বাংলা প্রবাদ প্রবচন
প্রবাদ প্রবচন বাংলার অন্যতম সম্পদ। বাক্যের বিভিন্ন ভঙ্গি প্রকাশে শব্দ অনন্য গুরুত্ব বহন করে। পরীক্ষায় আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রবাদগুলো এখানে তুলে ধরা হয়েছে।
- অর্চনের ধন চর্বণে খায়/ পাপের ধন প্রায়শ্চিত্তে যায় (অসৎ উপায়ে অর্জিত অর্থ অপব্যয়ে নষ্ট হয়)অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ (অসৎ মতলব লুকানোর জন্য ভক্তির আতিশয্য)
অতি লোভে তাঁতি নষ্ট (বেশি লোভ করার আশায় সবকিছু হারানো)
অজার যুদ্ধে আঁটুনি সার (আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন অনুসারে কাজ না হওয়া)
অন্ধের হাতি দেখা (কোনো বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা না নিয়ে কেবল অংশবিশেষ পর্যালোচনা)
অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট (অতিরিক্ত পাণ্ডিত্যের কারণে কাজ নষ্ট)
অকেজো বউ লাউ কুটতে দড় (কঠিন কাজ ফেলে সহজ কাজ করতে প্রবৃত্ত হওয়া)
অনভ্যাসের ফোঁটা কপাল চড়চড় করে (অনভ্যস্ত কাজে কষ্ট হওয়া)
অতি মন্থনে বিষ ওঠে (কোনো বিষয়ে মাত্রারিক্ত আলোচনা ক্ষতির কারণ হয়)
অতি আশা বাঘের বাসা (অতিরিক্ত আশায় বিপদগ্রস্ত হওয়া)
অতি দানে বলির পাতালে হলো ঠাঁই (ন্যায়পরায়ণ লোক অন্যের কৌশলে ভোগান্তিতে পড়ে)
অনভ্যাসে বিদ্যা হ্রাস পায় (চর্চাহীন থাকলে অর্জিত জ্ঞানও হ্রাস পায়)
অতি দর্পে হত লংকা/ অতি বাড় বেড়ো নাকো ঝড়ে পড়ে যাবে (অহংকারের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে পতন অবশ্যম্ভাবী)
অশ্বত্থামা হত ইতি গজ (পরিষ্কার করে কোনো কথা না বলা)
আঙুল ফুলে কলাগাছ (সামান্য অবস্থা থেকে হঠাৎ বড়লোক হওয়া)
আটে-পিঠে দড় তো ঘোড়ার পিঠে চড় (যোগ্যতা অর্জন করেই কাজে নামা উচিত)
আপন কথাই পাঁচকাহন (কেবল নিজের প্রসঙ্গ ও প্রশংসা)
আঠার মাসে বছর (দীর্ঘসূত্রিতা/কুঁড়ে স্বভাব)
আমড়া গাছে আম হয় না (মন্দ লোক থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না)
আপন ভালো তো জগৎ ভালো (নিজে ভাল হলে সব ভালো)
আপন হাত জগন্নাথ পরের হাত এটো পাত (নিজের জিনিসকে ভালো মনে করা)
আদার ব্যাপারির জাহাজের খবর (সামান্য কাজের লোক)
আপন চেয়ে পর ভালো (অপ্রত্যাশিত কারো সাহায্য লাভ)
আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া (দুর্লভবস্তু নাগালের মধ্যে পাওয়া)
আকাশ থেকে পড়া (অপ্রত্যাশিত) - আপনা শুতে ঠাঁই নেই, শঙ্করাকে ডাকে (নিজে অন্যের দয়ায় চলে আবার অন্যকে সাহায্য করে)
আঙ্গুল ঘুরিয়ে পাঁচিল দেওয়া/ আড়াই আঙ্গুল দড়ি, সৃষ্টি জুড়ে বেড়ি (ক্ষুদ্র চেষ্টায় বৃহৎ কর্ম করা)
