বাংলাদেশের সংবিধান; ইতিহাস ও অজানা তথ্যাদি- ১ম অংশ

বাংলাদেশের সংবিধানের অজানা ইতিহাস

বাংলাদেশের সংবিধান
বাংলাদেশের সংবিধান
  • সংবিধান কী?

  • সংবিধান : মানবকল্যাণের নিমিত্তে প্রতিষ্ঠিত সর্বোত্তম ব্যবস্থা হল রাষ্ট্র। আধুনিক রাষ্ট্র আয়তন ও জনসংখ্যায় বৃহৎ যা পরিচালনা অত্যন্ত জটিল। তাই এটি বিভিন্ন নিয়ম-কানুনের সাহায্যে পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রে একটি শাসকগোষ্ঠী থাকে যা সরকার নামে পরিচিত। সাধারণত সরকার বলতে শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগকে বোঝায়। সরকারের এই বিভাগগুলোর মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন কীভাবে হবে, কীভাবে সরকারি কাজ পরিচালিত হবে ইত্যাদি সম্পর্কিত নিয়ম-কানুনই সংবিধান।
  • রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রতিটি দেশের কিছু বিধিবিধান থাকে যাকে রাষ্ট্রের সংবিধান বা শাসনতন্ত্র বলা হয়। সংবিধান হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন। অ্যারিস্টটলের মতে “সংবিধান হল রাষ্ট্রের সেই জীবনধারা যা রাষ্ট্র নিজেই বেছে নিয়েছে।”
  • বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নাম : People’s Republic of Bangladesh.
    বাংলাদেশের সংবিধানের ইংরেজি পাঠ : The Constitution of the People’s Republic of Bangladesh.
  • সংবিধানের প্রধান কাজ রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের {শাসন-আইন-বিচার বিভাগ} মধ্যে ক্ষমতার সুষ্পষ্ট বণ্টন। 
  • ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি-

  • ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি : প্রতিটি রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ- আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ- আছে। সরকারের এই তিন ধরনের ক্ষমতা কোনো এক বিভাগের হাতে থাকা ঠিক নয়। তাতে সরকার স্বেচ্ছাচারী হতে পারে। তাই প্রতিটি বিভাগ আলাদা লোক দ্বারা আলাদাভাবে সংগঠিত হওয়া প্রয়োজন। এই ব্যবস্থাকে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলে।
    ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বলতে বুঝায় রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন, শাসন ও বিচার বিচার ক্ষমতা পৃথক ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টির হাতে অর্পণ করা যাতে এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করতে না পারে। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রবক্তা ফরাসি দার্শনিক Montesquieu. 

    বাংলাদেশে চূড়ান্ত ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ হয় নি। সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার ফলে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ শাসন সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন কাজে নেতৃত্ব দেন। এদিকে মন্ত্রিরা আইন পরিষদের আস্থা সাপেক্ষে স্বপদে বহাল থাকেন এবং আস্থা হারালে মন্ত্রিসভার পতন ঘটে। রাষ্ট্রপতি সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিদের নিয়োগ দেন। আবার বিচারপতিরা সংবিধানের ব্যাখ্যা করেন।
  • বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে গৃহীত হয় এবং ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেন্বর থেকে কার্যকর হয়।
  • ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র আদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিচালনার জন্য অস্থায়ী বিধান প্রণয়ণ করা হয়।
  • সংবিধানের ব্যাখ্যাকারক ও অভিভাবক : সুপ্রিম কোর্ট।
    বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংবিধান ভারতের। বড় দেশগুলোর সবচেয়ে ছোট সংবিধান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। বিশ্বের সবচেয়ে ছোট সংবিধান মোনাকোর।

 

সংবিধানের প্রকার

  • সংবিধানকে প্রথমত দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
    ১. লিখিত : যে সংবিধানের ধারা বা নিয়মাবলি কোনো দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে, তাকে লিখিত সংবিধান বলে। যেমন- বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি।
    ২. অলিখিত : যে সংবিধানের ধারা বা নিয়মাবলি কোনো দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে না বরং প্রথা বা সংস্কৃতি অনুসারে চলে আসছে, তাকে অলিখিত সংবিধান বলে। যেমন : United Kingdom, Saudi Arab, New Zealand, Israel & Canada.
  • সংশোধন পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে সংবিধান দুই প্রকার। যথা-
    ১. সুপরিবর্তনীয় : এ ধরনের সংবিধান পরিবর্তনের জন্য কোনো জটিল ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হয় না বরং সাধারণ আইনের মত খুব সহজেই পরিবর্তন করা যায়।
    ২. দুষ্পরিবর্তনীয় : এ ধরনের সংবিধান পরিবর্তনের জন্য বেশ জটিল ও বিশেষ প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়।
  • বাংলাদেশের সংবিধান লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয়।
  • সবচেয়ে বেশি সংশোধন হয়েছে : ভারতের সংবিধান।
  • গণপরিষদ : যে প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠান জনসাধারণের হয়ে একটি দেশের সংবিধান রচনা করে তাকে সংবিধান সভা বা গণপরিষদ বলে।

