বাংলা ব্যাকরণ প্রশ্ন বিশ্লেষণ- ষষ্ঠ পর্ব

বাংলা প্রশ্ন বিশ্লেষণ

বাংলা ব্যাকরণের জটিল প্রশ্নগুলোর সমাধান দেখুন। পরীক্ষার জন্য এভাবে বিশ্লেষণ করে পড়লে অনেক উপকারে আসবে। 

 

১. প্রাচীনতম বাংলা মহাকাব্য কোনটি?
ক. চর্যাপদ                        খ. শ্রীকৃষ্ণকীর্তন
গ. মেঘনাদ বধ                 ঘ. পদ্মাবতী

ব্যাখ্যা : পরীক্ষায় অনেক সময় এ ধরনের প্রশ্ন আসে। বিশেষ করে এমন কিছু শব্দ উল্লেখ থাকে, যাতে আমরা দ্বিধায় পড়ে যাই। যেমন- এখানে ‘প্রাচীনতম’ শব্দ। আমরা জানি বাংলা মহাকাব্যের জনক মধুসূদন দত্ত। তাঁর রচিত মহাকাব্যের নাম ‘মেঘনাদ বধ’। সুতরাং প্রাচীনতম বা সর্বশেষ যা-ই বলা হোক না কেন, উত্তর হবে মেঘনাদ বধ। সঠিক উত্তর ()।

২. ‘ছাড়পত্র’ এর ইংরেজি পরিভাষা কোনটি?
ক. Transfer certificate               খ. Resign letter
গ. NOC                                     ঘ. Passport

ব্যাখ্যা : প্রশ্নে বর্ণিত সবগুলো অপশনের অর্থই ছাড়পত্র করা যায়। তবে বিদেশি শব্দের অনুবাদ আর পরিভাষা এক নয়। Transfer certificate শব্দটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত। Resign letter শব্দটি চাকরি বা পেশার সাথে সম্পৃক্ত। No-Objection Certificate (NOC) শব্দটি আমরা প্রায় খেলাধুলার সাথে শুনতে পাই। তবে ছাড়পত্র এর যথাযথ ইংরেজি পরিভাষা Passport.

৩. নিচের কোনটি বিরাম চিহ্ন নয়?
ক. হাইফেন                               খ. দাঁড়ি
গ. পাদচ্ছেদ                               ঘ. বিস্ময় চিহ্ন

ব্যাখ্যা : এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা অনেকেই সংশয়ে পড়ে যাবে। কারণ, অনেকেই বিরাম চিহ্ন ও যতি চিহ্নের মধ্যে পার্থক্য জানেন না। মূলত যেসব যতি চিহ্নে থামার প্রয়োজন হয়, তাকেই বিরাম চিহ্ন বলে। মোট বিরাম চিহ্ন নয়টি। আর যতি চিহ্ন ১২/ ১৬টি। উপরের অপশনে ‘হাইফেনে’ থামার প্রয়োজন পড়ে না, তাই এটিই উত্তর হবে। সঠিক উত্তর ()।
উল্লেখ্য, প্রাচীন বাংলায় এত যতি চিহ্ন ছিল না। কেবল এক দাঁড়ি (।) ও দুই দাঁড়ি (।।) বিরাম চিহ্ন ছিল।

৪. ‘উৎ+ মেষ > উন্মেষ’ কোন ধ্বনি পরিবর্তন?
ক. সমীভবন                          খ. ব্যঞ্জন বিকৃতি
গ. ব্যঞ্জনচ্যুতি                        ঘ. ধ্বনি বিপর্যয়

ব্যাখ্যা : নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড বই অনুসারে এটি সমীভবনের উদাহরণ। কিন্তু সমীভবনের নিয়মানুসারে দুটি ভিন্ন ধ্বনি একই রকম বা প্রায় একই রকম হলে সমীভবন হয়। যেমন- জন্ম > জম্ম, উৎ+ শ্বাস > উচ্ছ্বাস। কিন্তু এখানে ম+ম হয় নি, বরং ‘উন্মেষ’ (ন+ম) হয়েছে। উৎমেষ (উ+ত+মে+ষ) > উন্মেষ (উ+ন+মে+ষ) আর ‘ন’ ও ‘ম’-র উচ্চারণ এক নয়। সুতরাং এটি ব্যঞ্জন বিকৃতির উদাহরণ। প্রশ্নের সঠিক উত্তর ()।

৫. নীল আকাশের নীচে আমি রাস্তায় চলেছি একা- বাক্যে ‘রাস্তা’ কোন কারক?
ক. অধিকরণ                            খ. করণ
গ. কর্ম                                      ঘ. সম্প্রদান

