বায়ান্নর দিনগুলো- শেখ মুজিবুর রহমান

বায়ান্নর দিনগুলো

এদিকে জেলের ভেতর আমরা দুইজনে প্রস্তুত হচ্ছিলাম অনশন ধর্মঘট (অসহযোগ আন্দোলন) করার জন্য। আমরা আলোচনা করে ঠিক করেছি, যাই হোক না কেন, আমরা অনশন ভাঙব না (আন্দোলনে দৃঢ়তা)। যদি এই পথেই (দেশের মানুষের জন্য আন্দোলন) মৃত্যু এসে থাকে তবে তাই হবে (আপসহীন ও দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্ব)। জেল কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে সুপারিনটেনডেন্ট আমীর হোসেন সাহেব ও তখনকার দিনে রাজবন্দিদের ডেপুটি জেলার মোখলেসুর রহমান সাহেব আমাদের বুঝাতে অনেক চেষ্টা করলেন (অনশন না করতে)। আমরা তাদের বললাম আপনাদের বিরুদ্ধে আমাদের কিছু বলার নাই আর আমরা সেজন্য অনশন করছি না। সরকার আমাদের বৎসরের পর বৎসর বিনা বিচারে (মানসিক নির্যাতন) আটক রাখছে, তারই প্রতিবাদ করার জন্য অনশন ধর্মঘট করছি। এতদিন জেল খাটলাম আপনাদের সাথে আমাদের মনোমালিন্য হয় নাই (সৌহার্দমূলক আচরণ)। কারণ আমরা জানি যে, সরকারের হুকুমেই আপনাদের চলতে হয় (সরকারি হুকুমের অন্যথা করা যায় না)। মোখলেসুর রহমান সাহেব খুবই অমায়িক, ভদ্র ও শিক্ষিত ছিলেন। তিনি খুব লেখাপড়া করতেন।
১৫ ই ফেব্রুয়ারি তারিখে সকালবেলা আমাকে জেলগেটে নিয়ে যাওয়া হলো এই কথা বলে যে, আমার সাথে আলোচনা আছে অনশন ধর্মঘটের ব্যাপার নিয়ে আমি যখন জেলগেটে পৌঁছালাম দেখি, একটু পরে মহিউদ্দিনকেও (বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা) নিয়ে আসা হয়েছে একই কথা বলে। কয়েক মিনিট পরে আমার মালপত্র, কাপড়-চোপড়বিছানা নিয়ে জমাদার সাহেব (প্রধান কনস্টেবল/ সিপাহি) হাজির। বললাম, ব্যাপার কী? কর্তৃপক্ষ বললেন, আপনাদের জেলে পাঠানোর হুকুম হয়েছে (জনবিচ্ছিন্ন করা ও কূটকৌশলের অংশ)। জিজ্ঞাসা করলাম, কোনো জেলে? কেউ কিছু বলেন না (কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায়)। এদিকে আর্মড পুলিশ, আইবি অফিসারও (Intelligence Bureau) প্রস্তুত হয়ে এসেছে। খবর চাপা থাকে না। একজন আমাকে বলে দিল, ফরিদপুর জেলে। দুইজনকেই এক জেলে পাঠানো হচ্ছে। তখন নয়টা বেজে গেছে। এগারোটায় নারায়ণগঞ্জ থেকে জাহাজ ছাড়ে, সেই জাহাজ আমাদের ধরতে হবে। আমি দেরি করতে শুরু করলাম, কারণ তা না হলে কেউই জানবে না আমাদের কোথায় পাঠাচ্ছে (গুমের শঙ্কা)!