    স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র
    স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র
  • বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়েনর ইতিহাস সম্পর্কে জানার জন্য তিনটি বিষয়ে জানা জরুরি। যথা-
    ক. মুজিবনগর সরকার
    খ. গণপরিষদ
    গ. খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি

    রেহমান সোবহান
     রেহমান সোবহান
  • মুজিবনগর সরকার

  • মুজিবনগর সরকার : পাকিস্তানের গণহত্যা থেকে বাঁচতে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, গণপরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যগণ নিরাপত্তার জন্য ভারতে আশ্রয় নেন। ৩০ মার্চের মধ্যেই তাদের অনেকে কলকাতায় সমবেত হন। প্রাদেশিক পরিষদের যে সকল সদস্য ১০ এপ্রিলের মধ্যে কলকাতায় পৌছতে সক্ষম হন তাদের নিয়ে তাজউদ্দীন আহমদ মুজিবনগর সরকার মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন। তাঁর নির্দেশেই অধ্যাপক রেহমান সোবহান আরও কয়েকজনের সাহায্য নিয়ে স্বাধীন
    ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম
    ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম

    তার ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া প্রণয়ন করেন। এরপর ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম এই ঘোষণাপত্রের আইনগত দিকগুলো সংশোধন করে একে পূর্ণতা দেন। এক্ষেত্রে তিনি কলকাতার বিখ্যাত আইনজীবী সুব্রত রায় চৌধুরীর সাথে পরামর্শ করেছিলেন। ঘোষণাপত্রটি প্রথমে ১০ এপ্রিল মুজিবনগর থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করা হয়। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি বাংলাদেশের প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান। এরপর ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলায় (বর্তমান মুজিবনগর) এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে মুজিবনগর সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে গণপরিষদের সদস্য অধ্যাপক এম ইউসুফ আলী আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। ঘোষণাপত্রটি ২৩ মে, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়েছিল।

  • বাংলাদেশ গণপরিষদের প্রধান কাজ ছিল দুটি। যথা-
    ১. স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রণয়ন ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করা
    ২. সংবিধান প্রণয়ন
  • ২২ ডিসেম্বর, ১৯৭১ : অস্থায়ী সরকার কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করে।
  • ১১ জানুয়ারি, ১৯৭২ : রাষ্ট্রপতি হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান ‘বাংলাদেশের অস্থায়ী সংবিধান আদেশ’ (Provisional Constitution Order of Bangladesh) জারি করেন। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান।
  • ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে আসেন। তিনি তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তাঁকে রাষ্ট্রপতি করেই মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়েছিল। ১১ জানুয়ারি তাজউদ্দীন আহমদের বাসভবনে বঙ্গবন্ধুর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকেই হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান সাময়িক সাংবিধানিক নির্দেশ জারি করেন। সে নির্দেশ অনুযায়ী দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। নির্দেশে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রিসভা গঠন করবেন। মন্ত্রিসভার হাতেই সব ক্ষমতা থাকবে এবং রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক প্রধান হবেন। ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের নিয়ে গণপরিষদ গঠিত হবে। এই গণপরিষদই সংবিধান রচনা করবে। 

    মন্ত্রিদের শপথ
    মন্ত্রিদের শপথ
  • ১২ জানুয়ারি বিকেলে বঙ্গভবনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তাঁর সাথে ১১ জন মন্ত্রী শপথবাক্য পাঠ করেন। নতুন রাষ্ট্রপতি হন বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী। নতুন রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করান তৎকালীন প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম।
  • ২২ মার্চ, ১৯৭২ : রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি করেন। এটি ২৩ মার্চ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
  • MCA : Member of Constituent Assembly. জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের বলা হয়।
    MNA : Member of National Assembly. জাতীয় পরিষদের সদস্যদের বলা হয়।
    MPA : Member of Provincial Assembly. প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের বলা হয়।
  • গণপরিষদের সদস্যপদের জন্য অযোগ্য-

