বাগধারার প্রতিশব্দ বাগধারা

বাগধারা আমাদের ভাষার এক অমূল্য সম্পদ। 

ভাবের প্রগাঢ়তা বুঝাতে আমরা বাগধারা ব্যবহার করি। এতে একদিকে নতুন শব্দের ব্যবহার করা যায় অন্যদিকে ভাবের গভীরতাও বৃদ্ধি পায়। এই বাগধারাগুলো মনে রাখা কিছুটা হলেও কষ্টকর। তাই আমরা এখানে বাগধারার প্রতিশব্দ বাগধারা উপস্থাপন করছি। যাতে কোনটি ভিন্নার্থক বা কোনটি সমার্থক বাগধারা- তা সহজেই বুঝতে পারেন।

  • মারা যাওয়া : অক্কা পাওয়া, পটোল তোলা, পঞ্চত্ব প্রাপ্ত, অগস্ত্য যাত্রা, গঙ্গা পাওয়া, চোখ বোঝা, যমে ধরা।
  • মরণ দশা : গঙ্গা-বাগে পাওয়া, যখন-তখন অবস্থা, শিয়রে শমন, টিমটিম করা।
  • শত্রুতা : আদায় কাঁচকলায়, অহিনকুল সম্পর্ক, দা-কুমড়া সম্বন্ধ।
  • মন্দভাগ্য : ইঁদুর কপালে, আট কপালে, কাঁজি ভক্ষণ নামে গোয়ালা, খণ্ড কপাল, হাড় হাভাতে, অষ্ট কপাল, কপালপোড়া।
  • সৌভাগ্য : জোর কপাল, কপাল ফেরা, চাঁদ কপালে, একাদশে বৃহস্পতি, কড়ি কপালে, লগন চাঁদ, পোয়াবারো।
  • অপদার্থ : অকাল কুষ্মাণ্ড, ঊনপাজুরে, আমড়া কাঠের ঢেঁকি, ঘন্টাগরুড়, গোবর গনেশ, কচু বনের কালাচাঁদ, কায়তের ঘরের ঢেঁকি, কুমড়ো কাটা, বট ঠাকুর, ঢেঁকির কুমির, ঠুঁটো জগন্নাথ, ঢেঁকি অবতার, বুদ্ধির ঢেঁকি, ঘটিরাম, ষাঁড়ের গোবর, জড়ভরত, অসারে জল সার, আটাশে ছেলে।
  • নির্লজ্জ : চশমখোর, কানকাটা, দু কান কাটা, বিড়ালের আড়াই পা, লেজকাটা শিয়াল, খোসা পুরু, লজ্জার মাথা খাওয়া।
  • লজ্জা পাওয়া : মাথা কাটা যাওয়া, চোখের চামড়া।
  • বিশৃঙ্খলা : জগা খিচুড়ি, তুর্কী নাচন, লঙ্কা কাণ্ড, নয়-ছয়, হ-য-ব-র-ল, লেজে গোবরে করা, আধা খেঁচড়া, কাগাবগা, গোলমালে চণ্ডীপাঠ, ছত্রিশ জাতের কাণ্ড, ছাতরা-ভাতরা, ছাতুর হাঁড়িতে বাড়ি পড়া, গোদা পায়ে আলতা, ঘটে পটে পুজো।
  • তোশামোদকারী : ঢাকের কাঠি, তেল মাখা, ধামাধারা, খঁয়ের খা, টুপি পরানো, আমড়াগাছি করা, জল উঁচু জল নিচু, কাছা ধরা, পো ধরা।
  • ক্ষণস্থায়ী : তাসের ঘর, পদ্মপাতার জল, শরতের শিশির, বালির বাঁধ, জলের দাগ, জলের আলপনা, ভালুক জ্বর।
  • সুসময়ের বন্ধু : দুধের মাছি, বসন্তের কোকিল, সুখের পায়রা, লক্ষ্মীর বরযাত্রী, জোড়ের পায়রা
  • অহংকারী : পায়াভারি, সাপের পাঁচ পা দেখা, গলাকুলো পায়রা, মাটিতে পা না পড়া।
  • একগুঁয়ে : নেই আঁকড়া, গোকূলের ষাঁড়, ধর্মের ষাঁড়, গোঁয়ার গোবিন্দ, ঘোড়ার কামড়, ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা
  • ভণ্ড : বকধার্মিক, তুলসি বনের বাঘ, বর্ণচোরা, বিড়াল তপস্বী, ভেজা বিড়াল, বর্ণচোরা আম, মামদোবাজি, ফিকিরে ফকির, কাপুড়ে বাবু।
  • একমাত্র সম্বল : অন্ধের যষ্ঠি, কানু ছাড়া গীত নাই।
  • কাল্পনিক বস্তু : আকাশ-কুসুম কল্পনা, দিবাস্বপ্ন।
  • অসম্ভব বস্তু : কাঁঠালের আমসত্ত্ব, ব্যাঙের সর্দি, কুমিরের সান্নিপাত, পশ্চিম দিকে সূর্য ওঠা, সোনার পাথর বাটি, ধান গাছের তক্তা, লক্ষ্মী হয়ে ভিক্ষা মাগা, বাঘের দুধ।
  • একেবারে মূর্খ : গোবর গণেশ, গোমূর্খ, হস্তীমূর্খ, নিরেট মাথা, ভবচন্দ্র, অঘাচণ্ডী, অঘারাম, নাড়াবুনে।
  • কুপরামর্শ দেওয়া : কলকাঠি নাড়ানো, কান ভারি করা, বাঁদরের বুদ্ধি।
  • অত্যন্ত অলস : গোঁফ খেজুরে, অজাগর বৃত্তি, গদাই লস্করি চাল, গয়ংগচ্ছ, ইতুনিদকুড়ে, কুম্ভকর্ণের নিদ্রা, উদোগেঁড়ে, আঠারো মাসে বছর, ঢিমে তেতালা, দাঁতে কুটো কাটা, শুয়ে শুয়ে লেজ নাড়া, পিপু ফিশু।
  • ছটফট করা : আকুপাকু করা, অকটবিকট, খাবি খাওয়া, উসিপিসি করা, মন উচাটন হওয়া, মন না মতি, আথিবিথি।
  • অতি আদুরে নষ্ট : আলালের ঘরের দুলাল, আদরে বাঁদর, আহ্লাদি পুতুল, লক্কা পায়রা।
