নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় (ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সমন্বয়)
(দৃষ্টিসীমা অতিক্রমী) নিলক্ষা আকাশ নীল, হাজার হাজার তারা ঐ নীলে অগণিত আর
নিচে গ্রাম, গঞ্জ, হাট, জনপদ, লোকালয় আছে উনসত্তর হাজার। (একদিকে অনেক তারা জ্বলছে অন্যদিকে বাংলায় সমৃদ্ধ জনপদে পূর্ণ)
ধবল দুধের মতো জ্যোৎস্না তার ঢালিতেছে চাঁদ-পূর্ণিমার।
(সর্বত্র প্রতিকূল পরিবেশ) নষ্ট খেত, নষ্ট মাঠ, নদী নষ্ট, বীজ নষ্ট, বড় নষ্ট যখন সংসার (শাসকের নির্যাতনে সবকিছু নষ্ট)
তখন হঠাৎ কেন দেখা দেয় নিলক্ষার নীলে তীব্র শিস (প্রতিবাদী মনোভাব জাগানো)
দিয়ে এত বড় চাঁদ? (সম্ভাবনার ইঙ্গিত)
অতি অকস্মাৎ
(শাসকের অত্যাচারে নিস্তব্ধ) স্তব্ধতার দেহ ছিঁড়ে কোন ধ্বনি? কোন শব্দ? কিসের প্রপাত? (বীরপুরুষের আগমন ধ্বনি)
গোল হয়ে আসুন সকলে,
ঘন হয়ে আসুন সকলে,
আমার মিনতি আজ স্থির হয়ে বসুন সকলে। (আন্দোলনে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান)
(অতীতের গৌরবময় স্মৃতি) অতীত হঠাৎ হাতে হানা দেয় মানুষের বন্ধ দরোজায়।
এই তীব্র স্বচ্ছ পূর্ণিমায়
নুরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়। (এই অরাজক পরিস্থিতিতে নূরলদীনের মতো মহাপুরুষের কথা মনে পড়ে যায়)
(দুর্দশাগ্রস্ত প্রাতিবাদহীন চেতনা) কালঘুম যখন বাংলায় (পাকিস্তানিদের আক্রমণে মৃত্যুপুরীর মতো বাংলা)
তার দীর্ঘ দেহ নিয়ে আবার নূরলদীন দেখা দেয় মরা আঙিনায়। (মৃত্যুপুরীর মতো নীরব বাংলায়)
নূরলদীনের বাড়ি রংপুরে যে ছিল,
রংপুরে নূরলদীন একদিন ডাক দিয়েছিল
১১৮৯ সনে। (১৭৮২ সাল)
আবার বাংলার বুঝি পড়ে যায় মনে,
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন শকুন (বিদেশি অপশক্তি) নেমে আসে এই সোনার বাংলায়; (শাসকদের অত্যাচার বেড়ে যাওয়া)
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমার দেশ ছেয়ে যায় দালালেরই আলখাল্লায়; (দেশদ্রোহী শক্তি)
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমার স্বপ্ন লুট হয়ে যায়; (শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ জীবনের স্বপ্ন)
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমার কণ্ঠ বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়; (বাক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার হরণ)
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমারই দেশে এ আমার দেহ থেকে রক্ত ঝরে যায় (১৭৫৭, ১৮৫৭, ১৯৫২, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯)
ইতিহাসে, প্রতিটি পৃষ্ঠায়। (প্রতিটি সংগ্রামের ইতিহাস)
আসুন, আসুন তবে, আজ এই প্রশস্ত প্রান্তরে; (আন্দোলনের উপযুক্ত ক্ষেত্র/ রেসকোর্স ময়দান)
যখন স্মৃতির দুধ জ্যোৎস্নার সাথে ঝরে পড়ে, (সংগ্রামী বাঙালির গৌরবময় স্মৃতি)
তখন কে থাকে ঘুমে? (প্রতিক্রিয়াহীন) কে থাকে ভেতরে? (সংগ্রাম থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখে)
কে একা নিঃসঙ্গ বসে অশ্রুপাত করে? (শোকের অশ্রুকে সংগ্রামে পরিণত করতে হয়)
সমস্ত নদীর অশ্রু অবশেষে ব্রহ্মপুত্রে মেশে। (শোকের অশ্রুতে ব্রহ্মপুত্রের সৃষ্টি। এখানে গভীর বেদনা প্রকাশ)
নূরলদীনের কথা যেন সারা দেশে
পাহাড়ী ঢলের মতো (অনুপ্রাণিত হয়ে) নেমে এসে সমস্ত ভাসায়, (বিপ্লব ও গণজোয়ার সৃষ্টি)
অভাগা (মুক্তির জন্য নির্যাতিত) মানুষ যেন জেগে ওঠে আবার এ আশায়
যে, আবার নূরলদীন একদিন আসিবে বাংলায়,
আবার নূরলদীন একদিন কাল পূর্ণিমায়
দিবে ডাক, “জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়?” (অন্যায় দূর করার আহ্বান)
- কবিতাটি গদ্যছন্দে রচিত। এটি ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ কাব্যনাটক থেকে নেওয়া হয়েছে।
- আরও পড়ুন- পদ্মা কবিতার ব্যাখ্যা