সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর করার জন্য কিছু জরুরি নির্দেশনা
- পরীক্ষার খাতায় সাধারণত এক পৃষ্ঠায় ১২-১৪ লাইন লিখতে হয়।
- সৃজনশীল উত্তর লেখার ক্ষেত্রে প্যারা আকারে লিখতে হবে। তবে প্যারার শুরুতে কোনো সিম্বল ব্যবহার না করাই ভালো।
- সৃজনশীল উত্তর লেখার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। যথা-
১. জ্ঞানমূলক প্রশ্ন : এ ধরনের উত্তরগুলো দুই ভাবে দেওয়া যায়।
এক কথায় উত্তর/ পরিপূর্ণ বাক্য লিখে উত্তর
২. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের জ্ঞানমূলক অংশের উত্তর দেওয়ার সময় ‘প্রাসঙ্গিক ঘটনা’ যথাযথ হতে হবে। এজন্য খুব খেয়াল করে মূল বইয়ের সাথে প্রাসঙ্গিকতা বের করতে হবে। অপ্রাসঙ্গিক উত্তর এখানে গ্রহণযোগ না। যেমন-
বায়ান্নর দিনগুলি প্রবন্ধে আছে ‘সামান্য হলেও স্বাধীনতার জন্য কাজ করেছি।’ এখানে ‘স্বাধীনতা’ দ্বারা উদ্দেশ্য ব্রিটিশদের থেকে পাকিস্তানের স্বাধীনতা।
কিন্তু পরীক্ষায় যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বা ভুল প্রসঙ্গে উত্তর লিখেন, তবে সে নম্বর পাওয়া যাবে না।
৩. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের জ্ঞানমূলক অংশ উত্তর করার সময় সাদৃশ্য/ বৈসাদৃশ্যগুলো নির্দিষ্ট করে দিতে হবে।
কেবল সাদৃশ্য আছে/ বৈসাদৃশ্য আছে (নির্দিষ্ট না করে) এভাবে লেখা যাবে না। উত্তর প্যাটার্ন এভাবে হবে-
জ্ঞানমূলক ˃ অনুধাবন ও মূল গল্প/ কবিতা˃ প্রয়োগ ও উদ্দীপক বিশ্লেষণ (কোনো মন্তব্য হবে না)
৪. উচ্চতর দক্ষতামূলক উত্তরের ক্ষেত্রে প্রথমে মন্তব্য ও পরে মন্তব্য প্রমাণ করতে হবে। এভাবে লেখা যেতে পারে-
মন্তব্যটি যথার্থ/ মন্তব্যটি যথার্থ নয়/ মন্তব্যটি আংশিক হলেও পরিপূর্ণরূপে যথার্থ নয়। - পদ্যময় উদ্দীপক থেকে এনসার করতে হলে পদ্যটি বারবার পড়ে মূলকথাটি বুঝতে হবে। বিশেষ করে শেষের দুই লাইনের সাথে সাদৃশ্য/ বৈসাদৃশ্য ইত্যাদি প্রশ্নানুসারে নির্ণয় করতে হবে।
- সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সাধারণ ৪ থেকে সাড়ে ৪ পৃষ্ঠার মধ্যে শেষ করতে হয়। তবে বিষয়ভেদে এটি ভিন্ন হতে পারে।
- সৃজনশীল উত্তরের ক্ষেত্রে উপস্থাপনা কৌশল ও হাতের লেখা বেশ গুরুত্ব বহন করে।
সৃজনশীলন প্রশ্নোত্তর লেখার মডেল-১ (অনুচ্ছেদ থেকে)
১. টিভিতে প্রচারিত একটি ম্যাংগো জুস কোম্পানির বিজ্ঞাপন চিত্রে দেখা যায়, কোম্পানির গাড়ি এসে কৃষকের গাছের সব আম পেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। কৃষকের স্কুল ফেরত কিশোর বালক এ ব্যাপারটি নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলে কৃষক তাকে এই বলে সান্ত্বনা দিচ্ছে, “আমাদের আম আমাদেরই থাকবে।” এর পরের দৃশ্যে দেখা যায়, সুদৃশ্য প্লাস্টিকের কৌটায় ম্যাংগো জুস নামীয় তরল পদার্থ, যাতে অর্ধেক আমেরও নির্যাস নেই, তা-ই কৃষক হাসিমুখে চারটি আমের দামে সন্তানকে কিনে খাওয়াচ্ছেন।
ক. সুখের বিষয় কোনটি?