প্রথমে আমার বইগুলো এক এক করে মেলাতে শুরু করলাম, তারপর কাপড়গুলি। হিসাব নিকাশ, কত টাকা খরচ হয়েছে, কত টাকা আছে। দেরি করতে করতে দশটা বাজিয়ে দিলাম। রওয়ানা করতে আরও আধা ঘণ্টা লাগিয়ে দিলাম। আর্মড পুলিশের সুবেদার ও গোয়েন্দা কর্মচারীরা তাড়াতাড়ি করছিল। সুবেদার পাকিস্তান হওয়ার সময় (১৯৪৭ সালে) গোপালগঞ্জ ছিল এবং সে একজন বেলুচি ভদ্রলোক। আমাকে খুবই ভালোবাসত এবং শ্রদ্ধা করত। আমাকে দেখেই বলে বসল, “ইয়ে কেয়া বাত হ্যায় আপ জেলখানা মে” (দেশের স্বাধীনতা যারা আনল সেসব সম্মানিত লোক দেশ স্বাধীনের পর জেলখানায় কেন?)। আমি বললাম, কিসমত। আর কিছুই বললাম না (অজানা আশঙ্কায়)। আমাদের জন্য বন্ধ ঘোড়ার গাড়ি আনা  (নিরাপত্তার জন্য/ সহকর্মীরা যেন না দেখতে পারে) হয়েছে। গাড়ির ভেতর জানালা উঠিয়ে ও দরজার কপাট বন্ধ করে দিল। দুইজন ভেতরেই (আইবি ও সুবেদার) আমাদের সাথে বসল। আর একটা গাড়িতে অন্যরা পেছনে পেছনে ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশে রোডের দিকে চলল। সেখানে যেয়ে দেখি পূর্বেই একজন আর্মড পুলিশ ট্যাক্সি রিজার্ভ করে দাঁড়িয়ে আছে। তখন ট্যাক্সি পাওয়া খুবই কষ্টকর ছিল (অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা)। আমরা আস্তে আস্তে নামলাম ও উঠলাম। কোনো চেনা লোকের সাথে দেখা হলো না। যদিও এদিক ওদিক অনেকবার তাকিয়ে ছিলাম। ট্যাক্সি তাড়াতাড়ি চালাতে বলল। আমি ট্যাক্সিওয়ালাকে বললাম, ‘বেশি জোরে চালাবেন না, কারণ বাবার কালের জীবনটা যেন রাস্তায় না যায়।’ (রসবোধ প্রকাশ/ বাবার উসিলায় পাওয়া জীবন যেন রাস্তায় শেষ না হয়ে যায়)
আমরা পৌছে খবর পেলাম জাহাজ ছেড়ে গেছে। এখন উপায়? কোথায় আমাদের নিয়ে যাবে? রাত একটায় আর একটা জাহাজ ছাড়বে। আমাদের নারায়ণগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হল। ওপরওয়ালাদের টেলিফোন করল এবং হুকুম নিল থানায়ই রাখতে। আমাদের পুলিশ ব্যারাকের (পুলিশের অস্থায়ী নিবাস) একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো। রাত এগারোটায় আমরা স্টেশনে আসলাম। জাহাজ ঘাটেই ছিল, আমরা উঠে পড়লাম। জাহাজ না ছাড়া পর্যন্ত সহকর্মীরা অপেক্ষা করল (সহকর্মীর প্রতি ভালোবাসা)। রাত একটার সময় সকলের কাছ থেকে বিদায় নিলাম। বললাম, “জীবনের আর দেখা না হতেও পারে (গুপ্তহত্যার শঙ্কা)। সকলে যেন আমাকে ক্ষমা করে দেয়। দুঃখ আমার নাই (দেশের জন্য কাজ করতে পারায়)। একদিন মরতেই হবে, অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে (বীরের মৃত্যু) যদি মরতে পারি, সে মরাতেও শান্তি আছে।”
জাহাজ ছেড়ে দিল, আমরা বিছানা করে শুয়ে পড়লাম সকালে দুইজনে পরামর্শ করে ঠিক করলাম জাহাজে অনশন করি কী করে? আমাদের জেলে নিতে হবে অনশন শুরু করার পূর্বে (জেলে যাওয়ার পূর্বে অনশন শুরু করতে হবে)। সমস্ত দিন জাহাজ চলল, রাতে গোয়ালন্দ ঘাটে এলাম। সেখান থেকে ট্রেনে রাত চারটায় ফরিদপুর পৌঁছালাম। রাতে আমাদের জেল কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করল না। আমরা দুইজনে জেলে সিপাহিদের ব্যারাকের বারান্দায় কাটালাম। সকালবেলা সুবেদার সাহেবকে বললাম, “জেল অফিসাররা না আসলে তো আমাদের জেলে নিবে না, চলেন কিছু নাশতা করে আসি।” নাশতা খাবার ইচ্ছা আমাদের নাই। তবে যদি কারও সাথে দেখা হয়ে যায়, তাহলে ফরিদপুরের সহকর্মীরা জানতে পারবে, আমরা ফরিদপুর জেলে আছি এবং অনশন ধর্মঘট করছি।
