বাংলা ব্যাকরণ প্রশ্ন বিশ্লেষণ- তৃতীয় পর্ব

ব্যাকরণিক জটিল প্রশ্নের সহজ আলোচনা

ব্যাকরণের জটিল ও কঠিন প্রশ্নগুলো সহজবোধ্য ভাষায় এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এই বিশ্লেষণগুলো পরীক্ষায় অনেক কাজে আসবে।

 

১. নবান্ন শব্দটি ধ্বনিগতভাবে কোন নিয়মে গঠিত?
ক. সমাস                             খ. সন্ধি
গ. প্রত্যয়                             ঘ. উপসর্গ

ব্যাখ্যা : এই ধরনের প্রশ্ন অনেক সময় পরীক্ষায় আসে যা আমাদের বেশ পীড়া দেয়। মনে রাখতে হতে- সন্ধিঘটিত শব্দ বিভিন্ন উপায়ে গঠিত হতে পারে। তবে এখানে প্রশ্নে ‘ধ্বনিগতভাবে’ শব্দটি গঠনের কথা বলা হচ্ছে। তাই উত্তর হবে ()। মনে রাখতে হবে-

**শব্দের আদিস্বরের যদি পরিবর্তন হয়, তবে তা নির্দ্বিধায় প্রত্যয়ঘটিত শব্দ। যেমন- ইতিহাস+ ইক = ঐতিহাসিক।
**যদি অর্থের প্রাধান্য থাকে, তবে তা সমাসযোগে গঠিত হবে। যেমন- বিদ্যালয় (পাঠের স্থান), নবান্ন (উৎসব)।
আর যদি আদিস্বরের পরিবর্তন না হয়, তবে তা নির্ণয়ে কিছু সূত্র মনে রাখতে হবে। শব্দ গঠনের সূত্র- উপসর্গ > প্রত্যয় > সমাস > সন্ধি।

ক. উপসর্গযোগে : পরি + অন্ত = পর্যন্ত, দুঃ + যোগ = দুর্যোগ, সু + আগত = স্বাগত।
খ. প্রত্যয়যোগে : দ্বীপ + আয়ন = দ্বৈপায়ন, পতৎ + অঞ্জলি, তৎক্ষণ + ইক = তাৎক্ষণিক।
**তবে প্রত্যয়ের নিজস্ব কোনো অর্থ থাকে না এবং সাধারণত প্রত্যয়ের ফলে শব্দের আদিস্বরের পরিবর্তন ঘটে।
গ. সমাসযোগে : বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়, যশঃ + ইচ্ছা = যশোচ্ছা, ইতি + আদি = ইত্যাদি।
মূলকথা- যদি সন্ধির সাথে অন্যান্য টপিকের মিলে যায় তবে সন্ধির অবস্থান সবার শেষে হবে। এক্ষেত্রে উপসর্গ (যদি উপসর্গ দিয়ে গঠিত হয়), প্রত্যয় (যদি দুটোই অর্থবোধক শব্দ না হয়), সমাস (যদি দুটোই অর্থবোধ শব্দ হয় এবং অর্থের প্রাধান্য থাকে)।
**আর যদি উপসর্গ+ অর্থবোধক শব্দ (অব্যয়ীভাব সমাস) হয় তবে সমাসকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। যেমন- হাভাত, দুর্নীতি।
অন্যদিকে উপসর্গ+ প্রত্যয়ঘটিত শব্দ যদি হয়, তবে উপসর্গকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। যেমন- সুদর্শন, প্রচলন।

২. সভ্যতার ইতিহাসে প্রথম স্বরবর্ণ উদ্ভাবন করে কোন সভ্যতা?
ক. ফিনিশীয়                        খ. গ্রিক
গ. মিশরীয়                           ঘ. ভারতীয়

ব্যাখ্যা : সভ্যতার ইতিহাসে প্রথম ব্যঞ্জনবর্ণ উদ্ভাবন করে ফিনিশীয়রা। পরবর্তীতে গ্রিকরা এর সাথে স্বরবর্ণ যুক্ত করে বর্ণমালাকে সমৃদ্ধ করে। গণিতের ইতিহাসে শূন্য (০) আবিষ্কার করে ভারতীয়রা। সঠিক উত্তর ()।

৩. সাধিত ষ-বিশিষ্ট নয় এমন শব্দ কোনটি?
ক. মূষিক                               খ. অভিষেক
গ. দৃষ্টি                                    ঘ. সুষম

