- সমাজতাতিত্ত্বক দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজ ও সভ্যতার ৪টি ধাপ। যথা-
আদিম সমাজ মানব সভ্যতার শুরু। এ সময়ে মানুষ আগুন ব্যবহার করতে শিখে। পশুপালন সমাজ এ সমাজেই প্রথম সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা দেখা যায়। কৃষি সমাজ এ সমাজেই মানুষ স্থায়ীভাবে এক স্থানে বসবাস করতে শুরু করে। শিল্প সমাজ এ সমাজে শিল্প, বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটে এবং সামাজিক শ্রেণিবিভাগ তৈরি হয়। - প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে মানব সমাজ ও সভ্যতার ৪টি ধাপ। যথা-
প্রাচীন প্রস্তর যুগ হাইডেলবার্গ, জাভা মানব, পিকিং মানব এ যুগের। এ যুগের মানুষ প্রথম দিকে কাঁচা মাংস খেত এবং পরে আগুন জ্বালানোর কৌশল শিখে। মধ্য প্রস্তর যুগ প্রথম চাষাবাদ শুরু হয়। তাম্র/ ব্রোঞ্জ যুগ এ সময় চীনে ব্রোঞ্জ ব্যবহার শুরু হয়। ব্যবসায়- বাণিজ্য আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করে। লৌহ যুগ প্রথম লোহার ব্যবহার শুরু হয় এশিয়া মাইনরে হিট্টাইটদের মধ্যে।
- আদি মানব : ১৮৯১ সালে ইন্দোনেশিয়ার অন্তর্গত জাভার সেলো নদীতে প্রাগৈতিহাসিক মানুষের মাথার খুলি আবিষ্কৃত হয়। এই আদি মানবের নাম দেওয়া হয় জাভা মানব (Java Man)। ১৯০৭ সালে জার্মানির হেইডেলবার্গে প্রাগৈতিহাসিক মানুষের নিচের চোয়ালের হাড় আবিষ্কৃত হয় এবং এর নামকরণ করা হয় হেইডেলবার্গ মানব (Heidelberg Man)।
১৯২৯ সালে চীনের পিকিংয়ের নিকট প্রাগৈতিহাসিক মানুষের মাথার খুলি পাওয়া যায় যার নাম দেওয়া হয় ‘পিকিং মানব’ (Peking Man)।
১৯৭৪ সালে ইথিওপিয়ায় ৩.২ মিলিয়ন বছরের পুরোনো কঙ্কাল আবিষ্কৃত হয় যার নাম দেওয়া হয় লুসি (Lucy)।
- ইতিহাসের ইতিহাস : পৃথিবীতে এ পর্যন্ত চারটি বরফ যুগ ও চারটি আন্তঃবরফ যুগ অতিবাহিত হয়েছে। প্রতিটি যুগেই উষ্ণ অঞ্চলের দখল নিয়ে মানুষে মানুষে, প্রাণিতে প্রাণিতে লড়াই হয়েছে। প্রায় ১০ লাখ বছর পূর্বে বরফ যুগের প্রথম পর্যায়ে জাভা মানব ও পিকিং মানবদের বসবাস ছিল।
ক. Paleolithic Age (পুরোনো পাথরের যুগ) যুগে মানুষ শিকার করে খেত ও যাযাবর জীবন যাপন করত।
খ. Neolithic (নতুন পাথরের যুগ) যুগে মানুষের জীবন ছিল কৃষিপ্রধান স্থায়ী জীবন। এই কৃষিপ্রধান জীবনে এসে মানুষের মধ্যে নানা প্রাকৃতিক শক্তির পূজা করতে দেখা যায়। এই কৃষিপ্রধান যুগ থেকেই মানব সভ্যতার সূত্রপাত ঘটে।
- মেসোপটেমিয়া সভ্যতা : মেসোপটেমিয়া একটি গ্রিক শব্দ। এর অর্থ দুই নদীর মধ্যবর্তী ভূমি। এটি বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতা। আনুমানিক ৫০০০ খ্রিস্টপূর্বে ইরাকের টাইগ্রিস (দজলা) ও ইউফ্রেটিস (ফোরাত) নদীর তীরে এই সভ্যতার বিকাশ ঘটে। এই সভ্যতার বেশিরভাগ ভূমি বর্তমান ইরাকে অবস্থিত।
