সৈয়দ বংশের শাসনের ইতিবৃত্ত
তুঘলক শাসনের পর সৈয়দ শাসকরা ক্ষমতায় আসে। তৈমুর লংয়ের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ভারতবাসী সামলে নেয়। কয়েক দশক পর সৈয়দ বংশের শাসনের বিলুপ্তি ঘটে।
খিজির খান কীভাবে ক্ষমতায় বসে?
- মাহমুদ শাহের মৃত্যুর পর দিল্লীর আমিরদের একাংশ দৌলত খান লোদী নামক একজনকে সিংহাসনে বসায়। কিন্তু তার সিংহাসনপ্রাপ্তি অনেকের মনঃপূত হয়নি। এই অনিশ্চয়তার সুযোগে ১৪১৪ সালে খিজির খান দিল্লী দখল করেন। তিনি নিজেকে মুহাম্মদ (সা.) এর বংশধর দাবি করতেন। সেই হিসেবে তিনি সৈয়দ বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
- খিজির খান : সৈয়দ বংশের অন্যতম সফল শাসক ছিলেন। কোন ধরনের রাজকীয় উপাধি গ্রহণ না করে কেবল ‘রায়াত-ই-আলা’ উপাধি নিয়ে তিনি তৈমুর লংয়ের প্রতিনিধি হিসেবে রাজ্য শাসন করেন। গোয়ালিয়র, এটোয়া ও মেওয়াট প্রভৃতি অঞ্চলে সফলতার সাথে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনেন। তৈমুরের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ সহায়তা করেন। তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে সুলতান ছিলেন না কিন্তু তাদের চেয়েও অধিক জনপ্রিয় ছিলেন। ১৪২১ সালে তিনি মারা যান।
-
মুবারক শাহের শাসন
- মুবারক শাহ : খিজির খানের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মুবারক শাহ ক্ষমতায় আসেন। তিনিও পিতার ন্যায় জনপ্রিয় সুলতান ছিলেন। সিংহাসনে আরোহণের পর অনেক অঞ্চলে অরাজকতা দেখা দেয়। খোক্কার উপজাতির নেতা জাসরাত দিল্লি দখল করার পরিকল্পনা করে। ভাতিন্দা ও দোয়াব অঞ্চলে বিদ্রোহ হলে তিনি কঠোরভাবে দমন করেন। আমিরদের বিদ্রোহী মনোভাব দূর করার জন্য তিনি প্রশাসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনেন। তৈমরের দুর্বল উত্তরাধিকারীদের আনুগত্য অস্বীকার করে তিনি মিশরের খলিফার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন। তিনি স্বাধীন শাসক হিসেবে ‘মুইজুদ্দিন মুবারক শাহ’ উপাধি ধারণ করে নিজ নামে মুদ্রা অঙ্কন করেন। যমুনা নদীর তীরবর্তী স্থানে মোবারকবাদ নামক একটি শহর নির্মাণ করেন। উজির সারওয়ারুল মুলুকের ষড়যন্ত্রে ১৪৩৪ সালে নামাযরত অবস্থায় তাঁকে হত্যা করা হয়। তাঁর শাসনামলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি ঐতিহাসিক গ্রন্থ ‘তারিখই মুবারক শাহী’। ঐতিহাসিক ইয়াহিয়া বিন আহমদ গ্রন্থটি রচনা করেন।
- মুহম্মদ শাহ : মুবারক শাহের পুত্র সন্তান না থাকায় ভাতিজা মুহম্মদ শাহ দিল্লির সিংহাসনে বসেন। তিনি ছিলেন যেমনি কোমল তেমনি কঠোর। তিনি জ্ঞানীদের বেশ কদর করতেন। সিংহাসনে বসেই চাচার হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে সারওয়ারুল মুলুককে হত্যা করে। তাঁর দুর্বলতার সুযোগে বিভিন্ন আমির ও প্রাদেশিক শাসকরা বিদ্রোহ করে। মালবের শাসক মাহমুদ খলজি ও লাহোরের শাসক বাহলুল খান লোদী দিল্লি দখলের চেষ্টা করে। তবে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এই সময় গোয়ালিয়র রাজ্য কর প্রদানে অস্বীকার করে এবং জৌনপুরের ইব্রাহিম শার্কি দিল্লির কয়েকটি পরগনা দখল করে। ১৪৪৫ সালে তিনি মারা যান।
- আলম শাহ : মুহাম্মদ শাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আলাউদ্দিন সিংহাসনে বসেন। তিনি তুলনামূলকভাবে দুর্বল প্রকৃতির শাসক ছিলেন। তাঁর শাসনামলে দেশে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। আমিররা শাসক পরিবর্তন করার খেলায় লিপ্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী হামিদ খান বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দেয়। সুলতান ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিরসনে সুলতান বাহলুল লোদীর সহায়তা কামনা করেন। বাহলুল হামিদ খানকে পরাজিত করে। তারপর বাহলুল নিজেই দিল্লির দখল করে নিলে আলাউদ্দিন তাঁর নিকট ক্ষমতা দিয়ে বাদাউনে চলে যান। বাহলুল ১৪৫১ সালে নিজেকে সুলতান হিসেবে ঘোষণা করে এবং লোদি বংশের গোড়াপত্তন করেন।
- পূর্ববর্তী আলোচনা পড়ুন : তুঘলক শাসনের ইতিহাস
পরবর্তী আলোচনা পড়ান : লোদী শাসনের ইতিহাস