। ফলে মানুষের সাথে নদীর সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য হয়ে উঠেছে। দেশের অধিকাংশ শহর, গঞ্জ বিভিন্ন নদীর তীরে গড়ে উঠেছে। বুড়িগঙ্গার তীরে ঢাকা, কর্ণফুলীর তীরে চট্টগ্রাম, শীতলক্ষ্যার তীরে নারায়ণগঞ্জ, সুরমার তীরে সিলেট ইত্যাদি লক্ষ্য করা যায়।
      শিল্প, কলকারখানা প্রতিষ্ঠাতেও নদীর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য সেচ প্রকল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নদীকে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনা জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্ণফুলী বহুমুখী প্রকল্পের কারণে ১০ লক্ষ একর জমিতে কৃষিজ ফলন হচ্ছে। কাপ্তাই বাঁধের কারণে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এই বাঁধের মাধ্যমে চট্টগ্রাম অঞ্চলকে ভয়াবহ বন্যা থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। নদী না থাকলে কৃষি-যোগাযোগ অনেকাংশে ব্যাহত হবে। তাই মানুষের জীবন ধারণের জন্য নদী বাঁচিয়ে রাখা আবশ্যক।

      বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে পানির অভাবের কারণ ও প্রতিকার-

    • বাংলাদেশের নদীসমূহে উজান থেকে প্রচুর পানি আসে। এসব পানিতে প্রচুর পলি থাকে যা নদীর তলদেশে জমাট হয়ে ভরাট যায়। ফলে নদীগুলোতে চর পড়ে। উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণাঞ্চলের এমন অসংখ্য নদী মৃত নদী বলে পরিচিতি পেয়েছে। এজন্য নদীর তলদেশ খনন করা প্রয়োজন। যদিও বাংলাদেশের নদী খনন উদ্যোগ তেমন জোরদার নয়।
    • বাংলাদেশের অনেক নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতে। ভারত অনেক নদীতে বাঁধ দেওয়ায় নদীগুলোতে মৌসুমী পানির প্রবাহ কমে গেছে। ফলে তিস্তা, কপোতাক্ষ, গঙ্গাসহ অনেক নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে পানির চরম সংকট দেখা দেয়।
    • সেচসহ নানা কাজে নদী থেকে প্রচুর পানি উত্তোলনের ফলে মূল নদীতেই পানি আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। অপরিকল্পিতভাবে নদীর উপর ব্রিজ, কালভার্ট, বাঁধ নির্মাণের ফলে অনেক নদী শুকিয়ে যাচ্ছে।নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় নদী তীরবর্তী লোকেরা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি শুকিয়ে গেলে মাছের অভাব দেখা দেয়। নদীকে কেন্দ্র করে জীবিকা অর্জনকারী লোকদের জীবনে সংকট দেখা দেয়। পরিবেশের ক্ষতি হয়।

    • নদীপথের গুরুত্ব-


      **যাতায়াত : নদীসমূহ যাত্রী পরিবহণ সেবায় বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে থাকে। নদীপথকে সবচেয়ে আরামদায়ক মনে করা হয়। নদীপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৮৩৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩৮৬৫ কিলোমিটার পথে সারা বছর নৌ চলাচল করে। দেশে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এসব পরিবহণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৫৮ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (BIWTA) গঠিত হয়েছে। জনস্বার্থে এই সংস্থা নানা ধরনের যাত্রীবাহী জলযানের ব্যবস্থা করে থাকে। নদী পথে যাতায়াত খরচ বেশ কম।

      **জলবিদ্যুৎ : নদী ও জলপ্রপাতের পানির বেগ ব্যবহার করে টার্বাইন যন্ত্রের সাহায্যে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এটি নবায়নযোগ্য শক্তি সম্পদ। পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাই নামক স্থানে কর্ণফুলী নদীর গতিপথে বাঁধ দিয়ে পাকিস্তান আমলে প্রথম জলবিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হয়। সবচেয়ে কম খরচে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। তেল, গ্যাস ও পারমাণবিক চুল্লি ব্যবহারের মাধ্যমে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় তার খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি। জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য বেশ লাভজনক। তবে যে ধরনের পাহাড়ি নদী থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, সে রকম পাহাড় ও নদী বাংলাদেশে বেশি নেই। ফলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ কম।

