বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলি
- জাতীয় প্রতীকের ডিজাইনার কামরুল হাসান। জাতীয় প্রতীকে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। যথা-
ক. ভাসমান ফুটন্ত শাপলা (অঙ্গীকার, সৌন্দর্য ও সুরুচির প্রতীক)
খ. চারটি তারকা (জাতির লক্ষ্য ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা)।
গ. পানি, ধানের শীষ ও পাট গাছের দুটি পাতা (বাংলাদেশের নিসর্গ ও অর্থনীতি)। জাতীয় প্রতীক মন্ত্রিসভা অনুমোদন করে ১৯৭২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। জাতীয় প্রতীক ব্যবহার করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি। - রাষ্ট্রীয় মনোগ্রামের ডিজাইনার এ.এন.এ.সাহা। লাল রঙের বৃত্তের মাঝে হলুদ রঙের বাংলাদেশের মানচিত্র রয়েছে। বৃত্তের উপরে লেখা ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ আর নিচে লেখা ‘সরকার’ এবং বৃত্তের দুপাশে দুটি করে চারটি তারা আছে। সরকারি অফিস, নথি, স্মারক ইত্যাদিতে রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম ব্যবহৃত হয়।
- জাতীয় স্মৃতিসৌধের অপর নাম সম্মিলিত প্রয়াস। এর স্থপতি সৈয়দ মাঈনুল হাসান। সৌধটিতে সাতটি স্তম্ভ আছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসের সাতটি বিষয় নির্দেশ করে। এটি ১৫০ ফুট উঁচু। এর দুই পাশে গণকবর আছে। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু এর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন ও ১৯৮২ সালে এরশাদ উদ্বোধন করেন।
- জাতীয় জাদুঘর : শাহবাগ জাতীয় জাদুঘর। এর স্থপতি ছিলেন মোস্তফা কামাল।
১৯১৩ সালের ৭ আগস্ট লর্ড কারমাইকেল ঢাকা জাদুঘর উদ্বোধন করেন। ১৯৮৩ সালে স্বায়ত্তশাসিত সংগঠন হিসেবে জাতীয় জাদুঘরের মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯৫১-১৯৬২ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরটির পরিচালনা করে। জাদুঘর ভবনের নকশাকার সৈয়দ মাঈনুল হাসান। বর্তমানে জাদুঘরটির অধীন চারটি শাখা জাদুঘর (ওসমানী জাদুঘর, জিয়া স্মৃতি জাদুঘর, আহসান মঞ্জিল, জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা) আছে। - জাতীয় পতাকার ডিজাইনার কামরুল হাসান। বিদেশে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় কলকাতাস্থ বাংলাদেশ মিশনে। ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি থেকে পতাকার এই রূপটি গৃহীত হয়। অনুপাত ১০ : ৬। পতাকার বৃত্তটির ব্যাসার্ধ পতাকার ৫ ভাগের ১ ভাগ। লাল বৃত্ত একটু বাম পাশে। মানচিত্র খচিত পতাকার ডিজাইনার শিব নারায়ণ দাস। পতাকা অঙ্কন ও সর্বজনবিদিত করার জন্য মানচিত্র খচিত পতাকা বাদ দেয়া হয়।
- জাতীয় সংগীত : আমার সোনার বাংলা। ১৯০৫ সালে (১৩১২ বঙ্গাব্দ) বঙ্গভঙ্গের প্রেক্ষিতে গানটি রচিত হয়। প্রথম প্রকাশিত হয় বঙ্গদর্শন পত্রিকায় (১৯০৫)। গানটি ‘গীতবিতান’ কাব্যগ্রন্থের স্বরবিতান অংশ থেকে নেওয়া। বাউল গগণ হরকরার সুর অনুকরণে সুর করা হয়েছে। মোট চরণ ২৫টি। জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে বিবেচিত ১০ লাইন।
১৯৭১ সালের ৩রা মার্চের ইশতেহারে গানটিকে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেয়া হয়। জাতীয় সংগীতের ইংরেজি অনুবাদ করেন সৈয়দ আলী আহসান। গানটিতে প্রাধান্য পেয়েছে বাংলার প্রকৃতির কথা।
রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের বাজানো হয় প্রথম ৪ লাইন। বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের রচিয়তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জহির রায়হান পরিচালিত জীবন থেকে নেওয়া চলচ্চিত্রে সর্বপ্রথম জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়।