ব্যাখ্যা : স্বাভাবিকভাবে বাক্যটি পড়েই রাস্তাকে স্থান ভেবে অধিকরণ কারক উত্তর করবে। এমনি ‘আমি নৌকায় ভ্রমণ করলাম’ (Journey by boat) বাক্যে ‘নৌকায়’ অধিকরণ কারক উত্তর করবে। কিন্তু প্রকৃতার্থে ‘রাস্তা’ বা ‘নৌকা’ কোনোটিই মূল লক্ষ্যস্থল নয়। বরং এগুলো গন্তব্যস্থলে যাওয়ার মাধ্যম মাত্র। যেমন- আমরা রাস্তায় চলে বাসায় যাই। নৌকায় চড়ে গ্রামের বাড়িতে যাই। তাই রাস্তা ও নৌকা করণ কারক। সুতরাং সঠিক উত্তর ()।

৬. বাগধরার শব্দ পরিবর্তন, দুর্বোধ্যতা ইত্যাদি বাক্যের কোন দোষের সাথে জড়িত?
ক. বাহুল্য দোষ                           খ. যোগ্যতা
গ. আকাঙ্ক্ষা                              ঘ. আসত্তি

ব্যাখ্যা : একটি সার্থক বাক্যের জন্য তিনটি গুণ (আকাঙ্ক্ষা, আসত্তি, যোগ্যতা) থাকা আবশ্যক। তবে এই যোগ্যতার সাথে আরও ছয়টি বিষয় জড়িত। যথা- দুর্বোধ্যতা, বাহুল্য দোষ, বাগধারার শব্দ পরিবর্তন, রীতিসিদ্ধ অর্থবাচকতা, উপমার ভুল প্রয়োগ ও গুরুচণ্ডালি। সুতরাং সঠিক উত্তর ()।

৭. নিচের কোনটি সঠিক?
ক. হিম+ আচল = হিমাচল
খ. চলৎ+শক্তি = চলচ্ছক্তি
গ. আদি+ অক্ষর = আদ্যক্ষর
ঘ. হিত+ ঐশী = হিতৈষী

ব্যাখ্যা : যারা সন্ধি মুখস্থ করে যান তারা এই ধরনের প্রশ্ন দেখে বিপদে পড়বেন। সন্ধিতে কেবল ধ্বনির বিষয়টিই লক্ষ্য করা হয় না, অর্থের মিল থাকাও জরুরি। যেমন- সন্ধির নিয়মে ‘পাঠ/ পাঠা+ আগার = পাঠাগার’ দুটোই হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা জানি পাঠাগারের সাথে ‘পাঠা’-র কোনো সম্পর্ক নেই। এমনিভাবে কারা+ আগার = আগার।
প্রশ্নে বর্ণিত হিম+ অচল = হিমাচল (আচল নয়), আদ্য+ অক্ষর = আদ্যাক্ষর, হিত+ এষি = হিতৈষি (এষণ অর্থ খোঁজা)।
সুতরাং অপশনে বর্ণিত সঠিক উত্তর চলৎ+ শক্তি = চলচ্ছক্তি। অথচ সন্ধির নিয়ম না জানলে এটাই ভুল মনে হবে।

৮. বিশেষ নিয়মে সাধিত বহুবচন কোনটি?
ক. জঙ্গলে সাপ থাকে
খ. পোকায় ধান খেয়েছে
গ. হাঁড়ি হাঁড়ি সন্দেশ
ঘ. নয়নদের পরীক্ষা শেষ

ব্যাখ্যা : অনেকভাবেই বহুবচনজ্ঞাপক শব্দ তৈরি করা যায়। যার মধ্যে অন্যতম দ্বিরুক্তির মাধ্যমে বহুবচন। তবে জাতিবাচক বিশেষ্য একবচনে ব্যবহৃত হলেও তা বহুবচনের অর্থ দেয়। যেমন- বাঘ বনে থাকে (এখানে বাঘ একবচন ব্যবহৃত হলেও বহুবচন অর্থ দিচ্ছে)। তেমনিভাবে পোকায় ধান খেয়েছে।
আমরা জানি, নামবাচক বিশেষ্যের কোনো বচন হয় না। কিন্তু নামবাচক বিশেষ্যকে যদি বহুবচন করে ব্যবহার করা হয়, তবে তা বিশেষ নিয়মে সাধিত বহুবচন। যেমন- সাকিবরা প্রতি ম্যাচে ভালো খেলে না। নজরুল প্রতি বছর জন্মায় না। নয়নদের পরীক্ষা শেষ। সুতরাং এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর ()।

পূর্বের আলোচনা পড়ুন : বাংলা ব্যাকরণ প্রশ্ন বিশ্লেষণ- পঞ্চম পর্ব
অনুশীলন বাংলা ব্যাকরণ বইতে বিস্তারিত পাবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart

You cannot copy content of this page

Scroll to Top