খ. “আবার মজা দেখুন” লেখিকা কেন এই উক্তিটি করেছেন?
গ. উদ্দীপকটি চাষার দুক্ষু প্রবন্ধের কোন দিকটিকে ইঙ্গিত করে? নির্ণয় কর।
ঘ. “সভ্যতার সঙ্গে সঙ্গে অনুকরণপ্রিয়তার ভূত আমাদের কাঁধে চেপে আমাদের দরিদ্র্য করে রাখছে”- উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
১ নং প্রশ্নের উত্তর (ক)
পল্লীগ্রামের দুঃখ দুর্দশার প্রতি দেশবন্ধু নেতাদের দৃষ্টি পড়েছে।
১ নং প্রশ্নের উত্তর (খ)
পশ্চিমা সভ্যতার অনুকরণ করতে গিয়ে আমরা নিজেদের এন্ডি কাপড় পরিত্যাগ করেছি অথচ পশ্চিমারা অবলীলায় সেটি গ্রহণ করেছে বলে লেখিকা উপর্যুক্ত মন্তব্যটি করেছেন।
সুসভ্য হওয়ার গর্বে আমরা আমাদের শিল্প এন্ডি কাপড় পরিত্যাগ করেছি। অথচ ঐ এন্ডি কাপড়ই ‘আসাম সিল্ক’ নামে অভিহিত হয়ে কোর্ট, প্যান্ট ও স্কার্টরূপে ইউরোপীয় নর-নারীদের অঙ্গে শোভা পেতে লাগল। শুধু তাই নয়, আসাম থেকে এন্ডি গুটি বিদেশ যায় আবার সেখান থেকে বিভিন্ন সূত্রে আসামে ফিরে আসে। আমাদের এই নিজ পণ্যের ব্যাপারে উদাসীনতায় আশ্চর্য লেখিকা মন্তব্যটি করেছেন।
১ নং প্রশ্নের উত্তর (গ)
উদ্দীপকটি ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে প্রতিফলিত সভ্যতার সাথে সাথে অনুকরণপ্রিয়তার দিকটি ইঙ্গিত করে।
‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে আমরা দেখতে পাই, বিলাসিতা ও অনুকরণপ্রিয়তার কারণে কৃষক এন্ডি কাপড় বাদ দিয়ে বিচিত্র বর্ণের জুট ফ্ল্যানেল গ্রহণ করে। সে তার স্বাভাবিক কাজগুলো নিজে করে না। ধান ভানার জন্য ভারানি, কাপড় কাচার জন্য ধোপা, মুটে মজুর ট্রাম না হলে সে এগুতো পারে না- এসব কারণে ধীরে ধীরে সে স্বর্বস্বহারা হয়ে পড়ছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, প্রাকৃতিক পরিবেশে সনাতন ব্যবস্থায় আম খাওয়ার পরিবর্তে কৃষকের মধ্যে সুদৃশ্য প্লাস্টিক বোতলে আমের রস খাওয়ার শহুরে বিলাসিতা বা অনুকরণপ্রিয়তা প্রকাশ পেয়েছে। এর ফল হিসেবে অর্ধেক গুণগত মানের জিনিস তাকে চারটি আমের বিনিময়ে কিনতে হচ্ছে। কৃষকের এমন শহুরে অনুকরণপ্রিয়তা বা বিলাসিতাকে ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে লেখিকা ‘অনুকরণপ্রিয়তা নামক আরেকটা ভূত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