আধাঘণ্টা দেরি করলাম, কাউকেও দেখিনা- চায়ের দোকানের মালিক এসেছে, তাকে আমি আমার নাম বললাম এবং খবর দিতে বললাম আমার সহকর্মীদের। আমরা জেলের দিকে রওয়ানা করছি, এমন সময় আওয়ামী লীগের এক কর্মী, তার নামও মহিউদ্দিন– সকলে মহি বলে ডাকে, তার সঙ্গে দেখা। আমি যখন ফরিদপুরে ১৯৪৬ সালের ইলেকশনে (মুসলিমদের নিয়ে পাকিস্তান নামক আলাদা রাষ্ট্র গঠনের জন্য নির্বাচন) ওয়ার্কার ইনচার্জ ছিলাম, তখন আমার সাথে কাজ করেছে। মহি সাইকেলে যাচ্ছিল, আমি তাকে দেখে ডাক দিলাম নাম ধরে, সে সাইকেল থেকে আমাকে দেখে এগিয়ে আসল। আইবি নিষেধ করছিল। আমি শুনলাম না, তাকে (আইবি) এক ধমক দিলাম এবং মহিকে বললাম, আমাদের ফরিদপুর জেলে এনেছে এবং আজ থেকে অনশন করছি সকলকে এ খবর দিতে।
আমরা জেলগেটে এসে দেখি, জেলার সাহেব, ডেপুটি জেলার সাহেব এসে গেছেন। আমাদের তাড়াতাড়ি ভেতরে নিয়ে যেতে বললেন। তাঁরা পূর্বেই খবর পেয়েছিলেন (আমাদের আগমনের)। জায়গাও ঠিক করে রেখেছেন, তবে রাজবন্দিদের সাথে নয়, অন্য জায়গায়। আমরা তাড়াতাড়ি ঔষধ খেলাম পেট পরিষ্কার করবার জন্য। তারপর অনশন ধর্মঘট শুরু করলাম। দুইদিন পর অবস্থা খারাপ হলে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। আমাদের দুইজনেরই শরীর খারাপ। মহিউদ্দিন ভুগছে প্লুরিসিস (ফুসফুস জনিত রোগ) রোগে, আর আমি ভুগছি নানা রোগে। চারদিন পরে আমাদের নাক দিয়ে জোর করে খাওয়াতে শুরু করল। মহাবিপদ! নাকের ভিতর দিয়ে নল পেটের মধ্যে পর্যন্ত দেয়। তারপর নলের মুখে একটা কাপের মতো লাগিয়ে দেয়। একটা ছিদ্রও থাকে। সে কাপের মধ্যে দুধের মতো পাতলা করে খাবার তৈরি করে পেটের ভেতর ঢেলে দেয়। এদের কথা হলো, মরতে দেব না (তাঁর ক্ষতি হলে সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হবে)। আমার নাকে একটা ব্যারাম ছিল। দুই-তিনবার দেবার পরেই ঘা হয়ে গেছে। রক্ত আসে আর যন্ত্রণা পাই। আমরা আপত্তি করতে লাগলাম (জোর করে খাওয়ানো)। জেল কর্তৃপক্ষ শুনছে না (স্বেচ্ছায় অনশন না ভাঙায়)। খুবই কষ্ট হচ্ছে। আমার দুইটা নাকের ভেতরই ঘা হয়ে গেছে। তারা হ্যান্ডকাফ পরানোর লোকজন নিয়ে আসে। বাধা দিলে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে জোর করে ধরে খাওয়াবে। আমাদের শরীরও খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। পাঁচ-ছয়দিন পরে বিছানা থেকে ওঠার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। আমরা ইচ্ছা করে কাগজি লেবুর রস দিয়ে লবণ পানি খেতাম। কারণ এর মধ্যে কোনো ফুড ভ্যালু নাই। আমাদের ওজনও কমতে ছিল। নাকের মধ্য দিয়ে নল দিয়ে খাওয়ার সময় নলটা একটু এদিক ওদিক হলেই আর উপায় থাকবে না (যন্ত্রণা পায়)। সিভিল সার্জন (জেলার প্রধান সরকারি চিকিৎসক) সাহেব, ডাক্তার সাহেব ও জেল কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো অসুবিধা না হয়, তার চেষ্টা করছিলেন। বার বার সিভিল সার্জন সাহেব অনশন করতে নিষেধ করছিলেন। আমার ও মহিউদ্দিনের শরীর অতিশয় দুর্বল হয়ে পড়েছে। এখন আর বিছানা থেকে উঠবার শক্তি নাই। আমার হার্টের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছে বুঝতে পারলাম। প্যালপিটিশন (হার্টবিট অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া) হয় ভীষণভাবে। নিঃশ্বাস ফেলতে কষ্ট হয়। ভাবলাম আর বেশি দিন নাই। একজন কয়েদিকে দিকে গোপনে কয়েক টুকরা কাগজ আনালাম। যদিও হাত কাঁপে তথাপি ছোট ছোট করে চারটা চিঠি লিখলাম। আব্বার কাছে একটা, রেণুর কাছে একটা, আর দুইটা শহীদ সাহেব ও ভাসানী সাহেবের কাছে (পরিবার ও দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ)। দু-একদিন পরে আর লেখার শক্তি থাকবে না।
