Skip to content

যা না জানলেই নয় (১ম পর্ব)

  • প্রচলিত ভুল

  • মনের ভাব প্রকাশে প্রতিনিয়ত আমরা ভাষার ব্যবহার করছি। এই ভাষার ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা অনেক কিছু ভুল জানি। আবার অনেক বিষয়ের পূর্ণ অর্থ জানি না। সেই বিষয়গুলো নিয়ে কৌতূহল থাকলেও দমিয়ে রাখার চেষ্টা করি। যা না জানলেই নয় সেসব কৌতূহলোদ্দীপক বিষয়গুলো নিয়েই আজকের আলোচনা-

  • ১. তেত্রিশ কোটি দেবতা নয় বরং ত্রেতিশ কটি দেবতা!   

  • হিন্দু ধর্মাবলম্বী অনেকেই ৩৩ কোটি দেবতা আছে বলে বিশ্বাস করেন। এমনকি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত বিলাসী গল্পেও তেত্রিশ কোটি দেবতার কথা বলা হয়েছে। মূলত শব্দটি কোটি নয়, কটি হবে। উচ্চারণগত পার্থক্যের কারণে অর্থের ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে।
  • ব্যাখ্যা : কটি সংস্কৃত শব্দ, যার প্রকৃত অর্থ হচ্ছে ‘প্রকার’ এবং দেবতা শব্দের অর্থ শক্তি। বাংলা ও সংস্কৃত মিলে ৩৩ কটি দেবতা হয়েছে। বেদ অনুসারে প্রকৃতির শক্তির দ্বারা এই বিশ্ব পরিচালিত হয়। সেই শক্তিকে ৩৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ৩৩ প্রকার শক্তি অর্থাৎ ৩৩ প্রকার দেবতা। অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এই বিষয়টি জানেন না। তাই শুদ্ধ বাক্য হবে ‘৩৩কটি দেবতা।’

      ২. দমকল বাহিনীর নামকরণ

  • প্রায় ১৫০ বছর আগে কলকাতা শহরে রাস্তার ধারে আলমারির মতো দেখতে কিছু পোস্ট থাকত যার দুদিকে সীল করে কাঁচ লাগানো থাকত। ভিতরে থাকত একটি হাতলওয়ালা কল। যখন কোথাও আগুন লাগতো তখন ঐ কাচ ভেঙে কলের হাতল ধরে ৭-৮ বার দম নিলে মাটির নিচে পাতা তার ধরে নিকটবর্তী ফায়ার বিগ্রেড অফিসে সাংকেতিক ভাষায় খবর যেত। তখন কোনো অঞ্চলের পোস্ট থেকে খবর এলে ঘোড়ায় টানা গাড়িতে করে জল ভর্তি ট্যাংক নিয়ে সরকারি লোকজন আগুন নেভাতে যেত। সেই থেকে ফায়ার বিগ্রেড এর নাম লোকমুখে হয় দম দেওয়া কল দিয়ে ডাকা বাহিনী, ছোটো করে ‘দমকল’ বাহিনী।

       ৩. ইত্যাদি বনাম প্রভৃতির মধ্যে পার্থক্য-

         বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান অনুসারে ইত্যাদি ও প্রভৃতি সমার্থক শব্দ। তবে শব্দ দুটির প্রয়োগে কিছুটা পার্থক্য আছে। যেমন-