    ১. সরকারি লাভজনক পদে থাকা [আব্দুস সুলতান (এন.ই-৮৪) তিনি একটি দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন]
    ২. ৫ জন নির্ধারিত সময়ে শপথ গ্রহণে ব্যর্থ হন (আব্দুর রহমান, এ মতিন, মোশাররফ হোসেন, আহমেদ সগির ও অং শু প্রু চৌধুরী)।
    ৩. ২ জন বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন (নুরুল আমিন, রাজা ত্রিবিদ রায়)
    ৪. ৪৩ জন সদস্য রাজনৈতিক দল থেকে বহিষ্কৃত হয়।
    ৫. ৯ জন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বা এর পূর্বে মারা যান।
    ৬. গণপরিষদের প্রথম ও শেষ বৈঠকের মধ্যে ম্পিকার শাহ আব্দুল হামিদসহ ৪ জন মারা যান।
    ৭. ২ জন গণপরিষদ সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেন। (এস. এম. আলাউদ্দিন ও মাহমুদুল হাসান)
    উপর্যুক্ত কারণে সংবিধান স্বাক্ষরের সময় ৪৬৯টি আসনের মধ্যে ৬৬টি আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়। ফলে চূড়ান্ত সংবিধান স্বাক্ষরের সময় গণপরিষদে ৪০৩ জন সদস্য ছিলেন। ৪০৩ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সদস্য ৪০০ জন, ন্যাপ ১ জন ও ২ জন স্বতন্ত্র সদস্য ছিলেন।

  • ১০ এপ্রিল, ১৯৭২ : গণপরিষদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ১০-১১ এপ্রিল, ১৯৭২ অনুষ্ঠিত অধিবেশনে গণপরিষদে প্রথম স্পিকার শাহ আব্দুল হামিদ ও ডেপুটি স্পিকার মুহাম্মদ উল্লাহ।
    একই বছর ১লা মে শাহ আব্দুল হামিদ মারা গেলে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার হন যথাক্রমে মুহাম্মদ উল্লাহ ও মোহাম্মদ বায়তুল্লাহ।

    বেগম রাজিয়া বানু
    বেগম রাজিয়া বানু

    ১১ এপ্রিল তৎকালীন আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন পরিষদের সামনে সকল প্রস্তাব উত্থাপন করেন। খসড়া সংবিধান সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করেন যোগাযোগ মন্ত্রী মনসুর আলী।
    খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির একমাত্র মহিলা সদস্য ছিলেন শেরে বাংলা এ. কে ফজলুল হকের নাতিন বেগম রাজিয়া বানু।
    বিরোধীদলীয় সদস্য ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

    সংবিধানের বৈঠক
    সংবিধানের বৈঠক

    সংবিধানের ইতিহাস
    সংবিধানের ইতিহাস
  • ১৭ এপ্রিল, ১৯৭২ : খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ১৭-২৯ এপ্রিল পর্যন্ত কমিটি একটানা বৈঠক করে। সংবিধানের খসড়া আইনি ভাষা ও কারিগরি বিভিন্ন দিক পরীক্ষার জন্য কমিটি জন আই গাথরিকে ঢাকায় আনে। তিনি লন্ডনে একটি ল ফার্মে কাজ করতেন।
  • সংবিধানের ভাষাগত অবস্থান ও ব্যাকরণিক ত্রুটি নিরীক্ষার জন্য সৈয়দ আলী আহসান, ড. মযহারুল ইসলামআনিসুজ্জামানের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। আনিসুজ্জামান ছিলেন উক্ত কমিটির কনভেনর।
  • ১১ অক্টোবর, ১৯৭২ : কমিটির শেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অধিকাংশ বিষয়ে কমিটি ঐকমত্যে পৌঁছে। তবে কিছু কিছু বিষয়ে ৬ জন সদস্য সংখ্যাগরিষ্ঠের সাথে একমত পোষণ না করে তারা এই আপত্তিসমূহ (Note of Dissents) কমিটির রিপোর্টে পৃথকভাবে লিখেন।
  • কমিটির যে ৬ জন সদস্য আপত্তিপত্র দেন : ক্ষিতিশচন্দ্র মন্ডল, আসাদুজ্জামান খান, মোশাররফ হোসেন আকন্দ, আব্দুল মুনতাকিম চৌধুরী, হাবিবুর রহমান ও সুনঞ্জিত সেনগুপ্ত।
  • ১২ অক্টোবর, ১৯৭২ : গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। ড. কামাল হোসেন ১৫৩টি অনুচ্ছেদ সম্বলিত ৭২ পৃষ্ঠার খসড়া সংবিধানটি বিল আকারে গণপরিষদে পেশ করেন।
  • ৪ নভেম্বর, ১৯৭২ : প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় সদস্যদের বক্তৃতার পর বেলা ১.১০ মিনিটে সংবিধান গণপরিষদে গৃহীত হয়।
  • ৪ নভেম্বর, ৭২ : সংবিধানের বাংলা ও ইংরেজি একটি পাঠ স্পিকার মুহাম্মদ উল্লাহ কর্তৃক নির্ভরযোগ্য বলে সার্টিফিকেট প্রদানের পর জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
  • ১৪ ডিসেম্বর, ৭২ : সংবিধান স্পিকার কর্তৃক প্রমাণীকৃত হয়।
  • ১৫ ডিসেম্বর, ৭২ : গণপরিষদের সদস্যরা সংবিধানে স্বাক্ষর প্রদান করেন। সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এতে স্বাক্ষর করেন। মোট ৩৯৯ জন গণপরিষদ সদস্য এতে স্বাক্ষর করেন। শাসনতন্ত্র দেওয়ার সাথে সাথে গণপরিষদ সদস্যরা নিজেদের বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। মার্চ মাসে নির্বাচনের কথা বলা হয়
  • ৩৯৯ জন সংবিধানে স্বাক্ষর করেছেন। চারজন স্বাক্ষর করেন নি। যথা-