      **বাণিজ্য : দেশের মোট বাণিজ্যের ৭৫% অভ্যন্তরীণ নৌপথে আনা-নেওয়া করা হয়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নদীপথের বাণিজ্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়। প্রায় সব নদীপথেই লক্ষ লক্ষ টন মালামাল পরিবহণ করা হয়ে থাকে। বর্ষাকালে অধিকাংশ পণ্যই নৌপথে পরিবহণ করা হয়। তবে শুষ্ক মৌসুমে নদীর নাব্য হ্রাস পাওয়ায় কোনো কোনো নদীতে জাহাজ চলাচল সীমিত হয়ে আসছে।

     

     

    বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ

    প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত সম্পদকে প্রাকৃতিক সম্পদ বলে। মাটি, পানি, বনভূমি, সৌরতাপ, খনিজ ইত্যাদি। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত, মিয়ানমার ও নেপালের প্রাকৃতিক সম্পদ প্রায় একই রকম।

    • কৃষিজ সম্পদ : নেপাল, ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে কৃষিপ্রধান দেশ। এই অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, মাটি, নদী ইত্যাদির উপর নির্ভর করে এখানের কৃষকরা কৃষিজ সম্পদ উৎপাদন করে। কৃষি উৎপাদনে একটি সুনির্দিষ্ট মাত্রার তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের দরকার। বাংলাদেশে ধান, আলু ও পাটের উৎপাদন ব্যাপক হয়। বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে পাহাড়ে চা উৎপাদিত হয়। এসব অঞ্চলে কৃষিপণ্য উৎপাদনের পেছনে মাটির গুণাগুণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ভারত ও মিয়ানমারে তুলা, চা, মরিচ ইত্যাদির ফলন ভালো।
    • বনজ সম্পদ : জলবায়ুগত অবস্থার সাথে সাথে বনজ সম্পদের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে সারা বছর প্রচুর বৃষ্টি হয় বলে সেখানে নিবিড় ও বড় বড় অরণ্য গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, ভারতের পূর্বাঞ্চল ও মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে চিরহরিৎ অরণ্য সৃষ্টি হয়েছে।
    • মৎস্য সম্পদ : নদী নালা, খাল বিল ভরপুর থাকায় বাংলাদেশ মৎস্য সম্পদে পূর্ণ একটি দেশ। বঙ্গোপসাগরে মাছের ভান্ডার আছে। মিয়ানমার ও ভারতেও প্রচুর মাছ পাওয়া যায়।
    • খনিজ সম্পদ : বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি জেলাসমূহের মাটির নিচে গ্যাস, কয়লা, তেল, চুনাপাথরসহ নানা ধরনের মূল্যবান খনিজ পদার্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব সম্পদ আহরণ করে দেশের গ্যাসের চাহিদা মিটানো হচ্ছে। মিয়ানমার খনিজ সম্পদে বেশ অগ্রসর অবস্থানে আছে। তুলনামূলকভাবে নেপাল পিছিয়ে আছে।
    • সৌরশক্তি : নিরক্ষীয় নিম্ন অক্ষাংশ অঞ্চলে সূর্য প্রায় সারা বছর লম্বভাবে কিরণ দেয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সহজে প্রচুর সৌরশক্তি পেয়ে থাকে। এসব অঞ্চলে তাপমাত্রা কখনো হিমাঙ্কের নিচে থাকে না। ইউরোপের অনেক দেশ তেমন সূর্যের আলো পায় না। সূর্য সেখানে বাঁকা করে আলো দেয়। সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি।

    পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার ধারণা

    জীবজগতের অস্তিত্বের জন্য পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি ও শিল্পের বিকাশে পানির ব্যবহার অপরিহার্য। বৃষ্টি থেকে পর্যাপ্ত পানি পাওয়া গেলেও শীত ও গ্রীষ্মকালে পানির অভাবে কৃষি ও শিল্প সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। যে কারণে সারাবছর পানির প্রাপ্তি, প্রবাহ ও বণ্টন নিশ্চিত রাখতে পানির পরিকল্পিত প্রাপ্যতা ও ব্যবহারকে পানি ব্যবস্থাপনা বলে। পানি ব্যবস্থাপনার জন্য যে উদ্যোগগুলো নেওয়া যেতে পারে-
    ক. পরিবেশ সংরক্ষণ
    খ. পানির সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা
    গ. নদ নদীর নাব্য সংকট দূর করা : দেশের নদীগুলো পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা কবলিত হয়ে পানি দূষিত হয়। এসব থেকে পরিত্রাণের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পিত বাঁধ দিতে হবে। অনেক নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় নদী খনন জরুরি।
    ঘ. সংযোগ খাল ও রিজার্ভার খনন করা
    ঙ. লবণাক্ততা দূর করা
    চ. নদীভাঙন রোধ করা
    ছ. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার

