রাওলাট আইন-১৯১৯ (Rowlatt Act)

রাওলাট আইন কী? ভারতবর্ষে এর প্রভাব

  • রাওলাট আইন : প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতে বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড দমনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ১৯১৭ সালে ভারত সরকার সিডিসন কমিটি গঠন করে। ইংল্যান্ডের বিচারপতি স্যার সিডনি রাওলাটের সভাপতিত্বে গঠিত এই কমিটি ‘রাওলাট কমিটি’ নামে পরিচিত। ১৯১৮ সালে কমিটি তার প্রতিবেদন পেশ করে। ১৯১৯ সালের মার্চে কমিটির সুপারিশগুলো আইন হিসেবে পাশ হয়।
  • রাওলাট আইন প্রণয়নের প্রেক্ষাপট-

    ক. ১৯১৫ সালের ভারতরক্ষা আইন : প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতে ব্রিটিশবিরোধী কার্যকলাপ দমনের জন্য ১৯১৫ সালে এই আইন প্রণয়ন করা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার সাথে সাথে এই আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তাই ভারতীয়দের দমন করার জন্য নতুন আইনের প্রয়োজন ছিল।
    খ. শ্বেতাঙ্গদের খুশি করার প্রচেষ্টা : ১৯১৯ সালের মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসন সংস্কারে ব্রিটিশরা ভারতীয়দের কিছুটা অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। এতে অনেক ইংরেজ মনঃক্ষুণ্ন হয়। এই বিশেষ শ্রেণিকে তুষ্ট করার জন্য সরকার এই আইন প্রণয়ন করেন।
    গ. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতে অস্বাভাবিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্ব ও মহামারির ফলে দেশবাসীর অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে। সরকার এই বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকায় দেশবাসী ব্রিটিশ সরকারের উপর ক্ষুব্ধ হয়। এই ক্ষোভ গণ-আন্দোলন রূপে ছড়িয়ে পড়ে।
    ঘ. দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অন্যান্য ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোতে প্রচুর ভারতীয় নাগরিক ছিল। সেখানে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের সাথে অমানবিক আচরণ করত। এই সংবাদ ভারতে ছড়িয়ে পড়লে ভারতীয়রা শ্বেতাঙ্গদের উপর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়

  • রাওলাট আইনের ধারাগুলো নিম্নরূপ-

    ১. সরকার বিরোধী যেকোনো প্রচারণা দণ্ডনীয় বলে গণ্য করা হবে।
    ২. সন্দেহভাজন যেকোনো ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা যাবে।
    ৩. গ্রেফতারের পর বিনা বিচারে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক রাখা যাবে।
    ৪. বিনা পরোয়ানায় সরকার যেকোনো ব্যক্তির বাড়িঘর তল্লাশি করতে পারবে।
    ৫. জুরির সাহায্য ও সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই বিচারকার্য পরিচালনা করা যাবে।
    ৬. বিচারকের রায়ের বিরুদ্ধে কোনো আপিল করা যাবে না।
    ৭. সংবাদপত্রে স্বাধীনতা সংক্রান্ত কোনো সংবাদ প্রচার করা যাবে না।

  • রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া-

  • ক. দেশব্যাপী প্রতিবাদ : রাওলাট আইনকে কেন্দ্র করে দেশের সর্বত্র প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। কেন্দ্রীয় আইনসভার সদস্যরাও এর বিরোধিতা করে। উদারপন্থী সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জিও এই আইনের প্রতিবাদ করেন।
    খ. মহাত্মা গান্ধির প্রতিবাদ : মহাত্মা গান্ধি এই ধরনের নির্মম আইনের চরম সমালোচনা করেন। তিনি এই আইনকেউকিল নেহি, দলিল নেহি আপিল নেহি’ বলে মন্তব্য করেন।
    গ. সংবাদপত্রের প্রতিক্রিয়া : রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে সংবাদপত্রগুলো প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। কেশরী পত্রিকা এই আইনকে উৎপীড়নের ‘দানবীয় যন্ত্র’ বলে অভিহিত করে।
    ঘ. জালিওনাবাগ হত্যাকাণ্ড : রাওলাট আইন ও অন্যান্য কয়েকটি ঘটনার প্রতিবাদে পাঞ্জাবের জালিওনাবাগে লোকেরা প্রতিবাদ করলে সরকার ১৯১৯ সালে অসংখ্য নিরস্ত্র লোককে নির্বিচারে হত্যা করে। ফলে সারা ভারতে প্রতিবাদ তীব্র আকারে ছড়িয়ে পড়ে।

  • আরও পড়ুন- সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাস

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart

You cannot copy content of this page

Scroll to Top