একুশে ফেব্রুয়ারি আমরা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন কাটালাম। রাতে সিপাহিরা ডিউটিতে এসে খবর দিল, ঢাকায় ভীষণ গোলমাল হয়েছে। কয়েকজন লোক গুলি খেয়ে মারা গেছে। রেডিওর খবর। ফরিদপুরে হরতাল হয়েছে, ছাত্রছাত্রীরা শোভাযাত্রা (বিক্ষোভ মিছিল) করে জেলগেটে এসেছিল। তারা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিল, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।’ ‘বাঙালিদের শোষণ করা চলবে না’, ‘শেখ মুজিবের মুক্তি চাই’, ‘রাজবন্দিদের মুক্তি চাই’, আরও অনেক স্লোগান। আমার খুব খারাপ লাগল (সহযোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন করায়)। কারণ ফরিদপুর আমার জেলা, মহিউদ্দিনের নামে কোনো স্লোগান দিচ্ছে না কেন? শুধু ‘রাজবন্দিদের মুক্তি চাই’ বললেই তো হতো। রাতে যখন ঢাকার খবর পেলাম তখন ভীষণ চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়লাম (দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ভেবে)। কত লোক মারা গেছে বলা কষ্টকর (অতিরঞ্জিত খবর বা প্রকৃত সংবাদ প্রকাশ পায় না)। তবে অনেক লোক গুলি খেয়ে মারা গেছে শুনেছি। দুজনে পাশাপাশি বিছানায় শুয়ে আছি। ডাক্তার সাহেব আমাদের নড়াচড়া করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু উত্তেজনায় উঠে বসলাম (জনগণের মৃত্যুর সংবাদে)।
২২ তারিখে সারা দিন ফরিদপুরে শোভাযাত্রা চলল। কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী এক জায়গায় হলেই স্লোগান দেয়। ছোট ছোট্ট ছেলেমেয়েরা রাস্তায় বেড়ায় আর স্লোগান দেয় (বাচ্চারা বড়দের অনুসরণ করে)। ২২ তারিখে খবরের কাগজ এল, কিছু কিছু খবর পেলাম। মুসলিম লীগ সরকার কত বড় অপরিণামদর্শিতার (আন্দোলনকারীদের হত্যা করায়) কাজ করল। মাতৃভাষা আন্দোলনে পৃথিবীতে এই প্রথম বাঙালিরাই রক্ত দিল। দুনিয়ার কোথাও ভাষা আন্দোলন করার জন্য গুলি করে হত্যা করা হয় নাই। জনাব নুরুল আমিন বুঝতে পারলেন না, আমলাতন্ত্র (রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে সরকারি কর্মচারীদের কর্তৃত্বমূলব ব্যবস্থা) তাঁকে কোথায় নিয়ে গেল। গুলি হলো মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের এরিয়ার ভিতরে (আবাসিক এলাকা), রাস্তায়ও নয়। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলেও গুলি না করে গ্রেফতার করলেই তো চলত। আমি ভাবলাম, দেখব কি না জানি না, তবে রক্ত যখন আমাদের ছেলেরা দিয়েছে তখন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা (১৯৫৬ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়) না করে আর উপায় নাই মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে। (পতনের সময় হতাশায় ছোট কাজেও বড় ধরনের ভুল করে)