আড়াই কড়ার কাসুন্দি হাজার কাকের গোল (যোগানের তুলনায় দাবিদার বেশি)
আপনার নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ (নিজের ক্ষতি করে হলেও অপরের অনিষ্ট করা)
আদরে ভোজন, কী করে ব্যঞ্জন (প্রীতিতেই পেট ভরে)
আপন কোটে পাই, চিঁড়ে কুটে খাই (অধীন ব্যক্তিকে দিয়ে যা ইচ্ছা তা করা যায়)
আদাজল খেয়ে নামা (দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ করা)
আসলে মুষল নাই, ঢেঁকি ঘরে চাঁদোয়া (উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের অভাব)
আঙ্গুলের আঙ্গুল (অতিরিক্ত)
ইল্লত যায় না ধুলে, স্বভাব যায় না মলে (যার যা স্বভাব তা সে কিছুতেই ছাড়তে পারে না)
ইঁদুরে চেনে না ভাগবত পুঁথি (মূর্খ ব্যক্তি মানীর মান বোঝে না)
উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে (একের দোষ অন্যের ঘাড়ে দেওয়া)
উঠন্তি মূল পত্তনেই চেনা যায় (ভবিষ্যতের আভাস শুরুতেই মেলে)
উড়ে এসে জুড়ে বসা (ন্যায়সঙ্গত কোন দাবি করা)
ঊনো বর্ষায় দুনো শীত (অল্প কাজে অধিক লাভ)
উড়ো খৈ গোবিন্দায় নমঃ/ উচোট খেয়ে প্রণাম (প্রতিকূল অবস্থায় বাধ্য হয়ে কোনো সৎকার্য করা)
ঊনো ভাতে দুনো বল (অল্প আহার স্বাস্থ্যসম্মত) - উলুবনে সাঁতার দেওয়া (নির্বুদ্ধিতার কাজ করা)
এক হাতে তালি বাজে না (সব দ্বন্দ্বেই দুপক্ষের দায় থাকে)
ওস্তাদের মার শেষরাতে (যথার্থ ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত সফল হয়)
ওঝার ব্যাটা বনগরু (জ্ঞানীর ছেলে মূর্খ)
এক ক্ষুরে মাথা কামানো (একই স্বভাবের দোষে দোষী)
এক মাঘে শীত যায় না (বিপদ একবারই আসে না)
এঁটো খায় মিঠার লোভে, যদি এঁটো মিঠা লাগে (লাভ না থাকলে লোকে নীচ কর্ম করে না)
এক আঁচড়ে চেনা যায় (সামান্য চিহ্নেই ব্যক্তি বস্তুর গুণাগুণ বুঝতে পারা)
এক গাছের ছাল অন্য গাছে জোড়া লাগে না (পর কখনো আপন হয় না)
এক পা জলে এক পা স্থলে (কিংকর্তব্যবিমূঢ়)
এক যাত্রায় পৃথক ফল (একই কাজে দুজনের ভিন্ন ফল)
এক রত্তি দড়ি, সকল ঘর বেড়ি (বস্তু সামান্য হলেও কার্যকর)
ওঝার ঘাড়ে বোঝা (যে বিপদের প্রতিকার করে সেই বিপদে পড়ে)
ঔষধার্থে সুরাপান (বিশেষ বিপদে পড়ে অবৈধ কাজ করা)
কত ধানে কত চাল (পরিণাম)
কাঁচা বাঁশে ঘুণ ধরা (অল্প বয়সেই স্বভাব নষ্ট হওয়া)
কাকের মাংস কাকে খায় না (স্বজাতির প্রতি অনুরাগ)
কানে দিয়েছি তুলো, পিঠে বেধেছি কুলো (নিজেকে সংশ্লিষ্ট না করা)
কিল খেয়ে কিল হজম (প্রতিশোধ না নিয়ে অপমান সহ্য করা)
কথায় চিড়ে ভিজে না (বাকচাতুরিতে সব কাজ হাসিল হয় না)
লোম বাছতে গাঁ উজাড় (সেখানে সকলে মন্দ সেখানে মন্দ লোক বাছা চলে না)
