Skip to content

বাংলা ব্যাকরণ প্রশ্ন বিশ্লেষণ- চতুর্থ পর্ব

বাংলা ব্যাকরণ জানার আনন্দ

ব্যাকরণের জটিল প্রশ্নগুলোর সহজ সমাধান তুলে ধরা হল। যা থেকে পরীক্ষায় অনেক প্রশ্ন কম থাকবে। 

১. নিচের কোনটি বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়ের উদাহরণ নয়?
ক. বাঁদরামি                   খ. মেঘলা
গ. দৈব                          ঘ. মেয়ে

ব্যাখ্যা : নাম প্রকৃতির সাথে যে প্রত্যয় যোগ হয় তাকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। অ, ষ্ণ, ষ্ণ্য, ষ্ণিক, বতুপ, মতুপ, ইমন, ইল, বিন, নীন, অয়ন, আয়ন ইত্যাদি সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়। সুতরাং এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর (গ)।

২. নিচের কোনটিতে স্বরসঙ্গতির ন্যায় পরিবর্তন হয়?
ক. ব্যঞ্জন বিকৃতি              খ. ধ্বনি বিপর্যয়
গ. অন্তর্হতি                       ঘ. সমীভবন

ব্যাখ্যা : স্বরধ্বনির পরিবর্তনকে ‘স্বরসঙ্গতি’ বলে। স্বরসঙ্গতির ক্ষেত্রে স্বরধ্বনির সংখ্যার পরিবর্তন হয় না। যেমন- মুলা > মুলো। উভয় শব্দে দুটি করে স্বরধ্বনি আছে।
প্রশ্নে বলা হচ্ছে স্বরসঙ্গতির মতো সংখ্যার তারতম্য না করে ধ্বনি পরিবর্তন করে কোনটি। এক্ষেত্রে উত্তর হবে ব্যঞ্জন বিকৃতি। কারণ, ব্যঞ্জন বিকৃতিতে কেবল ধ্বনির পরিবর্তন হয় কিন্তু ব্যঞ্জন সংখ্যার পরিবর্তন হয় না। যেমন- পানি > হানি (দুটি ব্যঞ্জন)। সুতরাং সঠিক উত্তর ()।

**ধ্বনি বিপর্যয় : ব্যঞ্জনবর্ণের স্থান পরিবর্তন। যেমন- রিকশা > রিশকা।
**অন্তর্হতি : ব্যঞ্জনবর্ণের বিলুপ্তি। যেমন- মানুষ > মানু।
**সমীভবন : দুটি ভিন্ন ধ্বনিকে এক করে ফেলা। যেমন- জন্ম > জম্ম, পদ্মা > পদ্দা ইত্যাদি।

৩. সুবর্ণ জয়ন্তী শব্দটি কী ধরনের সংখ্যা?
ক. অঙ্কবাচক                       খ. গণনাবাচক
গ. ক্রমবাচক                        ঘ. তারিখবাচক

ব্যাখ্যা : ৫০ বছর পূর্তিকে বলা হয় সুবর্ণ জয়ন্তী। সুতরাং এই পূর্তি ৫০ বছরে পদার্পণ নিয়ে। যেহেতু একটি নির্দিষ্ট সংখ্যাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তাই এটি ক্রমবাচক সংখ্যা। উল্লেখ্য-

**অঙ্কবাচক সংখ্যা (৭, ৯, ৩) কেবল লেখায় নির্দিষ্ট।
**গণনাবাচক সংখ্যা ‘সমস্ত’ অংশ নির্দেশ করে। যেমন- দশ টাকা (এখানে ১-১০ সবগুলো সংখ্যাই অন্তর্ভূক্ত)
**ক্রমবাচক সংখ্যা কেবল নির্দিষ্ট একটি সংখ্যাকে নির্দেশ করে। যেমন- নবম শ্রেণি (এখানে একটি সংখ্যাই বোঝাচ্ছে। এখানে এক থেকে নয় শ্রেণি বোঝাচ্ছে না)।
**তারিখবাচক সংখ্যা কেবল তারিখকেই নির্দেশ করে।

৪. প্রাণপাখি কোন সমাস?
ক. তৎপুরুষ                         খ. রূপক
গ. দ্বন্দ্ব                                  ঘ. অব্যয়ীভাব