খবরের কাগজে দেখলাম, মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ এমএলএ, খয়রাত হোসেন এমএলএ, খান সাহেব ওসমান আলী এমএলএ এবং মোহম্মাদ আবুল হোসেনখন্দকার মোশতাক আহমদসহ শত শত ছাত্র ও কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। দু-একদিনের পরে দেখলাম কয়েকজন প্রফেসর, মওলানা ভাসানী, শামসুল হক সাহেব ও বহু আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। নারায়ণগঞ্জে খানসাহেব ওসমান আলীর বাড়ির ভেতরে ঢুকে ভীষণ মারপিট করেছে। বৃদ্ধ খান সাহেব ও তার ছেলেমেয়েদের ওপর অকথ্য অত্যাচার হয়েছে। সমস্ত ঢাকায় ও নারায়ণগঞ্জে এক ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগের কোনো কর্মীই বোধহয় আর বাইরে নাই (আওয়ামী লীগ একমাত্র বিরোধী ছিল তখন)।
আমাদের অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে এসেছে যে, যেকোনো মুহূর্তে মৃত্যুর শান্তি-ছায়ায় (মানসিক নির্যাতন থেকে মুক্তি) চিরদিনের জন্য স্থান পেতে পারি। সিভিল সার্জন সাহেব দিনের মধ্যে পাঁচ সাতবার আমাদের দেখতে আসেন। ২৫ তারিখ সকালে যখন আমাকে তিনি পরীক্ষা করছিলেন হঠাৎ দেখলাম তার মুখ গম্ভীর হয়ে গেছে (অবস্থা আশঙ্কাজনক)। তিনি কোনো কথা না বলে, মুখ কালো করে বেরিয়ে গেলেন। আমি বুঝলাম, আমার দিন ফুরিয়ে গেছে। কিছু সময় পরে আবার ফিরে এসে বললেন, ‘এভাবে মৃত্যুবরণ করে কি কোনো লাভ হবে? বাংলাদেশ যে আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু (যোগ্য নেতৃত্ব) আশা করে। (মানসিক অনুপ্রেরণা ও মুক্তিকামী মানুষের জন্য তাঁর সফল নেতৃত্ব)’ আমার কথা বলতে কষ্ট হয়, আস্তে আস্তে বললাম, “অনেক লোক আছে। কাজ পড়ে থাকবে না। দেশকে ও দেশের মানুষকে ভালোবাসি, তাদের জন্যই জীবন দিতে পারলাম, এই শান্তি।” ডেপুটি জেলার সাহেব বললেন কাউকে খবর দিতে হবে কি না (অন্তিম ইচ্ছাপূরণ)? আপনার ছেলেমেয়ে ও স্ত্রী কোথায়? আপনার আব্বার কাছে কোনো টেলিগ্রাম করবেন? বললাম, ‘দরকার নাই আর তাদের কষ্ট দিতে চাই না।’ আমি আশা ছেড়ে দিয়েছি, হাত-পা অবশ হয়ে আসছিল। হার্টের দুর্বলতা না থাকলে এত তাড়াতাড়ি দুর্বল হয়ে পড়তাম না। একজন কয়েদি ছিল, আমার হাত-পায়ে সরিষার তেল গরম করে মালিশ করতে শুরু করল। মাঝে মাঝে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল।
মহিউদ্দিনের অবস্থাও ভালো না, কারণ প্লুরিসিস আবার আক্রমণ করে বসেছে। আমার চিঠি চারখানা একজন কর্মচারীকে ডেকে তাঁর কাছে দিয়ে বললাম, আমার মৃত্যুর পরে চিঠি চারখানা ফরিদপুরে আমার এক আত্মীয়ের কাছে পৌঁছে দিতে। তিনি কথা দিলেন, আমি তাঁর কাছে ওয়াদা নিলাম। বার বার আব্বা, মা ভাইবোনদের চেহারা ভেসে আসছিল আমার চোখের সামনে। রেণুর দশা কী হবে? তার তো কেউ নাই দুনিয়ায়। ছোট ছেলেমেয়ে দুইটা অবস্থাই বা কী হবে? তবে আমার আব্বা ও ছোট ভাই ওদের ফেলবে না। এ বিশ্বাস আমার ছিল। চিন্তাশক্তিও হারিয়ে ফেলছিলাম (অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ভাবনা)। হাসিনা, কামালকে একবার দেখতেও পারলাম না (প্রিয়জনের সাক্ষাৎ না পাওয়ার আক্ষেপ)। বাড়ির কেউ খবর পায় নাই, পেলে নিশ্চয়ই আসত। মহিউদ্দিন ও আমি পাশাপাশি দুইটা খাত পেতে নিয়েছিলাম। একজন আরেক জনের হাত ধরে শুয়ে থাকতাম। দুজনেই চুপচাপ পড়ে থাকি (দুর্বলতার কারণে)। আমার বুকে ব্যথা শুরু হয়েছে। সিভিল সার্জন সাহেবের কোনো সময়-অসময় ছিল না। আসছেন, দেখছেন চলে যাচ্ছেন। ২৭ তারিখ দিনের বেলা আমার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ল। বোধয় আর দু-একদিন বাঁচতে পারি।