কামারের কাছে ছুঁচ বেঁচতে আসা (চতুর লোকের সাথে চালাকি করতে যাওয়া)
কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন (অযোগ্যের বিপরীত নামকরণ)
কালি কলম মন, লেখে তিনজন (মনোযোগ ছাড়া কোনো কাজ হয় না)
কাজের বেলায় কাজি, কাজ ফুরালে পাজি (প্রয়োজনে প্রশংসা করা, অপ্রয়োজনে দুর্নাম রটানো)
কাপড় হলে পচা, আঙ্গুল হয় খোঁচা (অদৃষ্টে অনিষ্ট থাকলে মিত্রও শত্রুতে পরিণত হয়)
কাঙালের কথা বাসি হলে ফলে (নগণ্য লোকের কথাও শেষ পর্যন্ত ফলতে পারে)
ক্ষেতের চাষে দুঃখ নাশে (চাষের কাজে দুঃখ দূর হয়)
ক্ষেপই হারে, জনম হারে না (মানুষ একবারই ঠকে, সারাজীবন ঠকে না) - খোদার মার দুনিয়ার বার (প্রাকৃতিক কারণে যা ঘটে তা রোধ করার শক্তি মানুষের নাই)
খুঁটির জোরে ভেড়া নাচে (শক্তিমানের সাহায্যে দুর্বল শক্তির দাপট দেখায়)
খাঁচায় পুরে খোঁচা মারে (দুর্বল করে অত্যাচার করে)
খাট ভাঙ্গলে ভূমিশয্যা (অবস্থার সাথে খাপ খাওয়ানো)
খুঁটি না থাকলে ঘর আপনা পড়ে (সহায় না থাকলে সংসারে উন্নতি হয় না)
খালি কলসি বাজে বেশি (অন্তঃসারশূন্য)
খিদে পেলে বাঘেও ধান খায় (প্রয়োজনে মানুষ যেকোনো কাজ করতে বাধ্য হয়)
খোশ খবরের ঝুটাও ভালো (সুসংবাদ মিথ্যে হলেও শুনতে ভালো লাগে)
গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না (নিজের দেশে গুণীর কদর নাই)
গঙ্গাজলে গঙ্গা পূজা (যার জিনিস তাকেই দান করা)
গজ কচ্ছপের লড়াই (দুই প্রবল প্রতিপক্ষের মধ্যে দীর্ঘকালীন লড়াই)
গতস্য শোচনা নাস্তি (বিগত বিষয় নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই)
গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল (গ্রামবাসী না মানলেও নিজেকে কর্তা বলে জাহির করা)
গরু মেরে জুতা দান (নিদারুণ অপমান করে পরে সামান্য উপায়ে তুষ্ট করার চেষ্টা)
গাছে তুলে মই কেড়ে নেওয়া (সাহায্যের আশা দিয়ে সাহায্য না করা)
গাছে না উঠতেই এক কাঁদি (কাজ শুরু করার আগেই ফলপ্রাপ্তি)
গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল (ভবিষ্যতের অতিরিক্ত আশা)
গোদের ওপর বিষফোঁড়া/ জ্বালা দিতে নাই ঠাঁই, জ্বালা দেয় সতীনের ভাই (ঝামেলার ওপর আরও ঝামেলা)
গোনা গরু বাঘে ধরে না (সাবধানের মার নেই)
ঘুঘু দেখেছ ফাঁদ দেখ নি (মন্দ লোককে জব্দ করা)
ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায় (বিপদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে অল্পতেই শঙ্কিত হওয়া স্বাভাবিক)
ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো (বিনা লাভে কোন কর্ম করা)
ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া (গুরুজনদের অগ্রাহ্য করে অর্বাচীনদের মাতব্বরি)
