সোনার তরী
গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা। (বর্ষার চিত্রকল্প)
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা। (সৃষ্টিকর্ম নিয়ে অপেক্ষমান কৃষকের বিলীন হওয়ার আশঙ্কা)
রাশি রাশি ভারা ভারা (ধান রাখার পাত্র)
ধান কাটা হল সারা, (সৃষ্টিকর্ম করা শেষ)
ভরা নদী ক্ষুরধারা (ক্ষুরের মতো ধারালো স্রোত)
খরপরশা। (ধারালো বর্শা)
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা। (জীবন চলতে চলতে মৃত্যু আসা)
একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা, (নিঃসঙ্গ অবস্থা)
চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা। (সময়ের প্রবহমানতা)
পরপারে দেখি আঁকা (পরকালীন জীবনের কল্পনা)
তরুছায়ামসী মাখা (মহাকালের অতল অন্ধকার)
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
প্রভাতবেলা– (পরকালীন জীবন অন্ধকারময় মনে করে কল্পনা)
এপারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা।
গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে, (নির্মোহ মহাকালের প্রতীক)
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
ভরা-পালে চলে যায়,
কোনো দিকে নাহি চায়, (মহাকাল সৃষ্টিশীল মানুষের প্রতি নিরাসক্ত)
ঢেউগুলি নিরুপায়
ভাঙে দু-ধারে- (নিরুপায় ঢেউগুলো কেবল স্মৃতি রেখে যায়, কখনো পিছনে ফিরে তাকায় না)
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
ওগো, তুমি কোথা যাও কোন বিদেশে, (মাঝির দৃষ্টি আকর্ষণ)
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে। (চিরায়ত শিল্পলোকে ঠাঁই পেতে কৃষকের অনুরোধ)
যেয়ো যেথা যেতে চাও,
যারে খুশি তারে দাও,
শুধু তুমি নিয়ে যাও
ক্ষণিক হেসে
আমার সোনার ধান কূলেতে এসে। (কবির সৃষ্টিকর্ম যেন মাঝির নৌকায় স্থান পায়)
যত চাও তত লও তরণী-‘পরে। (উপরে)
আর আছে?- আর নাই, দিয়েছি ভরে। (সৃষ্টিকর্ম নিবেদন)
এতকাল নদীকূলে (জীবনের প্রান্তে)
যাহা লয়ে ছিনু ভুলে (নিজের ভুলের জন্য অনুশোচনা)
সকলি দিলাম তুলে
থরে বিথরে (সুবিন্যস্ত করে)
এখন আমারে লহ করুণা করে। (বাঁচার প্রবল ইচ্ছা)
ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই- ছোটো সে তরী (সোনার তরী কেবল কর্মকেই গ্রহণ করা হয়)
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবণগগন ঘিরে
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে
রহিনু পড়ি- (নিঃসঙ্গ ও অপূর্ণতার বেদনা নিয়ে কৃষকের বিলীন হওয়ার অপেক্ষা)
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।
- কবিতায় ব্যবহৃত রূপক শব্দাবলি-
গগন (জীবন)
মেঘ, বরষা (প্রতিকূলতার ইঙ্গিত)
কূলে (জীবেনর প্রান্ত)
সোনার ধান (সৃষ্টিকর্ম)
ছোট খেত (মানুষের কর্মক্ষেত্র)
বাঁকা জল (সময়ের প্রবহমানতা)
পরপার (মৃত্যু পরবর্তী জগৎ)
তরুছায়ামসী (মহাকালের অতল অন্ধকার)
গ্রামখানি (পরকালীন জীবন)
ঢেউ (প্রবহমান সময়)
বিদেশ (চিরায়ত শিল্পলোকের প্রতীক) - আরও পড়ুন : আমি কিংবদন্তির কথা বলছি