Skip to content

বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি ও জলবায়ু- ৪র্থ অধ্যায়- বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়

    বাংলাদেশের নদ-নদী

    • বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি : বাংলাদেশ পলল গঠিত একটি আর্দ্র অঞ্চল। সামান্য পাহাড়ি অঞ্চল ও সীমিত উঁচুভূমি ব্যতীত সমগ্র বাংলাদেশ নদী বিধৌত এক বিস্তীর্ণ সমভূমি। দক্ষিণ গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার অববাহিকায় বাংলাদেশ অবস্থিত। এ দেশের ভূ-প্রকৃতি নিচু ও সমতল।
    • ভৌগোলিক অবস্থান ও সীমানা : দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশ ২০° ৩৪’ উত্তর অক্ষরেখা থেকে ২৬°৩৮´ উত্তর অক্ষরেখার মধ্যে এবং ৮৮°০১′ পূর্ব দ্রাঘিমা রেখা থেকে ৯২°৪১′ পূর্ব দ্রাঘিমা রেখায় অবস্তিত। বাংলাদেশের মাঝামাঝি স্থান দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা (২৩°৫′) অতিক্রম করেছে।
      বাংলাদেশের উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় ও আসাম, পূর্বে আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম এবং মিয়ানমার; দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ অবস্থিত। বাংলাদেশের মোট আয়তন ১৪৭৫৭০ বর্গ কিলোমিটার বা ৫৬৯৭৭ বর্গমাইল।
    • ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলের শ্রেণিবিভাগ ও গঠন : বাংলাদেশের পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ব-দ্বীপ। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে অসংখ্য নদী বয়ে গেছে। এসব নদী, উপনদী ও শাখা নদী উত্তর দিক থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অভিমুখে প্রবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশের ভূখণ্ড উত্তর থেকে দক্ষিণে ক্রমশ ঢালু। বাংলাদেশের প্রায় সমগ্র অঞ্চল এক বিস্তীর্ণ সমভূমি।
      বাংলাদেশে সামান্য পরিমাণে উঁচু ভূমি আছে। ভূ-প্রকৃতির ভিত্তিতে বাংলাদেশকে প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। 

    • প্লাবন সমভূমি : সমতল ভূমির উপর দিয়ে অসংখ্য নদী প্রবাহিত হওয়ায় এখানে বর্ষাকালে বন্যার সৃষ্টি হয়। বছরের পর বছর এভাবে বন্যার পানির সঙ্গে পরিবাহিত পলিমাটি সঞ্চিত হয়ে এই প্লাবন সমভূমি গঠিত হয়েছে। সমগ্র সমভূমির মাটির স্তর খুব গভীর ও ভূমি বেশ উর্বর। প্লাবন সমভূমিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- রংপুর-দিনাজপুরের অধিকাংশ স্থান, সিলেট সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের অধিকাংশ এলাকা এবং কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার পূর্বদিকের সামান্য অংশ ও দেশের অন্যান্য অঞ্চল নিয়ে এই সমভূমি গঠিত। এ অঞ্চলের মাটি বেশ উর্বর বলে কৃষিজাত দ্রব্য উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। 

          ভূপ্রকৃতির মানচিত্র

    বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতির গঠন, জনসংখ্যা ও জনবসতি

    • ভূখণ্ডের তুলনায় বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব খুব বেশি। জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের স্থান নবম (তথ্যটি পরিবর্তনশীল)। বিভিন্ন অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতিতে তেমন কোনো পার্থক্য না থাকায় সর্বত্রই জনবসতি আছে। তবে পার্বত্য এলাকা সুন্দরবনে জীবিকা সংস্থান বেশ কষ্টসাধ্য হওয়ায় এ দুটি অঞ্চলে জনবসতির ঘনত্ব খুবই কম।
      সমতল নদী অববাহিকা অঞ্চল উর্বর পলিমাটি দ্বারা সৃষ্ট। এসব অঞ্চলে কৃষি আবাদ বেশ সহজসাধ্য। ফলে এসব অঞ্চলে জনবসতি গড়ে উঠতে দেখা দেয়। এসব অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ ভালো। তাছাড়াও জলবায়ুর প্রভাবে জনবসতির বণ্টন নিয়ন্ত্রিত হয়। চরমভাবাপন্ন জলবায়ুর চেয়ে সমভাবাপন্ন জলবায়ুতে মানুষ বসবাস করতে পছন্দ করে।
      বাংলাদেশের যেসব অঞ্চলে খনিজ সম্পদ পাওয়া গেছে সেখানে শ্রমিক কর্মচারীদের মাধ্যমে জনবসতি গড়ে উঠেছে। এসব স্থানে প্রধান শিল্পের কারণে বহু আনুষাঙ্গিক শিল্প স্থাপিত হয়েছে। যেমন- নরসিংদি, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা প্রভৃতি স্থানে জনবসতি গড়ে উঠেছে। শিল্প সংস্কৃতি ইত্যাদির কারণেও জনসংখ্যা বণ্টিত হয়।
      জনবসতি বৃদ্ধির ফলে কৃষি কমে যাচ্ছে। ক্রমেই কৃষি জমি ধ্বংস করে বাড়ি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ১৯৭৪ সালে মাথাপিছু জমির পরিমাণ ছিল ০.২৮ একর এবং বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ০.২৫ একর। ভবিষ্যতে এর পরিমাণ আরও হ্রাস পাবে। খাল-বিল ভরাট করে, বনজঙ্গল কেটে মানুষ এখন বসতি গড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় প্রাকৃতিক বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে উঠবে। 