ঘোড়ার ঘাস কাটা (বৃথা কাজে সময় ক্ষেপণ)
ঘাড়ের ভূত নামানো (দুর্বুদ্ধি ত্যাগ করা)
ঘোমটার নিচে খেমটা নাচে (বাইরে সাধু ভিতরে খল)
চোরে চোরে মাসতুতো ভাই (প্রতারকরা পরস্পরকে সমর্থন করে)
চড় মেড়ে গড় (অপমানের পর সম্মান প্রদর্শন)
চোরের সাক্ষী গাঁটকাটা (অসৎ লোককে অসৎ লোকই সমর্থন করে)
চাচা বলো কাকা বলো, কলোটি পাঁচ কড়া (আত্মীয়তা থাকা সত্ত্বেও আপন স্বার্থ ত্যাগ না করা)
চোরের রাত্রিবাসই লাভ (বিশেষ লাভের প্রত্যাশায় সামান্য লাভ করা)
চিনির পুতুল (সামান্য পরিশ্রমে কাতর হয়ে পড়া)
চিঁড়ের বাইশ ফের/ ঢেঁকশেল দিয়ে কটক যাওয়া (সহজ বিষয় ক্রমেই জটিল করে ফেলা)
চেনা বামুনের পৈতা লাগে না (যার যোগ্যতা জানা আছে, তার ব্যাপারে সুপারিশ লাগে না)
ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি (দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির জন্য ব্যাকুলতা)
ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো (তুচ্ছ কাজের জন্য বিশাল আয়োজন) - ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করা (তুচ্ছ কাজ করে দুর্নাম করা)
ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা (অসম্ভব কল্পনা করা)
ছিঁড়ে ছিঁড়ে কাটুনি, পুড়ে ঝুড়ে রাঁধুনি/ গাইতে গাইতে গায়েন (অভ্যাসেই অভিজ্ঞ হয়)
জমির অভাবে উঠোন চষা (হাতে কাজ না থাকলে অকাজে লিপ্ত হওয়া)
জাতে মাতাল তালে ঠিক (বেহিসেবির মতো দেখালেও প্রকৃতপক্ষে হিসেবি)
জুতা সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ (সামান্য কাজ থেকে মহৎ কাজ পর্যন্ত করতে পারা)
জলে বাস করে কুমিরের সঙ্গে বিবাদ (প্রভাবশালী ব্যক্তির অধীনে থেকে তার সঙ্গে বিবাদ)
জল খেয়ে জাতি জিজ্ঞাসা করা (আগের কাজ পরে করা)
জিয়ন্ত মাছে পোকা পড়ানো (নির্দোষকে দোষী সাব্যস্ত করা)
জ্বলন্ত আগুনে ঘি দেওয়া (উত্তেজনা বৃদ্ধি করা)
ঝড়ে বক মরে ফকিরের কেরামতি ফলে (কাজ আপনা আপনি হয়ে যায়, চালাক লোক বাহাদুরি নেয়)
ঝিকে মেরে বউকে শেখানো (ইশারায় তিরস্কার)
ঝাঁকের কৈ ঝাঁকে মেশা (দলছুটের দলে প্রত্যাবর্তন)
ঝাড়ের বাঁশ পড়ে না (অনেকে একত্রে থাকলে বিপদ ঘটে না)
ঝোপ বুঝে কোপ মারা (সুযোগের সদ্ব্যবহার করা)
টাকায় বাঘের দুধ মেলে (অর্থের জোরে সবকিছু করা যায়)
ঠেলার নাম বাবাজি (চাপে পড়ে কাবু হওয়া)
ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় (পরিণামে শূন্য প্রাপ্তি)
ঠাঁট ঠমকে বিকায় ঘোড়া (বাইরের ভড়ং দেখে লোকে ভুলে)
ঠেকায় পড়ে ঢেলায় সালাম (প্রকৃত বিষয় গোপন রেখে সম্ভ্রম রক্ষার চেষ্টা)
ঠোঁট কাটা কাক (যে সব বিষয়ে খুঁত ধরে থাকে)