ব্যাখ্যা : ছোটবেলায় আমরা বিভিন্ন দৈত্যের গল্পে পড়তাম যে, দৈত্যের প্রাণ নাকি পাখির ভেতরে থাকে। সেখান থেকেই এমন শব্দের ব্যবহার। আমরা জানি গুণবাচক বিশেষ্যের সাথে অন্য বিশেষ্যের অতিরঞ্জিত কাল্পনিক তুলনাকে রূপক কর্মধারয় বলা হয়। সেই হিসেবে প্রাণপাখি শব্দটির ব্যাসবাক্য প্রাণ রূপ পাখি (রূপক কর্মধারয়)। উল্লেখ্য-
**প্রাণপ্রিয় = প্রাণের চেয়ে প্রিয় (৫মী তৎপুরুষ)। যেমন- তুমি আমার প্রাণের চেয়ে প্রিয়।
**প্রাণপূর্ণ = প্রাণ দ্বারা পূর্ণ (৩য়া তৎপুরুষ)।
**প্রাণবিয়োগ = প্রাণকে বিয়োগ (৪র্থী তৎপুরুষ)।
**প্রাণভয় = প্রাণ যাওয়ার ভয় (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়)/ প্রাণের ভয় (৬ষ্ঠী তৎপুরুষ)।
**কালস্রোত = কাল রূপ স্রোত (রূপক)।
**কালসাপ = কাল তুল্য সাপ (নিত্য সমাস)।

৫. তুমি এতক্ষণ কী বললে- বাক্যে ‘কী’ কোন পদ?
ক. বিশেষ্য                       খ. বিশেষণ
গ. সর্বনাম                        ঘ. অব্যয়

ব্যাখ্যা : আধুনিক বাংলা বানান অভিধান মতে, বাক্যে ‘কিঅব্যয় পদরূপে ব্যবহৃত হয়। আর ‘কী’ সর্বনাম, বিশেষণক্রিয়া বিশেষণ পদরূপে ব্যবহৃত হয়।
**আমরা জানি সর্বনাম বসে বিশেষ্যের পরিবর্তে। যেমন- তুমি এতক্ষণ কথা বললে? এখানে যদি প্রশ্ন করা হয়- তুমি এতক্ষণ ‘কী’ বললে? উত্তর হবে ‘কথা’। তাহলে ‘কী’ শব্দটি বিশেষ্যের পরিবর্তে বসেছে সুতরাং এটি সর্বনাম।
**অন্যদিকে যদি এভাবে বলা হত ‘তুমি এতক্ষণ কী কথা বললে?’ তাহলে কথা শব্দটিকে বিশেষায়িত করায় ‘কী’ শব্দটি বিশেষণ হবে।
সূত্র-
কি = অব্যয়। যেমন- আমি কি স্কুলে যাই? (Do I go to school?)
কী+ ক্রিয়াপদ = সর্বনাম। যেমন- আমরা এখানে কী খাবো? (What will we eat here?) তোমার নাম কী?
কী+ বিশেষ্য/ বিশেষণ = বিশেষণ। যেমন- কী সুন্দর এই পৃথিবী! তুমি আজ কী বই পড়লে?

**মনে রাখতে হবে- যেসব প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ/ না (এককথায়) দেওয়া যায়, সেক্ষেত্রে ‘কি’ (ই-কার) ব্যবহৃত হয়। ইংরেজিতে একে Basic Question Pattern বলে।
বাকি সবক্ষেত্রে ‘কী’ (ঈ-কার) হয়।

৬. তুমি যা-ই হারাও, সব আমার দোষ দাও। বাক্যে ‘হারাও’ কোন ধাতু?
ক. প্রযোজক                        খ. কর্মবাচ্যের ধাতু
গ. সংযোজক                       ঘ. নাম ধাতু

ব্যাখ্যা : প্রশ্নোক্ত বাক্যটি ভালোভাবে পড়ে উত্তর করা জরুরি। বোর্ড বইতে আছে ‘যা কিছু হারায়, গিন্নী বলে কেষ্টা বেটাই চোর’ সেই হিসেবে অনেকেই একে ‘কর্মবাচ্যের ধাতু’ বলে উত্তর করবেন। কারণ ‘যা কিছু হারায়’ (হার+ আয়) বাক্যে নিজে নিজে হারানোর কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু প্রশ্নে বলা হয়েছে- ‘যা কিছু হারাও’ অর্থাৎ তুমি যা কিছু হারাও (অন্যকে হারানো) আমার দোষ দাও। সুতরাং এটি কর্মবাচ্যের ধাতু হবে না বরং এটি প্রযোজক ধাতুর উদাহরণ। সঠিক উত্তর ()।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page