    বাংলাদেশের জলবায়ু ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ

     

    • জলবায়ু : জলবায়ু বলতে একটি বৃহৎ অঞ্চলব্যাপী আবহাওয়ার উপাদানগুলোর দৈনন্দিন অবস্থান দীর্ঘদিনের গড় অবস্থাকে বুঝায়। মৌসুমি জলবায়ুর কারণে এদেশে বছরের বিভিন্ন ঋতুতে জলবায়ুর কিছুটা তারতম্য ঘটে।
    • বাংলাদেশের জলবায়ু : বাংলাদেশের জলবায়ু উষ্ণ, আর্দ্র ও সমভাবাপন্ন। মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাব এ জলবায়ু ‘ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু’ নামে পরিচিত। দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক জলবায়ুর সাথে সাদৃশ্য রেখে দেশে ছয়টি ঋতু দেখা যায়। যথা- গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। বাংলাদেশে প্রধানত তিনটি ঋতু দেখা যায়। যথা-

    ১. শীতকালে দক্ষিণের সমুদ্র উপকূলের তুলনায় উত্তরে তাপমাত্রা ক্রমশ কম হতে থাকে।
    ২. গ্রীষ্মকালে সামুদ্রিক বায়ুর প্রভাব দক্ষিণের তুলনায় উত্তরে বেশি থাকে। এই সময়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে। ফলে এক ধরনের ঝড়ের সৃষ্টি হয় যা কালবৈশাখি নামে পরিচিত। এপ্রিল ও মে মাসে সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের ফলে উপকূলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে।
    ৩. বর্ষাকালের মধ্যে জুন ও সেপ্টেম্বর মাসে অধিক গরম পড়ে। এই সময়ে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের তুলনায় পূর্বাঞ্চলে অধিক বৃষ্টিপাত হয়।

    দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের জলবায়ু

    • ভারতের জলবায়ু : ভারত বিশাল আয়তনের দেশ হওয়ায় ভারতের জলবায়ু বেশ বিচিত্র। অক্ষাংশ, সমুদ্র থেকে দূরত্ব, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতির ভিন্নতার কারণে এর জলবায়ুও ভিন্ন। উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের পার্থক্যের উপর নির্ভর করে ভারতে শীতকাল, গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল, শরৎ ও হেমন্তকাল।
      **শীতকাল : শীতকালে সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে সমগ্র ভারতে উত্তাপের পরিমাণ যথেষ্ট কমে যায়। এই সময় দেশের উপর দিয়ে পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। তবে হিমালয় পর্বতমালা সমগ্র উত্তর ভারতে প্রাচীরের ন্যায় দণ্ডায়মান থাকায় শুষ্ক ও শীতল বায়ু সরাসরি ভারতে প্রবেশ করতে পারে না; এজন্য ভারত শীতের কবল থেকে রক্ষা পায়। শীতে ভারতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকে।
      **গ্রীষ্মকাল : মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ভারতে গ্রীষ্মকাল। ২১ মার্চ সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে নিরক্ষরেখায় এসে ক্রমশ উত্তরে কর্কটক্রান্তি রেখার দিকে অগ্রসর হয়। সূর্যের এ উত্তরায়ণের সাথে সাথে ভারতের তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই সময় গঙ্গা নদীর উপত্যকায় ২৭ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয়।
      **বর্ষাকাল : জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতে বর্ষাকাল। এই সময়ে ভারতে তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সে. হয়ে থাকে। তবে ভারতের দক্ষিণে তুলনামূলক তাপমাত্রা কম থাকে। ভারতে মোট বৃষ্টিপাতের ৭৫% এই সময় হয়।
      **শরৎ ও হেমন্তকাল : অক্টোবর ও নভেম্বর মাস ভারতে শরৎ ও হেমন্তকাল। এই সময়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দিক পরিবর্তন করে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুতে পরিণত হয়। পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাডু উপকূলে এই সময়ে বৃষ্টিপাত হয়। পশ্চিমবঙ্গে এ ঝড়কে ‘আশ্বিনা ঝড়’ বলে।
    • মিয়ানমারের জলবায়ু : মিয়ানমারের জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমি ধরনের। এ অঞ্চলের জলবায়ুতে শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা তিনটি আলাদা ঋতুর উপস্থিতি স্পষ্ট।

    • নেপালের জলবায়ু : নেপালে দুটি কাল দেখা যায়। যথা- বর্ষাকাল ও শীতকাল। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষাকাল এবং নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস শীতকাল বিবেচনা করা হয়। উঁচু পার্বত্য এলাকা হওয়ায় নেপালের কোনো অংশের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায় না এবং শীত-গ্রীষ্মের তাপমাত্রার পার্থক্যও খুব বেশি অনুভূত হয় না। নেপালের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পুরোটাই জুন-সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংঘটিত হয়।
    • আরও পড়ুন- বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলি

    Leave a Reply