ঠাকুরে করিলে হেলা, রাখালে মারে ঢেলা (ঈশ্বর বিমুখ হলে তুচ্ছ ব্যক্তিও অপমান করে)
ডানায় ভর দিয়ে চলা (শূন্যলোকে ভাসা)
ডোল ভরা আশা, কুলো ভরা ছাই (অনেক আশা কিন্তু সফলতা নেই)
ডুবে ডুবে জল খাওয়া (গোপনে কাজ করা)
ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে (সবখানে একই কাজ করা)
ঢাকের বাদ্য থামলেই মিষ্টি (দুঃসময় শেষ হলেই সুসময় শুরু)
ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার (শূন্য হাতে বাহাদুরি)
তেলা মাথায় তেল দেওয়া/ দক্ষিণে হাওয়া দেওয়া (ধনীর খোশামোদ করা)
তিন নকলে আসল খাস্তা (ক্রমাগত হাত বদলে বিশুদ্ধতার হানি)
থলির ভেতর হাতি পোষা (অসম্ভব কাজ করার চেষ্টা)
থিয়ে তল যাবে তবু নুয়ে ডুব না দিবে (ভাঙবে তবু মচকাবে না)
থোর বড়ি খাঁড়া, খাঁড়া বড়ি থোর (একঘেঁয়ে ব্যাপার) - দশে যারে বলে ছি তার প্রাণে কাজ কী? (সবাই যার নিন্দা করে তার জীবনধারণ বৃথা)
দাঁড়িকে মাঝি করা, মাঝ গাঙে ডুবে মরা (অযোগ্য লোককে কাজের ভার দিলে তা পণ্ড হয়)
দেখতে খেঁকশিয়ালি, যুদ্ধের সময় বাঘ (কার্যকালে সাহসী)
দেখাদেখি চাষ, লাগালাগি বাস (একজনকে দেখে অপরজন কাজে প্রবৃত্ত হয়)
দেদোর মর্ম দেদোয় জানে (যার যন্ত্রণা সেই বোঝে)
দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো (দুর্জন সঙ্গীর চেয়ে নিঃসঙ্গ থাকা অধিকতর বাঞ্ছনীয়)
দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো (ভালোর অভাব মন্দ দিয়ে পূরণ)
দৌড় ছাড়া হাডা নাই, বাইত গা দ্যাহে কাম নাই (অযথা কাজের জন্য তোড়জোড় দেখানো)
দশচক্রে ভগবান ভূত (দশজনের চক্রান্তে ন্যায়কে অন্যায় করা)
দুধ কলা দিয়ে সাপ পোষা (অজ্ঞাতে ভয়ংকর বিপদ লালন)
ধরি মাছ না ছুঁই পানি (দায়িত্ব পালন না করে সুখ ভোগ)
ধর্মের কল বাতাসে নড়ে (গোপন অন্যায় আপনা আপনিই প্রকাশ পায়)
ধরাকে সরা জ্ঞান করা (অহংকারে সবাইকে তুচ্ছ মনে করা)
ধান দিয়ে লেখাপড়া শেখা (নামমাত্র খরচ)
ধনুক ভাঙা পণ (প্রবল জেদ ধরে থাকা)
নিজের কোলে ঝোল টানা (স্বার্থসিদ্ধির ব্যবস্থা)
নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়? (যে বিপদে সবার ক্ষতি হয়)
নরম মাটি বিড়াল আঁচড়ায় (সরল মানুষকে লোকে কষ্ট দেয়)
নিজের চরকায় তেল দেওয়া (আপন কাজে মন দেওয়া)
নাকে সর্ষের তেল দিয়ে ঘুমানো (বাস্তবতা থেকে দূরে থাকা)
নড়া দাঁত পড়া ভালো (আত্মীয়ের সাথে মনোমালিন্য হলে সম্পর্ক ত্যাগ করাই ভালো)
নেঙটি ইঁদুর পাহাড় কাটে/ পচা শামুকে পা কাটা (তুচ্ছ জিনিস দ্বারা বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে)
পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে (বহুদর্শী বিজ্ঞলোকের অনেক গুণ থাকে)