মেসোপটেমীয় সভ্যতার পর্যায় চারটি। যথা- সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয়, অ্যাশেরীয় ও ক্যালেডীয়। - সুমেরীয় সভ্যতা : সুমেরীয়দের আদিবাস ছিল এলামের পাহাড়ি অঞ্চল। খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দে এদের একটি শাখা মেসোপটেমিয়ার দক্ষিণে বসতি গড়ে তোলে। সুমেরীয়দের আয়ের প্রধান উৎস ছিল কৃষি। সভ্যতায় সুমেরীয়দের সবচেয়ে বড় অবদান চাকা আবিষ্কার। সুমেরীয় দেবতার মন্দিরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে টেম্পল টাউন। সুমেরীয়দের প্রধান দেবতা নার্গাল। সুমেরীয়দের মন্দিরের নাম জিগুরতি। ২০০০ খ্রিস্টপূর্বে অ্যামোরিট নামক যাযাবর যোদ্ধারা মেসোপটেমিয়া দখল করে এবং তারা তাদের রাজধানী ইউফ্রেটিস নদীর তীরবর্তী ‘ব্যাবিলনে’ স্থাপন করে। হাম্মুরাবির শাসনামলে এই সাম্রাজ্য উন্নতির শিখরে উঠে। হাম্মুরাবি আইনে ২৮২টি সুনির্দিষ্ট আইন ছিল।
- ব্যাবিলনীয় সভ্যতা : ব্যাবিলনীয় সভ্যতার স্থপতি ছিলেন অ্যামোরাই নেতা হাম্মুরাবি। তিনি প্রথম লিখিত আইনের প্রচলন করেন। এই সভ্যতায় আইন সংক্রান্ত হাম্মুরাবি কোড প্রণীত হয়। ব্যাবিলনের উত্তরে গাথুর শহরের ধ্বংসাবশেষে পৃথিবীর প্রাচীনতম মানচিত্র (Imago Mundi) পাওয়া যায়।
মেসোপটেমিয়ার উত্তর দিক থেকে আগত যুদ্ধবাজ জাতি অ্যাশেরিয়রা ৮৫০ খ্রিস্টপূর্বে সমগ্র মেসোপটেমিয়া অঞ্চল দখল করে অ্যাসেরীয় সভ্যতা গড়ে তোলে। - অ্যাসেরীয় সভ্যতা : অ্যাসেরীয়রা নিজেদের সূর্যদেবতা শামসেরুর প্রতিনিধি মনে করত। ইতিহাসে অ্যাসেরীয় সামরিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। প্রথম দিকে এই সভ্যতা কৃষি ও পশু পালনের উপর নির্ভরশীল ছিল। পরবর্তী সময়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নানান সংকটে আশেপাশের অঞ্চলগুলো লুট করতে শুরু করে। একসময় এই লুটের সম্পদই তাদের আয়ের প্রধান উৎস হয়ে ওঠে।
৬১২ খ্রিস্টপূর্বে ক্যালেডীয়রা অ্যাশেরীয়দের পরাজিত করে এবং নিনেভকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে। ক্যালেডীয়রা তাদের নতুন রাজধানী করে ব্যাবিলনে। তখনকার বিখ্যাত রাজা ছিলেন নেবুচাঁদনেজার। - ক্যালেডীয় সভ্যতা : এই সভ্যতা ব্যাবিলন শহর কেন্দ্রিক গড়ে ওঠায় একে ‘নতুন ব্যাবিলনীয় সভ্যতা’ বলা হয়। ক্যালেডীয় সভ্যতার স্থপতি ছিলেন সম্রাট নেবুচাঁদনেজার। তিনি স্ত্রীর উৎসাহে নগর দেওয়ালের উপর একটি সুন্দর বাগান তৈরি করেন যা ইতিহাসে ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান (Hanging Gardens of Babylon) নামে পরিচিত। ব্যাবিলন শব্দের অর্থ ঈশ্বরের দরজা। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করায় তিনি হাজার হাজার হিব্রুকে (ইহুদি) বন্দী করে নিয়ে আসে যা ব্যাবিলনীয় বন্দীদশা (Babylonian Captivity) নামে পরিচিত।
- সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতা : এটি ব্রোঞ্জ যুগীয় সভ্যতা। সিন্ধু নদীর তীরে গড়ে ওঠে বলে এটি সিন্ধু সভ্যতা নামে পরিচিত। এই সভ্যতার শ্রেষ্ঠ দুটি শহর হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো।
১৯২২ সালে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় পাকিস্তানের লারকানা জেলায় মহেঞ্জোদারো নগরীর ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন। সিন্ধু সভ্যতায় পাওয়া সীল ও মাটির পাত্রের সাথে মেসোপটেমিয়া সভ্যতার দ্রব্যের মিল আছে। সিন্ধু সভ্যতার প্রতিষ্ঠাতা ছিল দ্রাবিড়গণ। সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসপ্রাপ্ত আবিষ্কৃত নগরগুলো হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো, চানাহুদরো, লোথাল, কালিবঙ্গান ও বনত্তালি।
সিন্ধু সভ্যতা আবিষ্কার করেন চার্লস ম্যাশন, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, বাহাদুর দয়ারাম সোহানী ও স্যার জন মার্শাল। ১৮৭৫ সালে ইংরেজ প্রত্নতত্ত্ববিদ কানিংহাম হরপ্পার অপরিচিত একটি সীলের সন্ধান পান। এছাড়াও বি. বি লাল ও বি. কে থাপার নেতৃত্বে ১৯৬১-৬৯ পর্যন্ত খনন কাজের ফলে রাজস্থানের কালিবঙ্গান আবিষ্কৃত হয়। - ফিনিশীয় সভ্যতা : লেবানন ও ভূমধ্যসাগরের মাঝামাঝি ক্ষুদ্র একটি ভূমিতে ফিনিশীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। তাদের আয়ের একমাত্র উৎস ছিল বাণিজ্য। প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাসে ফিনিশীয়রা শ্রেষ্ঠ নাবিক ও জাহাজ নির্মাতা হিসেবে পরিচিত। ধ্রুবতারা দেখে সময় নির্ণয় করায় অনেকেই ধ্রুবতারাকে ফিনিশীয় তারা বলেন।
গ্রিক শব্দ Phoenix থেকে ফিনিশীয় নামের উদ্ভব। এর অর্থ purple বেগুনি রং। দ্বিতীয় সহস্রাব্দের মধ্যভাগে বস্ত্র রাঙানোর জন্য আহরিত খোলসযুক্ত মাছের শরীর থেকে বেগুনি রং সংগ্রহ করা হত। এ সংগ্রহের সাথে ফিনিশীয়রা জড়িত ছিল বলে গ্রিকরা তাদের বেগুনি বর্ণের মানুষ বলত।
- পারস্য সভ্যতা : বর্তমান ইরানে পারস্য সভ্যতা গড়ে ওঠে। এই সভ্যতার অধিবাসীরা সামরিক শক্তিতে খ্যাতিমান ছিল। সুষ্ঠু প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও জরথ্রুস্টবাদ ধর্ম প্রচলনে এই সভ্যতা বড় অবদান রাখে। মৃতের সৎকারের জন্য চিলঘর ব্যবহার করত জরথ্রুস্ট ধর্মালম্বীরা। পারস্যের ইতিহাসে সাইরাস ও দারিয়ুস ছিলেন সফল শাসক। শাসন ব্যবস্থার সুবিধার জন্য দারিয়ুস পারস্য সাম্রাজ্যের জন্য পৃথক চারটি রাজধানী (ব্যাবিলন, পার্সেপলিস, সুসা, একরাটানা) করেন। এছাড়াও জরথ্রুস্ট ধর্মাবলম্বীরা অগ্নিপূজা করতেন। জরথ্রুস্ট দেবতার নাম ‘আহুরামজাদা’ ও ধর্মগ্রন্থ ‘আবেস্তা’।
