Skip to content

লালসালু উপন্যাসের চরিত্রসমূহ বিশ্লেষণ

লালসালু উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র বিশ্লেষণ

  • মজিদ : কেন্দ্রীয় চরিত্র। সকল ঘটনার নিয়ন্ত্রক। কুসংস্কার, শঠতা ও অন্ধবিশ্বাসের প্রতীক। মহব্বতনগর গ্রামে নাটকীয়ভাবে প্রবেশ করে এবং সেখানে সে নিজের ক্ষমতা বিস্তার করতে শুরু করে। ক্রন্দনরতা মেয়ে (হাসুনির মা) তার ভালো লাগে।
  • রহিমা : মজিদের প্রথম স্ত্রী। শক্তিমত্তা তার বাইরের রূপ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঠান্ডা ও ভীতু প্রকৃতির মেয়ে। স্বল্পভাষী ও মজিদের একান্ত অনুগত। গ্রামের লোকেরা তারই অন্যতম সংস্করণ। রহিমা এই গ্রামের মেয়ে। ছোটবেলায় নাকে নোলক পরে হলদে শাড়ি পেঁচিয়ে পরে ছুটোছুটি করত যা সবার মনে আছে। রহিমা বারো বছর মজিদের সাথে সংসার করেছে। মজিদের প্রতি রহিমার আনুগত্য ধ্রুবতারার মতো অনড়, বিশ্বাস পর্বতের মতো অটল। সে মজিদের ঘরের খুঁটি।
  • জমিলা : মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী। চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে। প্রথম দেখায় মজিদকে দুলার বাপ মনে করে। মজিদের আচরণ তার কাছে ভালো লাগে না। জিকিরের সময় সে বাড়ির বাইরে চলে আসায় সবাই তার দিকে চেয়ে থাকে। মজিদ তাকে ‘ঝি’ সম্বোধন করে তাড়িয়ে দেয়। মজিদের ধারণা তাকে জ্বীনে আছর করেছে। তাই তাকে মাজারের সাথে আটকে রাখে।
  • খালেক ব্যাপারী : প্রতিনিধিত্বশীল চরিত্র। তাঁর কাঁধেই গ্রামের সব দায়িত্ব। মজিদের অন্যতম সহায়ক। মসজিদ নির্মাণের বারো আনা খরচ সে দেয়।
  • আমিনা : খালেক ব্যাপারীর রূপবতী প্রথম স্ত্রী। রহিমার মতো সেও নিঃসন্তান। তাই আউয়ালপুরের পীরের পানি পড়া খেতে চায়। কিন্তু মজিদ তা জানতে পারে এবং নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে খালেক ব্যাপারীকে স্ত্রী তালাক দিতে বাধ্য করে। যৌবনে থোতামুখের তালগাছ দেখে বুঝত যে, সে জামাইয়ের বাড়ি এসে পৌঁছেছে।
  • তানু : খালেক ব্যাপারীর দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রতি বছর আস্ত আস্ত সন্তান জন্ম দেয় বলে আমিনা বিবির সহ্য হয় না।
  • পীর সাহেব : আউয়ালপুরের পীর। ময়মনসিংহের কোনো এক অঞ্চলে বংশানুক্রমে বাস করে। এক সময় তার চোখে আগুন ছিল। সে গাছে উঠে বসে থাকে। তার মুরিদদের ধারণা তিনি সূর্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। মৃত মানুষকে জীবিত করতে পারেন। মহব্বত নগরের লোকেরা আওয়ালপুরে আক্রমণ করলেও তিনি প্রতি আক্রমণ করেন না। এর প্রধান কারণ তার জইফ বা দুর্বল অবস্থা। এই বয়সে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ভালো লাগে না। তিনি উদারতা দেখিয়ে বলেন, কুত্তা তোমাকে কামড় দিলে তুমিও কি তাকে কামড়াবে?
  • ধলা মিয়া : তানু বিবির বড় ভাই। বোকা কিছিমের মানুষ। বোন-জামাইয়ের ভাত এতই মিঠা লাগে যে, নড়ার নাম করে না বছরান্তেও। ব্যাপারীর সামনে কথা বলতে অস্বস্তি করে। পালাই পালাই ভাব থাকে। পরগাছা মুরুব্বি বলে পরিচিত। খালেক ব্যাপারী তাকে আওয়ালপুরের পীরের কাছে পানি পড়া আনার জন্য পাঠায় কিন্তু সে মজিদের কাছে সব বলে দেয়। মজিদকে ঘুস দেওয়ার প্রস্তাব করে। বুড়োর মতন সেও ঢেঙ্গা-লম্বা মানুষ।