ব্যাখ্যা : ব্যাকরণিক বিভিন্ন নিয়মের মাধ্যমে ‘স’ কে ‘ষ’ তে রূপান্তর করা হয়। যেসব শব্দের মূল থেকেই ‘ষ’ ছিল এবং সাধিত হওয়ার পরও ‘ষ’ এর পরিবর্তন হয় নি– তাকেই ‘সাধিত ষ বিশিষ্ট শব্দ নয়’ বলে।
যেমন- আভাষ (আ+ ভাষ+ অ), মূষিক (মূষ+ ইক) ইত্যাদি।
অন্যান্য শব্দে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ‘ষ’ হয়েছে। যেমন- দৃশ+ তি > দৃষ্টি (প্রত্যয়), সু+ সম > সুষম (উপসর্গ), অভি+ সিচ+ অ > অভিষেক (প্রত্যয়)। সুতরাং সঠিক উত্তর ()।

৪. কোনটি বহুব্রীহি সমাস নয়?
ক. চৌচালা                            খ. তেপায়া
গ. সেতার                              ঘ. পঞ্চরত্ন

ব্যাখ্যা : বহুব্রীহি সমাসে তৃতীয় পদের অর্থের প্রাধান্য পায়। প্রশ্নে চৌচালা (বিশেষ ধরনের ঘর), তেপায়া (বিশেষ ধরনের আসন), সেতার (বাদ্যযন্ত্র বিশেষ)। পঞ্চরত্ন এর ব্যাসবাক্য ‘পাঁচ রত্নের সমাহার’। সুতরাং ‘সমষ্টি’ অর্থ থাকায় সঠিক উত্তর ()।

৫. শুক্রবার স্কুল বন্ধ- এখানে ‘স্কুল’ কোন কারক?
ক. কর্তৃকারক                         খ. কর্মকারক
গ. অধিকরণ                           ঘ. করণ

ব্যাখ্যা : এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই ‘অধিকরণ কারক’ দেন কিন্তু প্রশ্নে ‘শুক্রবার’ নিয়ে জানতে চাওয়া হয়নি বরং ‘স্কুল’ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। কারক অধ্যায়ে আমরা উহ্য ক্রিয়া (be verb) নিয়ে আলোচনা করেছি। যেমন- আমার নাম রফিক (হয়)। আমি বাসায় (আছি)।

প্রশ্নোক্ত বাক্যটি ‘শুক্রবার স্কুল বন্ধ’ (School is closed on Friday)। সুতরাং খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে এখানে বন্ধ ক্রিয়ার কর্তা স্কুল। এভাবেই আমরা বলতে পারি ‘শনিবার স্কুল খুলবে’। এই প্রশ্নে সঠিক উত্তর ()।

৬. ‘তুমি যে বড় এলে না’ এখানে ‘বড়’-
ক. বিশেষ্য                        খ. বিশেষণ
গ. অব্যয়                          ঘ. ক্রিয়া

ব্যাখ্যা : ‘অব্যয়’ পদ বাক্যে ব্যবহৃত না হলেও অর্থ বুঝতে সমস্যা হয় না। যেমন- আমি আসছি (এবং) তুমি আসবে।
এখানে ‘বড়’ পদটি অব্যয় পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। বাক্যটি এভাবে করলে সঠিক হবে ‘তুমি যে এলে না’। অর্থাৎ ‘বড়’ শব্দটি ব্যবহার না করলেও অর্থের পরিবর্তন হবে না। সুতরাং সঠিক উত্তর ()।

৭. রাজায় রাজায় লড়াই, উলুখাগড়ার প্রান্তরে- এখানে ‘রাজায় রাজায়’ কোন সমাস?
ক. অলুক বহুব্রীহি                খ. ব্যতিহার বহুব্রীহি
গ. অলুক দ্বন্দ্ব                      ঘ. কর্মধারয়

ব্যাখ্যা : এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই ব্যতিহার বহুব্রীহি দিবে। কারণ, দ্বিরুক্তি শব্দগুলো সাধারণত ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস হয়। যেমন- লাঠালাঠি, চোখাচোখি, লেখালেখি। কিন্তু ব্যতিহার বহুব্রীহির সংজ্ঞায় ক্রিয়া দ্বিরুক্তির কথা বলা হয়েছে, কর্তা নয়।
প্রশ্নোক্ত বাক্যে কর্তা দ্বিরুক্তি (রাজায় রাজায়) হয়েছে, ক্রিয়া নয়। তাই এটি ব্যতিহার বহুব্রীহি হবে না। এখানে উভয় ‘রাজা’ পদের অর্থই প্রাধান্য পাচ্ছে এবং বিভক্তি লোপ পায় নি- তাই এটি অলুক দ্বন্দ্ব সমাস। সুতরাং সঠিক উত্তর ()।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart

You cannot copy content of this page

Scroll to Top