- হিব্রু সভ্যতা : ফিলিস্তিনের জেরুজালেম নগরীকে কেন্দ্র করে হিব্রু সভ্যতার বিকাশ ঘটে। হিব্রু সেমেটিক জাতীয় একটি ভাষার নাম। হিব্রু অর্থ নীচু বংশের লোক বা যাযাবর।
- মিশরীয় সভ্যতা : ৩২০০ খ্রিস্টপূর্বে মেনেস নামক এক রাজা সমগ্র মিশরকে একত্র করে একটি নগর রাষ্ট্র গড়ে তোলে। দক্ষিণ মিশরের মেস্ফিস ছিল তার রাজধানী। প্রাচীন মিশরের রাজাদের বলা হত ফারাও। ফারাও রাজাদের মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য পিরামিড তৈরি করা হত। পৃথিবীর প্রাচীনতম কীর্তিস্তম্ভ পিরামিড।
মিশরীয় ভাস্করদের সবচেয়ে বড় গৌরব স্ফিংস তৈরিতে। অনেক পাথরের গায়ে ফুটিয়ে তোলা হত এই মূর্তি যা ফারাওদের আভিজাত্য ও শক্তির প্রতীক ছিল।
মিশরীয়রা একটি লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার করে যা হায়ারোগ্লিফিক (অর্থ : পবিত্র লিপি) নামে পরিচিত। এটি অক্ষরভিত্তিক মিশরীয় চিত্র ছিল। নলখাগড়া জাতীয় ঝোপ প্যাপিরাস থেকে কাগজ তৈরি করে লেখা হত। সম্রাট নেপোলিয়ন মিশরীয় সভ্যতার রোজেটা নামক পাথর খুঁজে পান, যা থেকে পরবর্তীতে হায়ারোগ্লিফিক ভাষার পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়।
মিশরকে নীলনদের দান বলেছেন হোরাডোটাস। ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নির্মাতা বলা হয় মিশরীয়দের।
- গ্রিক সভ্যতা : গ্রিক ও গ্রিস শব্দ দুটি যথাক্রমে জাতি ও দেশ। গ্রিস কোনো সংযুক্ত রাষ্ট্র ছিল না। গ্রিস ছিল গ্রীক ভাষাভাষি একগুচ্ছ নগর রাষ্ট্রের সমষ্টি। ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বের মিনোয়ান’রা গ্রিসের বৃহত্তম দ্বীপ ক্রীটে বাস করতে শুরু করে। এরাই ভূমধ্যসাগর অঞ্চলে সভ্যতার শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ২০০০ খ্রিস্টপূর্বে মূল ভূখণ্ডে মাইসেনিয়ান সভ্যতার বিকাশ ঘটে। ১২০০ খ্রিস্টপূর্বে মাইসেনিয়ান সাম্রাজ্যের সাথে ট্রয়ের দশ বছর ব্যাপী যুদ্ধ হয় যা ইতিহাসে ট্রয় যুদ্ধ নামে পরিচিত। খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সালে এথেন্সে বিশ্বের প্রথম নগররাষ্ট্র ও ৭২৫ খ্রিস্টপূর্বে স্পার্টায় এক যুদ্ধবাজ সাম্রাজ্যের উত্থান হয়।
৪৩১-৪০৪ পূর্বাব্দের মধ্যে এথেন্স ও স্পার্টার মধ্যে ইতিহাস খ্যাত পেলোপোলেশিয়ান যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে স্পার্টা বিজয়ী হয় ও এথেন্সের পরাজয় হয়।
প্রাচীন গ্রিসে মৃৎপাত্রের গায়ে চিত্রকর্ম আঁকা হত। ইলিয়ড রচিয়তা মহাকবি হোমার গ্রীসের অধিবাসী ছিলেন।