    ক. মোহাম্মদ আজিজার রহমান (রংপুর)
    খ. ন্যাপ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত (সিলেট) (বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা সাংবিধানিক করার ইস্যুতে বিতর্ক থাকায়)
    গ. মোহাম্মদ ইব্রাহীম 
    ঘ. স্বতন্ত্র প্রার্থী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (পার্বত্য চট্টগ্রাম) (উপজাতি ইস্যুতে বিতর্ক থাকায়)
    [সূত্র : ৪ নভেম্বর, ২০২০- দৈনিক ইত্তেফাক]

  • স্বাক্ষর নিয়ে মতানৈক্য-

  • ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠানের শেষ সময় পর্যন্ত ৪ জন মাননীয় সদস্য সংবিধানে স্বাক্ষর করেন নি। স্পিকার অনুপস্থিত সদস্যদের স্বাক্ষরদানের জন্য ‘শেষবারের মত’ নাম ধরে আহ্বান জানালে বঙ্গবন্ধু স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আর যদি কেউ দস্তখত করার জন্য আসতে না পেরে থাকেন, তাতে কিছু আসে যায় না। আপনি পরেও তাঁদের দস্তখত নিতে পারেন।”… সেজন্য ‘শেষবারের মতো’ বললে কিছুটা অসুবিধা হয়। সেটা আপনার রুলিং হয়ে যায়।…পরবর্তীতে স্পিকার বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে রুলিং প্রত্যাহার করেন। 

    আবদুর রউফ
    এ কে এম আবদুর রউফ
  • প্রজাতন্ত্র দিবস : বিশ্বের বহু দেশে স্বাধীনতা দিবস ও সংবিধান প্রবর্তন দিবস ছাড়াও ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ নামে একটি জাতীয় দিবস পালন করা হয়। যেমন- ইরাক রাজতন্ত্র থেকে প্রজাতন্ত্রে রূপলাভের দিন (১৪ জুলাই), ইরান ইসলামি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হওয়ার দিন (১লা এপ্রিল), নেপাল ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ রাষ্ট্রে রূপান্তরের দিন (২৮ মে) প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করে। ভারত-পাকিস্তান অবশ্য সংবিধান গৃহীত হওয়ার দিনকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ পালন করে। তবে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করে না।
  • ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হয়। গণপরিষদের সর্বমোট ২১টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধানের হস্তলিপির কাজ করেন এ কে এম আব্দুর রউফ। হাতে লেখা প্রথম সংবিধানের পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ১০৯। সংবিধানের অঙ্গসজ্জা করেন জয়নুল আবেদিন। 
    জয়নুল আবেদিন
    শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন

     

  • আরও পড়ুন- পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতা

6 thoughts on “বাংলাদেশের সংবিধান; ইতিহাস ও অজানা তথ্যাদি- ১ম অংশ”

  1. সহজ সাবলীল ভাষায় লেখা , অসম্ভব সুন্দর লাগতেছে ব্লগ গুলা , ধন্যবাদ স্যার ?

  2. Sir apnar kotha shunar por mone hoi duniyar 1% bishoyeo gan nai amr. But jebabei hoq apner voigulo porar maddome inshallah dabi amr hobe!!!!!!God bless you and also God bless me…THANK YOU DEAR SIR..

  3. স্যার প্রথমেই আপনার জন্য দোয়া ও আগামীদিনের জন্য শুভ কামনা।২/৩ বার পড়লেই সহজেই বুঝে আসে। স্টেপ বাই স্টেপ প্রতিটি কাহিনি সাজানো আমি অনেক উপকৃত হয়েছি।আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘ হায়াত দিক।

    1. ইনশাল্লাহ, আমাদের বইতে এগুলো আরও সুন্দরভাবে তুলে ধরা হবে। বইটি সংগ্রহে রাখার অনুরোধ রইল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart

You cannot copy content of this page

Scroll to Top