  • মোদাব্বের মিয়া : আক্কাসের বাবা। রাগ উঠলে তোতলায়।
  • আক্কাস : গ্রামের শিক্ষিত যুবক। অনেক দিন বিদেশে ছিল। করিমগঞ্জের স্কুলে নিজে ইংরেজি পড়েছে। পাট বা তামাকের আড়তে চাকরি করে টাকা পয়সা জমিয়ে দেশে ফিরেছে। ছোটবেলা থেকে সে উচক্কা ধরনের ছেলে। করিমগঞ্জে গিয়ে বড় পোস্টের কাউকে ধরে সরকারের কাছে সাহায্যের জন্য পাঠায়। গ্রামে স্কুল বানাতে চায়। কিন্তু মজিদ তা হতে দেয় না। আক্কাসের বাবা মোদাব্বের মিয়াও স্কুল প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে।
  • দুদু মিঞা : সাত ছেলের বাপ। মজিদ তাকে কলেমা জানার কথা জিজ্ঞেস করলে সে ঘাড় ঘুরে আধাপাকা মাথা চুলকায়। মুখে তার লজ্জার হাসি-চোখ পিটপিট করে। মাথায় যেনো ছিট। মজিদ তাকে ব্যাপারীর মক্তবে কলেমা শিখার আদেশ দেয়। কারণে-অকারণে খেতে না পাওয়ার কথা বলা তার অভ্যাস।
  • দুদু মিঞার ছেলে : বাপের অবস্থা দেখে খিলখিল করে হাঁসে। বাপের মাথা নত করার ভঙ্গিটা তার কাছে গাধার ভঙ্গির মতো মনে হয়।
  • নানি-বুড়ি : আগামি বছর যখন তানু বিবির কোলে নতুন এক আগন্তুক ট্যাঁ ট্যাঁ করে উঠবে, তখন তার ডাক পড়বে।
  • হাসুনির মা : তাহের-কাদের-রতনের বোন। রহিমাকে ধান ভানার কাজে সহায়তা করে। তার স্বামী মারা গেছে। ধানক্ষেতের তাজা রঙে তার মনে পুলক জাগে। আবার বিয়ে করার ইচ্ছা হয়। ঝড় এলে তার হই হই করা অভ্যাস। রহিমা তার মোটাতাজা ছেলে হাসুনিকে পুষ্যি রাখতে চায়।
  • তাহের-কাদের : হাসুনির মার ভাই। তাদের বুড়ো বাবা বুড়িমাকে চ্যালা কাঠ দিয়ে মারতে এলে তারা তা প্রতিরোধ করে। দাঁড় নেয়ে তারা মাছ শিকার করে। এদের বুদ্ধি-বিবেচনা থাকলেও এরা স্বার্থের ঘোরে ঢাকা।
  • রতন : তাহের-কাদেরর কনিষ্ঠ ভাই।
  • বুড়ো : তাহের-কাদের-রতন-হাসুনির মা তার সন্তান। ঢেঙ্গা দীর্ঘ মানুষ। মজিদের কাছে হাসুনির মা বুড়ো সম্পর্কে বিচার দেওয়ায় হাসুনির মাকে মনের আশ মিটিয়ে প্রহার করে। এর জন্য তাকে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়। মজিদ এ বিচারে রায় দেয়। একদিন সন্ধ্যায় কোথায় যেনো চলে যায়, আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এককালে বুদ্ধিমান লোক ছিল। বৈমাত্রেয় ভাইয়ের সাথে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ ঘটিয়ে আজ সে নিঃসঙ্গ।
  • বুড়ি : তাহের কাদেরের মা। যৌবনকালে হাসি-খুশি-ছটফটে ও উড়নি মেয়ে ছিল। একসময় চড়ুই পাখির মতো নাচত। খইয়ের মতো কথা ফুটত তার মুখ দিয়ে। একসময় তার চরিত্র নিয়ে গ্রামবাসীরা অপবাদ দেয় যা বুড়ো বিশ্বাস করে। এখন এই বৃদ্ধ বয়সে তার দেহ-মন পড়ে গেছে। বুড়ো হাসুনির মাকে প্রহার করতে গেলে সে উঠোনে পা ছড়িয়ে দিয়ে বিলাপ শুরু করে। বুড়ো নিরুদ্দেশ হলে বুড়ি নিশ্চুপ হয়ে যায়। খেলোয়াড় চলে গেছে তাই সে খেলবে কার সাথে?