২৭ তারিখ রাত আটটার সময় আমরা দুইজন চুপচাপ শুয়ে আছি। কারও সাথে কথা বলার ইচ্ছাও নাই, শক্তিও নাই। দুইজনেই শুয়ে শুয়ে কয়েদির সাহায্যে ওজু করে খোদার কাছে মাফ চেয়ে নিয়েছি। দরজা খুলে বাইরে থেকে ডেপুটি জেলার এসে আমার কাছে বসলেন এবং বললেন, ‘আপনাকে যদি মুক্তি দেওয়া হয়, তবে খাবেন তো?’ বললাম, ‘মুক্তি দিলে খাব, না দিলে খাব না।’ তবে আমার লাশ মুক্তি পেয়ে যাবে (মানসিক নির্যাতন থেকে মুক্তি)। ডাক্তার সাহেব এবং আরও কয়েকজন কর্মচারী এসে গেছে, চেয়ে দেখলাম। ডেপুটি জেলার সাহেব বললেন, ‘আমি পড়ে শোনাই আপনার মুক্তির অর্ডার এসে গেছে রেডিওগ্রামে এবং জেলা ম্যাজিস্টেট সাহেবের অফিস থেকে অর্ডার এসেছে। দুইটা অর্ডার পেয়েছি।’ তিনি পড়ে শোনালেন, আমি বিশ্বাস করতে চাইলাম না। মহিউদ্দিন শুয়ে শুয়ে অর্ডারটা দেখলো এবং বলল যে তোমার অর্ডার এসেছে। আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে (সান্ত্বনা) দিতে লাগল। ডেপুটি সাহেব বললেন, আমাকে অবিশ্বাস করার কিছু নাই। কারণ আমার কোনো স্বার্থ নাই, আপনার মুক্তির আদেশ সত্যিই এসেছে। ডাক্তর সাহেব ডাবের পানি আনিয়াছেন। মহিউদ্দিনকে দুইজন ধরে বসিয়ে দিলেন। সে আমাকে বলল, ‘তোমাকে ডাবের পানি আমি খাইয়ে দিব (সহযোদ্ধার নিকট আত্মসমর্পণ) ‘দুই চামচ ডাবের পানি দিয়ে মহিউদ্দিন আমার অনশন ভাঙিয়ে দিল।
সকাল দশটার (২৮ তারিখ) দিকে খরব পেলাম আব্বা এসেছেন। জেলগেটে আমাকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় (দুর্বলতার কারণে)। তাই কর্তৃপক্ষ তাঁকে ভিতরে নিয়ে আসলেন। আমকে দেখেই আব্বার চোখে পানি এসে গেছে। আব্বার সহ্যশক্তি খুব বেশি (কষ্ট প্রকাশ না করা)। কোনো মতে চোখের পানি মুছে ফেললেন। কাছে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং বললেন, তোমার মুক্তির আদেশ হয়েছে, তোমাকে আমি নিয়ে যাব বাড়িতে। আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম তোমার মা, রেণু, হাসিনাকামালকে নিয়ে, দুইদিন বসে রইলাম কেউ খবর দেয় না, তোমাকে কোথায় নিয়ে গেছে (কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায়)। তুমি ঢাকায় নাই একথা জেলগেট থেকে বলেছে। যদিও পরে খবর পেলাম, তুমি ফরিদপুর জেলে আছ। তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ। নারায়ণগঞ্জ এসে জাহাজ ধরব তারও উপায় নেই। তোমার মা ও রেণুকে ঢাকায় রেখে আমি চলে এসেছি। কারণ আমার সন্দেহ হয়েছিল তোমাকে ফরিদপুর নেওয়া হয়েছে কি না (ভুল তথ্যের শঙ্কা)। আজই টেলিগ্রাম করব, তার যেন বাড়িতে রওয়ানা হয়ে যায়। আমি আগামীকাল বা পরশু তোমাকে নিয়ে রওয়ানা করব, বাকি খোদা ভরসা। সিভিল সার্জন সাহেব বলেছেন, তোমাকে নিয়ে যেতে লিখে দিতে হবে যে, ‘আমার দায়িত্বে নিয়ে যাচ্ছি (জীবনের ঝুঁকি পরিবারের)।’ আব্বা আমাকে সান্ত্বনা দিলেন এবং বললেন, তিনি খবর পেয়েছেন মহিউদ্দিনও মুক্তি পাবে, তবে একসাথে ছাড়বে না, একদিন পরে ছাড়বে।
পরের দিন আব্বা আমাকে নিতে আসলেন। অনেক লোক জেলগেটে হাজির। আমাকে স্ট্রেচারে করে জেলেগেট নিয়ে যাওয়া হলো এবং গেটের বাইরে রেখে দিল, যদি কিছু হয় (বিপদ ঘটে) বাইরে গিয়ে হোক, এই তাদের ধারণা।