- জাতীয় দিবস : ২৬ মার্চ ১৯৮০ সাল থেকে দিনটি জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে।
- জাতীয় পাখি : দোয়েল।
- জাতীয় মাছ : ইলিশ।
- জাতীয় বন : সুন্দরবন।
- জাতীয় নদী : যমুনা। এটি ব্রহ্মপুত্র নদীর প্রধান শাখা। পূর্বনাম জোনাই। ১৭৮৭ সালের বন্যায় ব্রহ্মপুত্র নতুন খাতে প্রবাহিত হয়ে এই নদীর সৃষ্টি হয়েছে।
- জাতীয় পশু : রয়েল বেঙ্গল টাইগার ভারতের জাতীয় পশু বেঙ্গল টাইগার।
সুন্দরবনের অধিকাংশ বাংলাদেশের হওয়ায় বাংলাদেশকে রয়্যালিটি দেয়া হয়েছে। তার জন্য আগে রয়্যাল শব্দটির উল্লেখ থাকে। উল্লেখ্য, পশুর আসল নাম বেঙ্গল টাইগার। - জাতীয় ফুল : শাপলা। এমন বহুল পরিমাণে শাপলা বিশ্বের আর কোথায় পাওয়া যায় না। শাপলার পাপড়ি একসাথে ফুটে ও বন্ধ হয়, এটি বাঙালির ঐক্যের প্রতীক। বাংলাদেশ ছাড়াও শ্রীলংকার জাতীয় ফুল নীল শাপলা।
- জাতীয় উদ্যান : ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান। জাতীয় উদ্যান বলতে মনোরম ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবিশিষ্ট অপেক্ষাকৃত বৃহত্তর এলাকা, যার মুখ্য উদ্দেশ্য প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর দৃশ্য, উদ্ভিদকুল রক্ষা এবং শিক্ষা ও গবেষণার জন্য জনসাধারণের প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে। বাংলাদেশে ১৯টি উদ্যানকে জাতীয় উদ্যান বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বৃহৎ ৪টি জাতীয় উদ্যান হচ্ছে- ভাওয়াল, কাপ্তাই, মধুপুরও নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান।
- জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান : বোটানিক্যাল গার্ডেন। প্রায় ৫০ হাজার প্রজাতির গাছ আছে বলে ধারণা করা হয়
- জাতীয় উৎসব : বাংলা নববর্ষ, ১লা বৈশাখ।
- জাতীয় খেলা : কাবাডি ১৯৭২ সালে হাডুডু খেলাকে কাবাডি নামে জাতীয় খেলার স্বীকৃতি দেয়। ১৯৯০ সালে খেলাটি প্রথমবারের মত এশিয়ান গেমসে অন্তর্ভূক্ত হয়।
- জাতীয় বৃক্ষ : আম গাছ। ১৫ নভেম্বর, ২০১০ সালে একে জাতীয় বৃক্ষের মর্যাদা দেওয়া হয়। বাংলাদেশের সর্বত্র আম গাছ পাওয়া যায় বলে জাতীয় বৃক্ষের মর্যাদা পায়।
- জাতীয় কবি : কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবিকে ঢাকায় আনা হয়। ১৯৭৪ সালে কবিকে ডিলিট দেওয়া হয়। ১৯৭৬ সালে কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়া হয়।
- জাতীয় মসজিদ : বায়তুল মোকাররম। ১৯৫৯ সালে শিল্পপতি লতিফ বাওয়ানি ও ইয়াহিয়া বাওয়ানির উদ্যোগে মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বিশিষ্ট স্থপতি টি. আবদুল হুসেন থারিয়ানিকে মসজিদ কমপ্লেক্সের নকশার জন্য নিযুক্ত করা হয়। পরে ১৯৬০ সালের ২৭ জানুয়ারি এই মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৬৮ সালে মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
- জাতীয় মন্দির : ঢাকেশ্বরী মন্দির। প্রচলিত আছে যে, রাজা বল্লাল সেন মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
- জাতীয় চিড়িয়াখানা : মিরপুর চিড়িয়াখানা। ১৯৫০ সালে হাইকোর্ট চত্বরে জীবজন্তুর প্রদর্শনশালা নির্মিত হয়। ১৯৭৪ সালে এটি মিরপুরে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৭৪ সালের ২৩ জুন এটি উদ্বোধন করা হয়।
- আরও পড়ুন : বাংলাদেশের প্রোফাইল
Blessed to visit your website, sir. ❤️
আপনাকে ধন্যবাদ