- রোমান সভ্যতা : প্রাচীনকালের অধিকাংশ সভ্যতা নদীকেন্দ্রিক হলেও রোমান সভ্যতা নদীকেন্দ্রিক ছিল না। ইতালির রোমকে কেন্দ্র করে এই সভ্যতার বিকাশ ঘটে। ইন্দো-ইউরোপীয় গোষ্ঠির একদল লোক ২০০০ খ্রিস্টপূর্বে উত্তর ইতালিতে বসতি গড়ে তোলে যারা ল্যাটিন নামে পরিচিত।
ইতালির অর্থনীতি ছিল দাস শ্রম নির্ভর অর্থনীতি। দাসদের উপর চরম অত্যাচার করা হত। অবেশেষে স্পার্টাকাস নামক একজন ক্রীতদাসের নেতৃত্বে দাস বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। স্পার্টাকাসের মৃত্যুর পর দাস বিদ্রোহের অবসান ঘটে।
রোমের বিখ্যাত সম্রাট ছিলেন জুলিয়াস সিজার। তিনি এশিয়া মাইনর জয় করে উক্তি করেছিলেন, Veni, vidi, vici. (এলাম, দেখলাম, জয় করলাম)। খ্রিস্টপূর্ব ৫৫ সালে তিনি বৃটেন আক্রমণ করেন এবং খুব সহজেই জয় করেন। তিনি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন।
৪৭৬ সালে রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। রোমান সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব আইন প্রণয়নে। বাজেন্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ান সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ রোমান আইন সংকলন করেন। আইনের ক্ষেত্রে আধুনিক বিশ্ব অনেকাংশেই রোমান আইনের উপর নির্ভরশীল। রোমান আইন যে কয়টি শাখাকে ভাগ করা হয়-
এক. বেসামরিক আইন : এই আইন পালন করা রোমান নাগরিকদের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। এই আইন লিখিত ও অলিখিত দুই রকম ছিল।
দুই. জনগণের আইন : এ আইন সকল নাগরিকের জন্য প্রযোজ্য ছিল। তাছাড়া ব্যক্তিগত অধিকার রক্ষার বিষয়টি এ আইনে ছিল। তবে এর মাধ্যমে দাসপ্রথা স্বীকৃতি লাভ করে। সিসেরো এ আইনের প্রণেতা।
তিন. প্রাকৃতিক আইন : এ আইনে মূলত নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষার কথা বলা হয়েছে।
- চৈনিক সভ্যতা : প্রাচীন চীনে তিনটি স্থানে চৈনিক সভ্যতা গড়ে ওঠে। যথা-
ক. হোয়াংহো নদীর তীরে
খ. ইয়াংসিকিয়াং নদীর তীরে
গ. দক্ষিণ চীনে - চীনের প্রাচীনতম দার্শনিক ছিলেন লাওৎসে। তাঁর মতবাদকে তাওবাদ বলা হয়।
চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী দার্শনিক ছিলেন কনফুসিয়াস। কনফুসিয়াসের অনুসারীদের ‘মেনসিয়াস’ বলা হয়। - সান জু : প্রাচীন চীনের একজন সমরনায়ক, যুদ্ধকৌশলী ও দার্শনিক। তাঁকে ‘আর্ট অব ওয়ার’ নাম যুদ্ধবিদ্যার প্রাচীন চৈনিক বইটির রচিয়তা মনে করা হয়।
- প্রাচীন সভ্যতার কেন্দ্র : আনাতোলিয়া।
- নারা সভ্যতা : নারা যুগ হল জাপানের ইতিহাসে ৭১০-৭৯৪ সাল পর্যন্ত স্থায়ী একটি যুগ। সম্রাজ্ঞী গেনমেই বর্তমান নারা শহরে হেইজো-কিও নামে নতুন একটি রাজধানী স্থাপন করে।