পাঁচদিন পর বাড়ি পৌঁছালাম। মাকে তো বোঝানো কষ্টকর (স্নেহের নিকট যুক্তি অচল)। হাচু আমার গলা ধরে প্রথমেই বলল, আব্বা রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, রাজবন্দিদের মুক্তি চাই। একুশে ফেব্রুয়ারি ওরা ঢাকায় ছিল, যা শুনেছে তাই বলে চলেছে। কামাল আমার কাছে আসল না, তবে আমার দিকে চেয়ে রইল। আমি খুব দুর্বল, বিছানায় শুয়ে পড়লাম। গতকাল রেণু ও মা ঢাকা থেকে বাড়ি এসে আমার প্রতীক্ষায় দিন কাটাচ্ছিল। এক এক করে সকলে যখন আমার কামরা থেকে বিদায় নিল, তখন রেণু কেঁদে ফেলল এবং বলল, তোমার চিঠি পেয়ে আমি বুঝেছিলাম তুমি কিছু একটা করে ফেলবা। আমি তোমাকে দেখবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। কাকে বলব নিয়ে যেতে, আব্বাকে বলতে পরি না লজ্জায়নাসের ভাই বাড়ি নাই। যখন খবর পেলাম খবরের কাগজে তখন লজ্জা শরম ত্যাগ করে আব্বাকে বললাম (প্রয়োজনে সংকোচবোধ থাকতে নেই)। আব্বা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তাই রওয়ানা করলাম ঢাকায়, সোজা আমাদের বড় নৌকায় তিনজন মাল্লা নিয়ে। কেন তুমি অনশন করতে গিয়েছিলে? এদের কি দয়া মায়া আছে (পাকিস্তানিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ)? আমাদের কারও কথাও তোমার মনে ছিল না? কিছু একটা হলে কী উপায় হতো? আমি এই দুটা দুধের বাচ্চা নিয়ে কী করে বাঁচতাম? হাসিনা, কামালের অবস্থা কী হতো? তুমি বলবা খাওয়া দাওয়া কষ্ট তো হতো না? মানুষ কি শুধু খাওয়া পরা নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়? আর মরে গেলে দেশের কাজই বা কীভাবে করতা? আমি তাকে কিছুই বললাম না (অভিমান প্রকাশের সুযোগ)। তাকে বলতে দিলাম, কারণ মনের কথা প্রকাশ করতে পারলে ব্যথাটা কিছু কমে যায়। রেণু খুব চাপা, আজ যেন কথার বাঁধ ভেঙে গেছে (আপনজনকে পেয়ে)। শুধু বললাম, উপায় ছিল না (কঠোর অবস্থান ছাড়া মুক্তি সম্ভব ছিল না)। বাচ্চা দুইটা ঘুমিয়ে পড়েছে। শুয়ে পড়লাম। সাতাশ-আটাশ মাস পরে আমার সেই পুরানা জায়গায়, পুরানা কামরায়, পুরানা বিছানায় শুয়ে কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠের (কুঠুরি) দিনগুলির কথা মনে পড়ল। ঢাকার খবর সবই পেয়েছিলাম। মহিউদ্দিন ও মুক্তি পেয়েছে। আমি বাইরে এলাম আর আমার সহকর্মীরা আবার জেলে গিয়েছে।
পরের দিন সকালে আব্বা ডাক্তার আনলেন। সিভিল সার্জন সাহেবের প্রেসক্রিপশনও ছিল। ডাক্তার সকলকে বললেন, আমাকে যেন বিছানা থেকে উঠতে না দেওয়া হয়। দিন দশেক পরে আমাকে হাঁটতে হুকুম দিল শুধু বিকেল বেলায়। আমাকে দেখতে রোজই অনেক লোক বাড়িতে আসত। গোপালগঞ্জ, খুলনা বরিশাল থেকেও আমার কিছু সংখ্যক সহকর্মী এসেছিল।
একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ বলে ডাকে (বাবার প্রতি ঘনিষ্ঠতা)। কামাল চেয়ে থাকে (বাবার অভাববোধ)। একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, ‘হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি (বাবার আদর থেকে দূরে থাকা সহ্য করতে পারছে না)।’ আমি আর রেণু দুজনেই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, ‘আমি তো তোমারও আব্বা’। কামাল আমার কাছে আসতে চাইত না। আজ গলা ধরে পড়ে রইল। বুঝতে পারলাম, এখন আর ও সহ্য করতে পারছে না। নিজের ছেলেও অনেকদিন না দেখলে ভুলে যায় (আপনজন দূরে থাকলে পর হয়ে যায়)! আমি যখন জেলে যাই তখন ওর বয়স মাত্র কয়েক মাস। রাজনৈতিক কারণে একজনকে বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা আর তার আত্মীয়স্বজন ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা যে কত বড় জঘন্য কাজ তা কে বুঝবে? মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়। আজ দুইশত বৎসর পরে আমরা স্বাধীন হয়েছি। সামান্য হলেও কিছু আন্দোলন করেছি স্বাধীনতার জন্য (পাকিস্তানের স্বাধীনতার জন্য অবদান)। ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস, আজ আমাকে ও আমার সহকর্মীদের বছরের পর বছর জেল খাটতে হচ্ছে। আরও কতকাল খাটতে হয়, কেইবা জানে? একে কি বলে স্বাধীনতা (বিনা বিচারে আটক)? ভয় আমি পাই না, আর মনও শক্ত হয়েছে।
মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম। ১৯৫২ সালে ঢাকায় গুলি হওয়ার পরে গ্রামে গ্রামে জনসাধারণ বুঝতে আরম্ভ করেছে যে, যারা শাসন করছে তারা জনগণের আপনজন নয়। খবর নিয়ে জানতে পারলাম, একুশে ফেব্রুয়ারি গুলি হওয়ার খবর বাতাসের সাথে গ্রামে গ্রামে পৌছে গেছে এবং ছোট ছোট হাটবাজারে পর্যন্ত হরতাল হয়েছে। মানুষ বুঝতে আরম্ভ করেছে যে, বিশেষ একটা গোষ্ঠী (পাকিস্তানিরা) বাঙালিদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চায়।
ভরসা হলো, আর দমাতে পারবে না (জনগণ সাথে থাকায়)। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা না করে উপায় নাই (রক্তদান বৃথা যায় না)। এই আন্দোলনে দেশের লোক সাড়া দিয়েছে। ও এগিয়ে এসেছে। কোনো কোনো মাওলানা সাহেবরা ফতোয়া দিয়েছিলেন বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে (ধর্মের অপব্যবহার)। তারাও ভয় পেয়ে গেছেন। এখন আর প্রকাশ্যে বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না। জনমত সৃষ্টি হয়েছে, জনমতের বিরুদ্ধে যেতে শোষকরাও ভয় পায় (পতন অনিবার্য বলে)। শাসকরা যখন শোষক হয় অথবা শোষকদের সাহায্য করতে আরম্ভ করে তখন দেশের ও জনগণের মঙ্গল হওয়ার চেয়েও অমঙ্গলই বেশি হয়।
  • উৎস- বায়ান্নর দিনগুলি অসমাপ্ত আত্মজীবনী (২০১২) গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। এ রচনায় ১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের জেলজীবন ও জেল থেকে মুক্তিলাভের স্মৃতি বিবৃত হয়েছে। তিনি তাঁর বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী ও সহধর্মিণীর অনুরােধে ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে রাজবন্দি থাকা অবস্থায় এ আত্মজীবনী লেখা শুরু করেন। ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি ঐতিহাসিক আগরতলা মামলায় ঢাকা সেনানিবাসে আটক থাকায় তাঁর এ আত্মজীবনী লেখার কাজ বন্ধ হয়ে যায়।এতে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ঘটনাবলি স্থান পেয়েছে। জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা, গভীর উপলব্ধি ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ তিনি এ গ্রন্থে সহজ-সরল ভাষায় প্রকাশ করেছেন। 
  • আরও পড়ুন- রেইনকোট গল্পের বিশ্লেষণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart

You cannot copy content of this page

Scroll to Top