  • ইত্যাদি : ইত্যাদি শব্দটি সমাস/ সন্ধির নিয়মে গঠন করা যায়। একই শ্রেণিভুক্ত কিছু সংখ্যক নাম উল্লেখ করে ঐ শ্রেণির একেবারে প্রথমটি থেকে শেষ পর্যন্ত বোঝাতে ইত্যাদি শব্দটি ব্যবহৃত হয়। যেমন- বাংলাদেশে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত ইত্যাদি ঋতু বিরাজমান। বাক্যটিতে ‘ইত্যাদির’ মাধ্যমে এরকম যতগুলো ঋতু আছে, তার সবকটিই বিরাজমান; এমনটি বোঝানো হচ্ছে। এমনিভাবে পরীক্ষার হলে কলম, পেন্সিল, স্কেল ইত্যাদি প্রয়োজনীয় পরীক্ষাসামগ্রী নিয়ে আসবে। এই বাক্যে ইত্যাদি শব্দ দ্বারা পরীক্ষার হলে আরও সেসব সামগ্রী প্রয়োজন, যা হলে দেওয়া থাকে না; তা নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে।
  • প্রভৃতি : বাক্যে কয়েকটি শব্দ/নাম উল্লেখ করার পর একই শ্রেণিভুক্ত আরও কিছু (সবগুলো নয়) শব্দ/নাম আছে, এমনটি বোঝানোর জন্য প্রভৃতি শব্দটি ব্যবহৃত হয়। যেমন-
    ক. বিয়েতে গাজর, শসা, টম্যাটো প্রভৃতি পদের সালাদ লাগবে।- বাক্যটিকে ‘প্রভৃতি’ শব্দটির মাধ্যমে উল্লেখ করা পদগুলোর মতো আরও কিছু পদের (সবজির) সালাদ লাগবে, এমনটি বোঝানো হয়েছে; সব ধরনের সবজির সালাদ লাগবে, এমনটি বোঝানো হয় নি।
    খ. ডালিম, কলা, স্যালাইন প্রভৃতি খাবার নিম্ন রক্তচাপকে স্বাভাবিক করে। এই বাক্যে প্রভৃতি শব্দটির মাধ্যমে উল্লেখ করা খাবারগুলোর মত আরও কিছু খাবার আছে, যেগুলো নিম্ন রক্তচাপকে স্বাভাবিক করে। এই বাক্যে ‘ইত্যাদি’ লিখলে অর্থ দাঁড়াবে- সব প্রকারের খাবারই নিম্ন রক্তচাপকে স্বাভাবিক করে।
  • ময়না তদন্ত : ময়না তদন্ত শব্দে ‘ময়না’ বাংলা শব্দ নয়। এটি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ অনুসন্ধান।
    আরবি মু’আইনা শব্দের অর্থ চক্ষু দিয়ে, প্রত্যক্ষভাবে, পরিষ্কারভাবে। বাংলায় এসে শব্দটি তার আসল রূপ হারালেও অন্তর্নিহিত অর্থ পুরোপুরি হারায় নি।

    ৪. প্রণোদনা ও ত্রাণের মধ্যে পার্থক্য-

    **প্রণোদনা : কর্মপ্রেরণা, কোনো কাজ করার উৎসাহ বা অনুপ্রেরণা। যেমন- ব্যবসায়ে মন্দা বা সংকটকালে সরকার সুদের হার কমিয়ে বা ভর্তুকি দিয়ে কিংবা সরাসরি অনুদানের মাধ্যমে প্রণোদনা দিয়ে থাকে। প্রণোদনার টাকা সাধারণত ফেরত দিতে হয়।
    **ত্রাণ : দুর্দশা বা বিপৎকালীন দৈনন্দিন পণ্য বা অর্থ দিয়ে সাহায্য করা। যেমন- বর্ষার সময় দুর্গত অঞ্চলে সরকার বা অন্যান্য সংগঠন ত্রাণ দেয়। তবে এই দান কখনো ফেরত দিতে হয় না।

  • ধর্ম সংকট : নীতি ঠিক রাখতে সংকটে পড়া। যেমন- একজন লোক আপনার কাছে আশ্রয় চাইল আপনি আশ্রয় দিলেন। তারপর কোনো দুর্বৃত্ত এসে তাকে হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে আপনার কাছে খবর নিতে আসল। আপনি সত্য বললে আশ্রিত লোকটির প্রাণ বিপন্ন হতে পারে। তাই আপনাকে মিথ্যা কথা বলতে হবে। মিথ্যা বলা পাপ। এর নামই ধর্মসংকট।

    ৫. মন্ত্রিসভা ও মন্ত্রিপরিষদের মধ্যে পার্থক্য-

  • মন্ত্রিসভা ও মন্ত্রিপরিষদের মধ্যে পাথক্য : মন্ত্রিসভা (Cabinet) সকল ধরনের মন্ত্রীদের (পূর্ণ মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী) নিয়ে গঠিত।
    অন্যদিকে মন্ত্রিপরিষদ (Council of Ministers) কেবল পূর্ণ মন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত।
  • অনুশীলন বাংলা ব্যাকরণ বইতে তথ্যগুলো সবিস্তারে পাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page