  • সলেমানের বাপ : মজিদের সভায় অশীতিপর বৃদ্ধ সলেমনের বাপও ছিল। সে ছিল হাঁপানি রোগী। মজিদের মাজার আবিষ্কারের সময় সে দম খিঁচে লজ্জায় চোখ নত করে রাখে।
  • কানুর বাপ : মজিদকে এক ছিলিম তামাক এনে দেয়।
  • মতলব খাঁ : ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট। পীর সাহেবের পুরানো মুরিদ।
  • জনৈক লোক : যাকে মজিদ ধানের কথা জিজ্ঞেস করে। সে ঘাড় চুলকিয়ে নিতি-বিতি করে বলে, যা-ই হয়েছে তা-ই যথেষ্ট। ছেলেপুলে নিয়ে দুই বেলা খেতে পারার কথা বলে সে। তার কোনো একটা কথায় মজিদ বৃক্ষের মতো দাঁড়িয়ে থাকে।
  • খোনকার মোল্লা : সমাজে জানাযা পড়ায়। তার বাড়ির সামনে মূর্তি নজরে পড়ে।
  • সরকারি কর্মচারী : তিনি বাইরে বিদেশি কিন্তু ভেতরে মুসলমান। তিনি গ্রামে পরদাদার আমলের কিছু কবরের কথা বলেন।
  • রেহান আলি : গ্রামের মাতব্বর। মজিদ যখন লোকদের গালাগাল করে, তখন সেও ছিল।
  • জোয়ান মদ্দ কালু মতি : মজিদের গালাগাল শুনে লজ্জায় মাথা হেট করে রাখে।
  • ছমিরুদ্দিন : কোঁচবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। তার রক্তাক্ত দেহ দেখে আবেদ-জাবেদের মনে দানবীয় উল্লাস হওয়ার কথা কিন্তু তারা পাথর হয়ে যায়।
  • কালু মিঞা : আউয়ালপুরের সংঘর্ষে লিপ্ত হলে তার মাথা দু’ফাক হয়ে যায়। ফলে সে বেদনায় গোঙায়।
  • ছুনুর বাপ : মরণরোগে যন্ত্রণা পাচ্ছে। রহিমা তার জন্য দোয়া করে।
  • খেতানির মা : পক্ষাঘাতে কষ্ট পাচ্ছে। রহিমা তার জন্য দোয়া করে।
  • খ্যাংটা বুড়ি : মাথায় শনের মতো চুল। সাতকূলে তার কেউ নেই। তার ছেলে যাদুর মৃত্যুর কারণে মাজারে এসে বিলোপ করে ও খোদার বিরুদ্ধে নালিশ করে। মজিদ তাকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়। সে পাঁচ পয়সা মজিদের দিকে ছুড়ে মারে ও সন্তানকে ফেরত চায়।
  • মোদচ্ছের পীর : নাম না জানা পীর। যাকে ঘিরেই মজিদের যত ভণ্ডামি, অভিনয় ও আধিপত্য বিস্তার।
  • কম্পাউন্ডার : করিমগঞ্জের হাসপাতালে মজিদ তাকে ডাক্তার মনে করে। ভাং-গাঁজা খাওয়া রস-কষশূন্য হাড়গিলে চেহারা তার। দুটো পয়সার লোভে তার চোখ চকচক করে থাকে।
  • লালসালু উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ এমসিকিউ পড়ান এখানে-
  • শীটগুলো নিতে চাইলে অর্ডার করুন

 

 

21 thoughts on “লালসালু উপন্যাসের চরিত্রসমূহ বিশ্লেষণ”

  1. ওমর ফারুক স্যার আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছি।
    মোঃ বাদশা আলম
    সহকারী অধ্যাপক
    বাংলা বিভাগ
    রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজ
    রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
    01718091524

  2. এক গ্রামে কি দুই মাতব্বর একটা রোহান আলি আর দ্বিতীয়টি খালেক বেপারী ।

  3. thanks sir opponas ar sob character gulur bornona deyar jonno exam a amon kiso tips hole ar kiso lage na onk opokar hoise thanks again🌸

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page