ইসলাম বিদ্বেষীদের প্রশ্নের জবাব
- নাস্তিকদের সাথে আলোচনা করতে গেলেই তারা দেখবেন সুরা তওবার দুটি আয়াতকে হেরফের করে ইসলামের বর্বরতা তুলে ধরতে চায়। যেখানে বলা হয়েছে, কাফেরদের যেখানে পাবে সেখানে হত্যা করবে (আয়াত : ৫)। যদিও এ্রর পরের আয়াত ও সুরার প্রথম আয়াত নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা তারা দেয় না। আসল উদ্দেশ্য তাদের ইসলামকে হেয় করা, তা যেভাবেই হোক।
- হুদায়বিয়ার সন্ধিতে একটি ধারা ছিল যে ব্যক্তি বা গোত্র রাসুলের আশ্রয়ে থাকতে চায়, সে থাকতে পারবে। আর যে কুরাইশদের আশ্রয়ে থাকতে চায়, সে ও তা পারবে। এরই প্রেক্ষিতে বনু বকর কুরাইশদের আর বনু খুযাআ মুসলামানদের সাথে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।
যদিও তাদের মধ্যে পুরোনো শত্রুতা ছিল। এরই প্রেক্ষিতে একদিন সন্ধ্যায় বনু বকর বনু খুযাআকে আক্রমণ করে। কুরাইশরা তাদের অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে। পরে রাসুলের কাছে এই সংবাদ আসলে তিনি একজন পত্রবাহককে (দামেরি রা.) কুরাইশদের নিকট পাঠিয়ে বলেন, এখন তিনটি বিষয়ের যে কোনো একটি নির্বাচন করতে হবে। যথা-
১. বনু খাযাআর নিহত ব্যক্তিদের রক্তপণ দিতে হবে।
২. অথবা বনু বকরের মিত্র বনু নাফাসাকে (যাদের সর্দার লড়াইতে ছিল) এই চুক্তি থেকে আলাদা করে দিতে হবে।
৩.অথবা হুদায়বিয়ার সন্ধি বাতিল করার ঘোষণা দেয়া হোক। - কুরাইশদের পক্ষ থেকে কুর্ত ইবনে আমর তৃতীয়টার পক্ষেই মতামত জানান। এভাবে মুসলামান ও কুরাইশদের মধ্যকার চুক্তি ভেঙে যায়। পরবর্তীতে কুরাইশরা ভুল বুঝতে পেরে আবু সুফিয়ানকে চুক্তি নবায়নের জন্য পাঠায়। কিন্তু রাসুল সা. চুক্তি করার কোনো ঘোষণা দেন নি। আবু সুফিয়ান মসজিদে চুক্তি নবায়নের ঘোষণা দিয়ে চলে যান। কিন্তু মুসলমানরা চুক্তি নবায়নের পক্ষে কোনো মত দেয় নি।
তাহলে দেখুন, কুরায়েশদের একগুয়েমির কারণেই চুক্তি বরবাদ হয়। যদিও তারা পরবর্তীতে চুক্তি নবায়ন করতে লোক পাঠিয়েছিল কিন্তু দ্বিতীয়বার চুক্তি করার জন্য তো মুসলমানরা বাধ্য ছিল না। -
উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যা-
- মক্কা বিজয়ের প্রাক্কালে যে সব মুশরিক ছিল, তারা ছিল চার ভাগে বিভক্ত। যথা-
১. যাদের সাথে হুদায়বিয়ার চুক্তি হয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে তারা চুক্তি লঙ্ঘন করে। মুলত এদের কারণেই মক্কায় আক্রমণ হয়। এরাই ছিল কুরাইশ গোত্র। যাদের ব্যাপারে ৫ম আয়াতে বলা হয়েছে,যখন সম্মানিত মাস শেষ হবে, তখন তাদের যেখানে পাও কতল কর।
فَإِذَا ٱنسَلَخَ ٱلْأَشْهُرُ ٱلْحُرُمُ فَٱقْتُلُوا۟ ٱلْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَٱحْصُرُوهُمْ وَٱقْعُدُوا۟ لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ২. যাদের সাথে মুসলমানদের একটি সন্ধি চুক্তি ছিল এবং তারা তা লঙ্ঘন করে নি। যেমন- বনু যামারা, বনু মুদলাজ। এদের ব্যাপারে বলা ৪র্থ আয়াতে বলা হচ্ছে কিন্তু যে সকল মুশরিকের সাথে তোমরা চুক্তি করেছ এবং যারা চুক্তি লঙ্ঘন করে নি, তাদের সাথে কৃত চুক্তি পালন কর তার মেয়াদ পর্যন্ত।
إِلَّا ٱلَّذِينَ عَٰهَدتُّم مِّنَ ٱلْمُشْرِكِينَ ثُمَّ لَمْ يَنقُصُوكُمْ شَيْـًٔا وَلَمْ يُظَٰهِرُوا۟ عَلَيْكُمْ أَحَدًا فَأَتِمُّوٓا۟ إِلَيْهِمْ عَهْدَهُمْ إِلَىٰ مُدَّتِهِمْ
তাফসীরে খাযিনে বলা হয়েছে, তাদের সাথে আরও ৯ মাস চুক্তি বহাল ছিল।৩. যাদের সাথে সন্ধি করা হয়েছিল কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদ ব্যতীত।
৪. যাদের সাথে কোনো চুক্তিই হয় নি।
শেষোক্ত দুই দলের জন্য ১ম ও দ্বিতীয় আয়াতে বলা হচ্ছে আল্লাহ ও রাসুলের পক্ষ থেকে মুশরিকেদর থেকে সম্পর্কছেদ করা হল।
بَرَآءَةٌ مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦٓ إِلَى ٱلَّذِينَ عَٰهَدتُّم مِّنَ ٱلْمُشْرِكِينَনাস্তিকরা এগুলো জেনেও লোকদের বিভ্রান্তের অপচেষ্টা করে। সেজন্য সতর্ক থাকা ও অপব্যাখ্যা থেকে দূরে থাকা জরুরি। (তাফসীর সূত্র- তাফসীরে মারেফুল কোরআন)