পিঁড়েয় বসে পেঁড়োর খবর (নগণ্য লোকের গুরুত্বপূর্ণ খবর রাখা)
পরের কাঁধে বন্ধুক রেখে শিকার করা (অন্যের উপর দায় দিয়ে নিজের কাজ করা)
পেটে খেলে পিঠে সয় (লাভের সম্ভাবনা থাকলে কষ্ট সহ্য করা যায়)
পরের গোয়ালে গো দান (পরের ধন দান করে পুণ্য সঞ্চয় করা)
পর্বতের মূষিক প্রসব (বিরাট আড়ম্বরের তুচ্ছ পরিণাম)
ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যাওয়া (সামান্য কারণে কষ্ট পাওয়া)
ফেল কড়ি মাখ তেল (অর্থের বিনিময়ে ইচ্ছে পূরণ)
বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো (বুড়ো বয়সে ফূর্তিবাজ যুবকের মতো আচরণ)
বড়র পিরিতি বালির বাঁধ (বড়দের স্নেহ ক্ষণস্থায়ী)
বরের ঘরে পিসী, কনের ঘরে মাসী (উভয়কুল রক্ষা করে চলা)
বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়া (অপ্রত্যাশিত সৌভাগ্যলাভ)
বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা (শত্রুর ঘরে গোপন আস্তানা)
বাঘে মহিষে এক ঘাটে জল খায় (যোগ্য শাসকের ক্ষমতা প্রদর্শন)
বড়গাছে নৌকা বাঁধা (নির্ভাবনার আশায় বড়লোকের আশ্রয়ে থাকা)
বাড়া ভাতে ছাই দেওয়া (নিশ্চিত সাফল্য হাতছাড়া করা)
বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো (অতি সাবধানীর বিপদের আশঙ্কা বেশি)
বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা (শত্রুর পাল্লায় পড়লে নাজেহাল হতেই হয়)
বামুন গেল ঘর তো লাঙল তুলে ধর (তদারকি না থাকলে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা)
বামন হয়ে চাঁদে হাত (সাধারণ ব্যক্তির অসাধারণ বস্তু লাভের আশা)
ভেক না ধরলে ভিখ মেলে না (পেশা ও কাজের উপযোগী বেশভূষা দরকার হয়)
ভাগের মা গঙ্গায় পায় না (ভাগাভাগি কাজ প্রায়ই পূর্ণ হয় না)
ভাবের ঘরে চুরি (মনে এক কথা, ব্যবহারে অন্য)
ভাঙে তবু মচকায় না (বিপন্ন হলেও বিব্রত ভাব না দেখানো)
ভাদ্র মাসের তাল (অসতর্ক অবস্থায় আঘাত করা)
ভেড়া করে রাখা (বশীভূত করে রাখা)
ভেড়ার গোয়ালে আগুন লাগা (প্রতিকারের উপায় চিন্তা না করে কোলাহল করা)
ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ (বাজে কাজে অর্থ ব্যয় করা)
ভূতের মুথে রাম রাম (নিন্দুকের মুখে প্রশংসা)
ভিটেয় ঘুঘু চরানো (চরম সর্বনাশ করে দেওয়া)
মায়ের কাছে মামার বাড়ির গল্প (কোন বিষয়ে অভিজ্ঞ লোককে সে বিষয়ে নতুন করে জানানোর চেষ্টা)
মাথায় আকাশ ভেঙে পড়া (কিংকর্তব্যবিমূঢ় হওয়া)
মেঘে মেঘে বেলা হওয়া (বয়স বেড়ে যাওয়া)
মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন (প্রাণের বিনিময়ে হলেও সংকল্প সাধন)