১ নং প্রশ্নের উত্তর (ঘ)
সভ্যতার সাথে সাথে অনুকরণপ্রিয়তার ঘোড়া রোগ গ্রাম বাংলার চাষাদের দারিদ্র্যের জালে আবদ্ধ করে রেখেছে- মন্তব্যটি যথার্থ।
চাষার দুক্ষু প্রবন্ধানুসারে আমরা দেখতে পাই, বিচিত্র বর্ণের জুট ফ্ল্যানেলের কারণে চাষা এন্ডি কাপড় পরিত্যাগ করে। যেখানে চাষা স্বাবলম্বী থাকায় অন্ন বস্ত্রের কাঙাল ছিল না, সেখানে তারাই অনুকরণপ্রিয়তার কারণে বিদেশি বস্ত্রের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে। এছাড়া চাষার বৌ-ঝিরা নিজেদের স্বাভাবিক কাজগুলো নিজেরা না করে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ধান ভানার জন্য ভারানি, কাপড় কাচার জন্য ধোপা, চলাচলের জন্য মুটে-মজুর-ট্রাম ইত্যাদির কারণে চাষা ধীরে ধীরে নিঃসহ হয়ে পড়ছে।
উদ্দীপকে গ্রাম্য কৃষকের শহুরে বিলাসিতার নিদর্শন প্লাস্টিকের বোতলে আমের রস খাওয়ার অনুকরণ করতে গিয়ে অর্ধেক আমের পুষ্টিগুণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমনকি এ ধরনের আমার অনেক দামে কিনতে হচ্ছে। এর পরিণামে আর্থিক ক্ষতি ও দারিদ্র্য প্রবণতা তাদের উপর ছায়ার মতো লেগে রয়েছে। এমন বিলাসিতার কারণে চাষা কখনো স্বচ্ছল হতে পারছে না।
উপর্যুক্ত বিশ্লেষণ অনুযায়ী প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ বলা হচ্ছে।
সৃজনশীলন প্রশ্নোত্তর লেখার মডেল-২ (পদ্য থেকে)
২. ঋণগ্রস্ত চাষীদের ঘরে ঘরে দুর্ভিক্ষ যোগালো বিষম বিক্ষোভ,
তাই লাঙলে কাটে না মাটি দুর্বল দু’হাতে শ্লথ মুঠি।
বস্তির গলিতে প্রান্তে ওঠে হাই-
অসহায় জীর্ণ ঘরে উপবাসীয় মৃত্যুর ভ্রুকুটি।
কোটি কণ্ঠে গান স্তব্ধ, নিরুদ্যম, নিস্তেজ ধমনী-
অবরুদ্ধ ক্ষমতার খনি,
এখনো নিস্ক্রিয় বসে আছো?