- হেলেনিস্টিক সভ্যতা : গ্রিসের উত্তরে মেসিডন অঞ্চলে গড়ে ওঠে নতুন সভ্যতা যা হেলেনিস্টিক সভ্যতা নামে পরিচিত। রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ৩৫৯ খ্রিস্টপূর্বে এই ভূখণ্ডের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেন। পারস্যের বিরুদ্ধে গ্রিক শক্তিগুলোকে একত্র করে তিনি হেলেনিক লিগ তৈরি করেন। রাজা ফিলিপ গুপ্তহত্যার শিকার হলে তার ছেলে বীর আলেকজান্ডার পারস্য দখল করেন।
- বিভিন্ন সভ্যতার অবদান-
সভ্যতা অপর নাম/ স্থান অবদান মেসোপটেমিয়া সুমেরীয় নতুন লিখন পদ্ধতি (কিউনিফর্ম), পাটিগণিতের গুণ পদ্ধতি, চাকা আবিষ্কার, কিউনিফর্ম অনেকটা ঠ আকৃতির অক্ষরের মত ছিল ব্যাবিলনীয় আইন প্রণয়ন, পঞ্জিকার প্রচলন, পৃথিবীর প্রথম মহাকাব্য ‘গিলগামেশ’ রচিত হয় (কিউনিফর্ম রীতিতে) অ্যাসেরীয় যুদ্ধবিদ্যা, পৃথিবীকে অক্ষাংশ+ দ্রাঘিমাংশে বিভক্তিকরণ, বৃত্তকে ৩৬০ ডিগ্রীতে বিভক্তিকরণ, যুদ্ধে লোহার অস্ত্র ব্যবহার ক্যালেডীয়/নতুন ব্যাবিলনীয় ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান, ক্যালেন্ডার, দিনকে ১২ ঘন্টায় বিভক্তি, ৭ দিনে এক সপ্তাহ, ১২টি নক্ষত্রপুঞ্জের সন্ধান মিশরীয় নীল নদের তীরে লিখন পদ্ধতি (হায়রোগ্লিফিক), মমি, স্ফিংস, পিরামিড, জ্যোতির্বিদ্যা, ১২ মাসে ১ বছর, ৩০ দিনে মাস, একেশ্বরবাদী ধর্ম গ্রিক গ্রিস প্রথম মানচিত্র অঙ্কন, নগর রাষ্ট্র, জ্যামিতি, গণিত, গণতন্ত্র, অলিম্পিক, ফিনিশীয় পরবর্তী স্বরবর্ণ যোগ করে বর্ণমালাকে সমৃদ্ধকরণ সিন্ধু/ হরপ্পা পাকিস্তানের হরপ্পা ও মহেঞ্জাদারো ২৭০ ধরনের শিলালিপি, পরিকল্পিত নগর ব্যবস্থা, বাটখারা পরিমাপ পদ্ধতি, স্কেল ব্যবহার, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, সড়ক বাতি হিব্রু জেরুজালেম, জর্ডান নদী ধর্ম, একেশ্বরবাদের ধারণা পারস্য/ একমেনিড বর্তমান ইরান সুষ্ঠু ও দক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থা, জরথ্রুস্টবাদ ধর্ম প্রচলন ফিনিশীয় লেবানন পর্বত ও ভূমধ্যসাগরের মাঝামাঝি বর্ণমালা হিসেবে ২২টি ব্যঞ্জনবর্ণ উদ্ভাবন চৈনিক চীন আমলাতন্ত্রের প্রচলন, ঘুড়ির উৎপত্তি, আইডিওগ্রাফ লিখন পদ্ধতি রোমান রোম আইন সংকলন বাইজানটাইন পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য ইনকা পেরুর দক্ষিণাঞ্চল ইনকা অর্থ অলংকার। ইনকা সভ্যতার স্থপতি মানকো কাপেন। ইনকা সা¤্রাজ্যের সরকারি নাম ক্যুয়চুয়া। ইনকা জাতির আবাস ছিল এশিয়ায়। বোরিং প্রণালি পার হয়ে দক্ষিণ আমেরিকায় বসতি গড়ে তোলে। ইনকা সভ্যতার ভিত্তিভূমি পেরু। মাচ্চু পিচ্চুর আবিষ্কারক হিরাম বিংহ্যাম। যুদ্ধবাজ সেনাপতিরা ইনকা সভ্যতায় শাসন করত। আজটেক মেক্সিকো মায়া মেক্সিকো ও গুয়াতেমালা অঞ্চল আকসুম ইথিওপিয়া ও পূর্ব আফ্রিকা নগর ও বাণিজ্য কেন্দ্র
- এই সম্পর্কে লেখাগুলো পাবেন অনুশীলন আন্তর্জাতিক বইতে।