ময়না টিয়ে উড়িয়ে দিয়ে খাঁচায় পোষে কাক (গুণীকে ছেড়ে নির্গুণকে আদর করা)
ময়লা কাপড়ে ধোপার ভয় (মনে পাপ থাকলেই আশঙ্কা জন্মে)
যত গর্জে তত বর্ষে না (শূন্য আস্ফালন)
- যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা (ধৃষ্টতা)
বুনো ওল, বাঘা তেঁতুল (বড় অপরাধীর কঠিন শাস্তিদাতা)যে সহে সে রহে (ধৈর্যধারণ করে থাকতে পারলে কখনও বিনাশ হয় না)
যে যায় লঙ্কায়, সে-ই হয় রাবণ (কোনো পদের অধিকারী হলে সেই পদসুলভ আচরণ)
যাচা ঘোলে ছেঁদা মালা (বিনামূল্যে প্রাপ্ত জিনিসের প্রতি অনীহা)
যমের দোসর (ভয়ানক ব্যক্তি)
যেমন কুকুর তেমন মুগুর (যার যেমন স্বভাব, তাকে সেভাবে শায়েস্তা করা)
যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয় (দুর্বলতার স্থানেই বিপর্যস্ত হওয়ার শঙ্কা)
যেখানেই রাত, সেখানেই কাত (শৃঙ্খলাহীন জীবন)
রতনে রতন চেনে (এক মন্দ ব্যক্তি আরেক ব্যক্তির মন্দত্ব সহজেই বোঝে)
রণের ঘোড়া (কাজের কথা শুনলে যে স্থির থাকতে পারে না)
রাজার হাল স্বর্গে বয় (ভাগ্যবানের কাজ আপনা থেকেই সিদ্ধ হয়)
লাভের গুড় পিঁপড়ে খায় (সামান্য লাভ করতে গিয়ে অন্নাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া)
লাগে টাকা দিবে গৌরীসেন (অন্যের ভরসায় বেশুমার খরচ)
লাউ শাকের বালি আর অন্তরের কালি (মনে পাপ থাকলে তা দূর করা কঠিন)
শিকারি বেড়াল গোঁফে চেনা যায় (হাবভাব দেখেই উদ্দেশ্য বোঝা যায়)
শিখণ্ডি খাড়া করা (আড়াল থেকে অন্যায় কাজ করা)
শাক দিয়ে মাছ ঢাকা (তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে অন্যায় গোপনের চেষ্টা)
শিং ভেঙে বাছুরের দল (বয়স্ক লোকের ছেলেমানুষি)
সস্তার তিন অবস্থা (সস্তা জিনিসের পেছনে সময় ও অর্থ বেশি খরচ হয়)
সাত কুড়ের ঘর, গোঁসাই রক্ষা কর (কাজ না করে খোদার দোহাই দেওয়া)
সাবধানের মার নাই (সতর্কতার বিপদ নাই)
সাতেও নাই পাঁচেও নাই (নিরপেক্ষ)
সাপের হাঁচি বেদেও চেনে (প্রকৃত লক্ষণ অভিজ্ঞ লোকই বুঝে)
সাত নকলে আসল খাস্তা (আসল জিনিস একের পর এক অনুকরণ হতে থাকলে স্বাতন্ত্র্য হারিয়ে ফেলে)
হক কথার মার নাই (সত্য কথা বললে লাভবান হওয়া যায়)
হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলা (সুযোগ গ্রহণ না করা) - হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী (মূর্খ লোকের মূর্খ উপদেষ্টা)
হাত আলস্যে গোঁফ নষ্ট (সামান্য পরিশ্রমের অভাবে কোনো বিষয় নষ্ট হওয়া)
হলুদের গুঁড়ো (সকল কাজেই যাকে কাজে লাগে)
হরিঘোষের গোয়াল (নিষ্কর্মা লোকদের কোলাহলপূর্ণ আস্তানা)
হাতে মারে না, ভাতে মারে (প্রত্যক্ষভাবে শত্রুতা না করলেও গোপনে সর্বনাশ করা) - আরও পড়ুন : এককথায় প্রকাশ