ক. কালঘুম বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
খ. “নষ্ট ক্ষেত, নষ্ট মাঠ, নদী নষ্ট, বীজ নষ্ট, বড় নষ্ট যখন সংসার” বলতে কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকে নিরন্ন কৃষকের সাথে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার সাদৃশ্য বিচার কর।
ঘ. ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় কবির ভাবনার মাঝে উদ্দীপকের অসহায়, অবরুদ্ধ সাধারণ মানুষ কীভাবে প্রতিবিম্বিত হয়েছে? কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।
২ নং প্রশ্নের উত্তর (ক)
‘কালঘুম’ বলতে মৃত্যুকে বোঝানো হয়েছে।
২ নং প্রশ্নের উত্তর (খ)
প্রশ্নোক্ত পঙক্তিতে কবি আশাহত অসহায় মানুষের চারপাশের করুণ পরিবেশকে বুঝিয়েছেন।
যুগে যুগে এদেশের রূপ-ঐশ্বর্যের লোভে ভিনদেশিরা এখানে এসেছে। পাহাড় ডিঙিয়ে, সমুদ্র পাড়ি দিয়ে, মরুভূমি অতিক্রম করে তারা এদেশে এসে নানাভাবে এদেশের সহজ-সরল নিরীহ মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন করে বাংলার সম্পদ লুট করেছে। সেসব দখলদারের দৌরাত্ম্যে সবুজ-শ্যামল বাংলার বিধ্বস্ত রূপ চরণটিতে প্রকাশিত হয়েছে।
২ নং প্রশ্নের উত্তর (গ)
উদ্দীপকে উল্লিখিত কৃষকের দুঃখ-কষ্টের সাথে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় বর্ণিত মানুষের দুঃখ-কষ্টের সাদৃশ্য রয়েছে।
বাংলার রূপ-ঐশ্বর্যের প্রতি ভিনদেশিদের লোভ পূর্ব থেকেই ছিল। বিভিন্ন উপায়ে তারা এখানে এসে এই সুন্দর-স্বচ্ছল বাংলার ধ্বংসাত্মক রূপ সৃষ্টি করে। তারা কৃষকদের উপর নিপীড়ন চালায়। বহিঃশত্রুর আক্রমণে এদেশের ক্ষেত, মাঠ, নদী, বীজ, সংসারের সব নষ্ট হয়ে যায়। তবু তারা মৃত্যুপুরীর মত কালঘুমে মত্ত স্তব্দ হয়ে থাকে।
উদ্দীপকে দুর্দশাগ্রস্ত কৃষকদের সমস্যা এবং ঐসব সমস্যা থেকে উত্তরণের কথা বলা হয়েছে। ঋণগ্রস্ত চাষিদের ঘরে অভাব-অনটন লেগে আছে। তারা জীর্ণ ঘরে উপবাস জীবন কাটায়। ফলে তাদের কণ্ঠের গান স্তব্ধ হয়ে গেছে। তাদের প্রতিবাদ করার কোনো ক্ষমতা নেই। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ না তুলতে পেরে তারা নিষ্ক্রীয় হয়ে রয়েছে।
২ নং প্রশ্নের উত্তর (ঘ)
‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় কবির ভাবনার মাঝে উদ্দীপকের অসহায়, অবরুদ্ধ সাধারণ মানুষ কীভাবে প্রতিবিম্বিত হয়েছে- মন্তব্যটি যথার্থ।
কবিতায় দেখা যায় এই সুন্দর শ্যামল বাংলায় বিদেশিদের আগমন ও আক্রমণের পর থেকেই চারিদিকে করুণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। দিনে দিনে নিপীড়নের মাত্রা বাড়ায় মানুষ ধীরে ধীরে নিঃসহ হয়ে পড়ে। অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে তারা নিজেদের আড়াল করে নেয়। বিপ্লবের আওয়াজ না তুলে তারা নিষ্ক্রীয় হয়ে থাকে।
উদ্দীপকের অসহায়, অবরুদ্ধ ঋণগ্রস্ত চাষিদের দুর্দশার দিকটি উপস্থাপিত হয়েছে। তারা নিপীড়নে এতটাই বিধ্বস্ত যে তাদের লাঙল আর মাটি কাটে না। অনাহারে থেকে তারা মৃত্যুর প্রহর গোনে। কোটি কণ্ঠের গান তাই হয়ে আছে স্তব্ধ, নিরুদ্যম ও নিস্তেজ। উদ্দীপকের চাষিদের এই করুণ দৃশ্য ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় গভীর ভাবাবেগে প্রকাশিত হয়েছে।
উপর্যুক্ত বিশ্লেষণের আলোকে বলা যায় যে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় কবির ভাবনার মাঝে উদ্দীপকের অসহায়, অবরুদ্ধ সাধারণ মানুষ কীভাবে প্রতিবিম্বিত হয়েছে- মন্তব্যটি যথার্থ।
- শীটটি সংগ্রহ করতে চাইলে অর্ডার করুন
- আরও পড়ুন : বাংলা উচ্চারণের নিয়মাবলি