    বাংলাদেশের বনভূমির শ্রেণিবিভাগ

    বৃক্ষরাজি যে ভূমিতে সমারোহ ঘটায় তাকে বনভূমি বলে। এসব বনে কাঠ, মধু, মোম ইত্যাদি বনজ সম্পদ পাওয়া যায়। একটি দেশের মোট আয়তনের ২০-২৫% বনভূমি থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে পর্যাপ্ত বনভূমি নেই। বাংলাদেশে ১৩% বনভূমি আছে। মানুষের ঘর বাড়ি ও আসবাবপত্র তৈরির জন্য কাঠের প্রয়োজন। এই কাঠ সংগ্রহ করার উপলক্ষ্যে ক্রমেই বনভূমি কমে যাচ্ছে।

    • জলবায়ু ও মাটির ভিন্নতার কারণে একেক অঞ্চলে একেক ধরনের বনের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের বনভূমিকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- চট্টগ্রামের বনাঞ্চল, সিলেটের বন, সুন্দরবন ও ঢাকা- টাঙ্গাইল অঞ্চলের বনভূমি। উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য অনুসারেও বনাঞ্চলের শ্রেণিবিভাগ করা যায়। যথা-
      ১. ক্রান্তীয় চিরহরিৎ ও পত্র পতনশীলন বনভূমি : বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব অংশের পাহাড়ি অঞ্চলে এমন বনভূমি দেখা যায়। মূলত উষ্ণ ও আর্দ্রভূমির কিছু এলাকা জুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা, তরুলতা ও গুল্ম জন্ম নেয়। এসব গাছের পাতা একত্রে ফোটেও না, ঝরেও না। ফলে সারা বছর বনগুলো সবুজ থাকে। যে কারণে এসব বনভূমিকে চিরহরিৎ বনভূমি বলা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে এমন বনভূমি দেখা যায়। এ বনভূমি পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার বর্গ কি. মি.। ময়না, মেহগনি, জারুল, গর্জন এ বনভূমির উল্লেখযোগ্য গাছ। সিলেটের পাহাড়ে প্রচুর বাঁশ জন্মে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটে রাবার চাষ হয়।
      ২. ক্রান্তীয় পাতাঝরা বা পত্র পতনশীল বনভূমি : ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর অঞ্চলে এই বনভূমি দেখা যায়। এ ধরনের বনভূমিতে শীতকালে গাছের পাতা সম্পূর্ণ রূপে ঝরে যায়। শাল ও গজারি ছাড়াও এই অঞ্চলে কড়ই, বহেড়া, কাঁঠাল, নিম ইত্যাদি গাছ জন্মে। শালগাছ এই বনের প্রধান বৃক্ষ বলে একে শালবনও বলা হয়। ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও গাজীপুরে এ বনভূমি মধুপুর ভাওয়াল বনভূমি নামে পরিচিত। দিনাজপুরে এটি বরেন্দ্র বনভূমি নামে পরিচিত।
      ৩. স্রোতজ (ম্যানগ্রোভ) বা গরান বনভূমি : খুলনা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলার উপকূলে জোয়ার ভাটার লোনা ও ভেজা মাটিতে যেসব উদ্ভিদ জন্মায় তাদের স্রোতজ বা গরান বনভূমি বলা হয়। প্রধানত সুন্দরবনে এসব উদ্ভিদ বেশি জন্মে। সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, ধুন্দল, গোলপাতা ইত্যাদি বৃক্ষ এ বনভূমির অন্তর্গত। বাংলাদেশে মোট ৪১৯২ বর্গ কিলোমিটার স্রোতজ বনভূমি আছে।বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে প্রাকৃতিক সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই এসব সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও সংরক্ষণ আবশ্যক।
    • আরও পড়ুন- বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি

     

     

     

     

     

    Leave a Reply

    You cannot copy content of this page