  • কাণ্ড জ্ঞানহীন : গোয়ার গোবিন্দ, গোমূর্খ, ফতো কাপ্তান, নাড়াবুনে।
  • অপ্রত্যাশিত বিপদ : বিনা মেঘে বৃষ্টিপাত, হরিষে বিষাদ, অকালে বাদলা।
  • উভয় সংকট : করাতের দাঁত, দুই নৌকায় পা, শ্যাম রাখি না কুল রাখি, জলে কুমির ডাঙায় বাঘ, সাপের ছুঁচো গেলা, ত্রিশঙ্কু অবস্থা, রাম ভজি কি রহিম ভজি।
  • ভীষণ বিপদ : অথৈ জলে পড়া, আতান্তরে পড়া, গভীর গাড্ডা, অকুলপাথার, অকূলে ভাসা, চোখে ধোঁয়া দেখা, অন্ধকার দেখা, চোখে সরষে ফুল দেখা, কূল কাঠের আগুন, রাবণের চিতা।
  • বিপদে দিশেহারা : চোখে সর্ষে ফুল দেখা, চোখে অন্ধকার দেখা, ঝড়ো কাক, গোলক ধাঁ ধাঁ, মাথার ঘায়ে কুকুর পাগল।
  • অস্থানে সুনির্দেশনা : কানাগোরুর ভিন্ন পথ, বেনাবনে (উলুবনে) মুক্তা ছড়ানো, জলে ফেলা, বানরের গলায় মুক্তার হার, অস্থানে তুলসী অপাত্রে রূপসী।
  • সর্বনাশ করা : ঘুঘু চরানো, ছুরি মারা, ডাল ভাঙা বাঁদর, দফা রফা, পরকাল ঝরঝরে করা, পাকা ধানে মই,
    বসিয়ে দেওয়া, ভিটায় ঘুঘু চরানো, লাটে ওঠা, কাপ্তেন ভাসানো।
  • ঠকানো : চোখে ধুলো দেয়া, জক দেওয়া, কাষ্ঠ হাসি, ভাতে ধুনো দেওয়া।
  • ফাঁকি দেওয়া : কলা দেখানো, গণ্ডায় আণ্ডা দেওয়া, লবডঙ্কা, গোলে হরিবোল দেওয়া।
  • অপব্যয়কারী : দুধে-ঘিয়ের শ্রাদ্ধ করা, নয়-ছয়, ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ, উড়নপেকে, হরিলুট, অন্ন ধ্বংস করা, পিঁপড়ের পেট টেপা।
  • অত্যন্ত কৃপণ : কিপটের জাসু, জল গলে না, হাতভারি, হাতে জল না লাগা, কঞ্জুসের ডাণ্ডাখোর।
  • সাধারণ লোক : আদার ব্যাপারি, আদারের হাঁড়ি, উলুখাগড়া, চুনোপুঁটি, ঝরাপাতা।
  • দুর্লভ বস্তু : আলেয়ার আলো, বাঘের দুধ, অমাবস্যার চাঁদ।
  • অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা : ধান ভানতে শিবের গীত, ধানাই-পানাই, হিং-টিং-ছট, গায়ে পড়া।
  • জব্দ করা : থুরে দেওয়া, ঘোল খাওয়ানো, একহাত নেওয়া।
  • নগদ অর্থ : কাঁচা পয়সা, নগদ নারায়ণ।
  • স্পষ্টভাষী : ঠোঁট কাটা, খাতির নাদারদ, মুখ ফোড়।
  • অবজ্ঞা করা : দূর ছাই করা, নাক সিটকানো, টুসকি মারা।
  • একমাত্র সন্তান : শিবরাত্রির সলেতে, সবেধন নীলমণি।
  • বিনীতভাবে অনুরোধ করা : গলবস্ত্র হওয়া, জোড়হাত করা।
  • ব্যর্থ হওয়া : গাড্ডা মারা, গুষ্টির তুষ্টি করা, গণেশ উল্টানো।
  • প্রহার করা : গাদন দেওয়া, গায়ে হাত তোলা, উত্তম মধ্যম।
  • আরামের সম্ভাবনা দেখে পরিশ্রম বাদ দেওয়া : ঘোড়া দেখে খোঁড়া হওয়া।
  • ক্ষণজীবী লোক : চড়ুই পাখির প্রাণ।
  • অভিজ্ঞ : চুল পাকানো, বুড়োহাড়।
  • বিস্ময় : চোখ কপালে তোলা, চক্ষু চড়কগাছ।
  • দৃষ্টি আকর্ষণ : চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো।
  • ঝগড়া করা : ছুঁচোর কেত্তন, নারদের ঢেঁকি।
  • উপযুক্ত শাস্তি : জোঁকের মুখে নুন পড়া, ঘাট হওয়া, ঝকমারি মাশুল।
  • আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি : ডানে আনতে বাঁয়ে কুলোয় না।
  • বৃদ্ধ হওয়া : তিন মাথা এক হওয়া, তিনঠেঙে, ভূষণ্ডির কাক, বয়সের গাছ পাথর না থাকা, আদিকালের বদ্যি বুড়ো, অক্ষয়বট, ষাটের কোলে।
  • তিরস্কার : দাঁত খিঁচুনি।
    বাংলা কুইজ
  • লোভ করা : নোলা বাড়ানো, শুঁড় বার করা, জিভে পানি আসা।
  • পালানো : পগারপার, চম্পট দেওয়া, পৃষ্ঠ প্রদর্শন।
  • প্রচারিত হওয়া : পাঁচকান হওয়া।
  • অসাধ্য সাধন : বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাধা।
  • অনর্থক কাজ : ভস্মে ঘি ঢালা, ভূতের বেগার খাটা।
  • দরিদ্র্য : ভাঁড়ে মা ভবানী, অলক্ষ্মীর দশা।
  • কৌশলে কার্যোদ্ধার : মাথায় হাত বুলানো।

আরও জানুনঃ যা না জানলেই নয় (১ম পর্ব)

  • অফুরস্ত ঐশ্বর্য : কুবেরের ভাণ্ডার, গৌরিসেনের অর্থ।
  • সগর্বে প্রকাশ : মাথা তোলা।
  • অরাজকতা : মগের মুলুক, মাৎস্যন্যায়।
  • দুঃসময় : রাহুর দশা, শনির দশা।
  • সুন্দর অথচ অপদার্থ : মাকাল ফল, নদের চাঁদ।
  • বিশাল ব্যাপার : লঙ্কাকাণ্ড, এলাহি কাণ্ড, অশ্বমেধ যজ্ঞ, রাজার হাল, ধুন্ধুমার কাণ্ড।
  • স্বভাব পরিবর্তন না হওয়া : ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে, আদা শুকালেও ঝাল যায় না, পচা আদা ঝালের গাদা, কয়লা ধুইলেও ময়লা যায় না, কাকের বাসায় কোকিলের ছা; জাত স্বভাবে করে রা।
  • সাধ্যাতীত আকাঙ্ক্ষা : গরিবের ঘোড়া রোগ, কাঙ্গালের ঠাকুর ব্যাধি, খোষে তৈল নাই; কলাবড়ার সাধ।
  • একের ক্ষতিতে অন্যের আনন্দ : কেউ মরে, কেউ হরি হরি বলে/কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ/ গো মড়কে মুচির পার্বণ।
  • অক্ষমতা সত্ত্বেও বড়াই করা : ঘটি ডুবে না, নামে তাল পুকুর/ অসারের তর্জন গর্জন সার/ ঘরে নাই ভাত, কোঁচা তিন হাত/ ফাঁপা ঢেঁকির শব্দ বড়/ বিষ নেই, কুলোপনা চক্কর/কাঁচা আদায় ঝাল বেশি/ চামচিকের লাথি।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart

You cannot copy content of this page

Scroll to Top