বাংলা ব্যাকরণ প্রশ্ন বিশ্লেষণ- দ্বিতীয় পর্ব

বাংলা ব্যাকরণের জটিল প্রশ্নের বিশ্লেষণ

ব্যাকরণের জটিল ও কঠিন প্রশ্নগুলো সহজবোধ্য ভাষায় এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এই বিশ্লেষণগুলো পরীক্ষায় অনেক কাজে আসবে।

১. আজ > আইজ কোন ধ্বনি পরিবর্তন?
ক. স্বরভক্তি                   খ. অপিনিহিতি
গ. স্বরসঙ্গতি                 ঘ. অভিশ্রুতি

ব্যাখ্যা : বাংলা ব্যাকরণ কেবল মুখস্থ করলে অনেকেই এর উত্তর অপিনিহিতি করবে। বোর্ড বইতে আজি > আইজ শব্দটি অপিনিহিতিতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একটু সতর্ক হলেই দেখবেন যে, প্রশ্নে দেওয়া হয়েছে আজ > আইজ
আমরা জানি, পরের ই/উ-কার আগে উচ্চারিত হলে তা অপিনিহিতি। এখানে ‘আজ’ শব্দে ই/উ-কার নেই। তাই এটি অপিনিহিতি হবে না।
আমরা এভাবে বের করতে পারি-আজ = আ+ জ > আইজ = আ+ ই+ জ’- প্রথম শব্দে একটি স্বরধ্বনি (আ) অন্যদিক দ্বিতীয় শব্দে দুটি স্বরধ্বনি (আ+ই)। তাই এটি স্বরাগমের উদাহরণ।

অন্যদিকে মাঝে অতিরিক্ত স্বরধ্বনি আসায় এটি মধ্য স্বরাগম/ বিপ্রকর্ষ/ স্বরভক্তির উদাহরণ। এর সঠিক উত্তর ()।

২. ধ্বনি পরিবর্তন কয় প্রকার?
ক. ২                            খ. ৪
গ. ৩                            ঘ. ৫

ব্যাখ্যা : অনেকেই উত্তর করবে ধ্বনি পরিবর্তন দুই প্রকার (স্বরধ্বনি- ব্যঞ্জনধ্বনি) কিন্তু উত্তরটি ঠিক নয়। মূলত ধ্বনি পরিবর্তন চার প্রকার। যথা-
ক. ধ্বনির আগম : শব্দে স্বরধ্বনি বা ব্যঞ্জনধ্বনির যে অতিরিক্ত আগমন ঘটে, তাকে ধ্বনির আগম বলে। যেমন- আজ > আইজ, দিশ > দিশা, উপকথা > রূপকথা, অম্ব > অম্বল, জমি > জমিন ইত্যাদি।
খ. ধ্বনি লোপ : উচ্চারণের সুবিধার্থে এক বা একাধিক ধ্বনির লোপকে ধ্বনি লোপ বলে। যেমন- জানালা > জানলা, সুবর্ণ > স্বর্ণ, ফাল্গুন > ফাগুন, বউদিদি > বউদি ইত্যাদি।
গ. ধ্বনি রূপান্তর : একটি ধ্বনি ভিন্ন ধ্বনির সংস্পর্শে এলে একটির প্রভাবে অন্যটি বদলে যেতে পারে। বিভিন্ন কারণে এ ধ্বনির বদল হয়। যেমন- মোজা > মুজো, বিলাতি > বিলিতি, বিকাল > বিকেল, পদ্ম > পদ্দ, শরীর > শরীল, পানি > হানি, বড়দা > বদ্দা ইত্যাদি।
ঘ. ধ্বনির স্থানান্তর : ধ্বনির স্থানান্তরের মাধ্যমেও ধ্বনির পরিবর্তন হয়। অপিনিহিতি ও ধ্বনি বিপর্যয় এর উদাহরণ। যেমন- সাধু > সাউধ, আশু > আউশ, করিয়া > কইরা, আজি > আইজ, রিকশা > রিশকা, চানাচুর > চাচানুর ইত্যাদি।

৩. নিচের কোনটি স্ত্রীবাচক শব্দ নয়?
ক. বনানী                      খ. অরণ্যানী
গ. আচার্যা                     ঘ. হিমানী

ব্যাখ্যা : আমরা জানি স্ত্রীবাচক শব্দ দুই প্রকার। সাধারণ পুরুষ-স্ত্রীবাচক শব্দ ও পতি-পত্নীবাচক শব্দ। তবে অনেক সময় বিশেষ্যের শেষে স্ত্রীবাচক প্রত্যয় যোগ হয়ে ভিন্নার্থে শব্দ গঠিত হয়। যেমন- বনানী (বড় বন), অরণ্যানী (বৃহৎ অরণ্য), হিমানী (জমাট বরফ)। অন্যদিকে আচার্যা শব্দটি আচার্য-এর স্ত্রীবাচক রূপ। সুতরাং সঠিক উত্তর ()।

৪. নিচের কোন বানানটি ভুল?
ক. অনুর্ধ্ব                              খ. পুরাধ্যক্ষ
গ. হিতৈষি                              ঘ. অগ্ন্যাশয়

ব্যাখ্যা : প্রতিটি অপশনই এখানে বেশ সংশয়াপন্ন। বাংলা বানান শুদ্ধিকরণে সন্ধির ভূমিকা অপরিসীম।
পুর+ অধ্যক্ষ = পুরাধ্যক্ষ (নগরের তত্ত্বাবধায়ক)।
বাংলা একাডেমির বানান অনুসারে ‘এষি’ হিত+ এষি = হিতৈষি।
অগ্নি+ আশয় = অগ্ন্যাশয়।
এখানে অনু+ ঊধ্ব = অনূর্ধ্ব (দীর্ঘ ঊ-কার) হওয়ার কথা ছিল। সুতরাং সঠিক উত্তর ()।

৫. নিচের কোনটি সন্ধির নিয়মে সাধিত?
ক. মরুভূমি                        খ. গীতাঞ্জলি
গ. ঐহিক                           ঘ. মধুসূদন

ব্যাখ্যা : উচ্চারণের সুবিধার্থে ধ্বনিগত মাধুর্য সম্পাদনই সন্ধির উদ্দেশ্য। তবে সন্ধিতে সাধারণত আদিস্বরের পরিবর্তন হয় না। সেই হিসেবে ‘মরুভূমি’ শব্দে কোনো ধ্বনিগত মাধুর্য হয় নি আর অর্থবোধক হওয়ায় এটি সমাসবদ্ধ শব্দ।
গীত+ অঞ্জলি = গীতাঞ্জলি ধ্বনিগত মাধুর্য হয়েছে।
‘ইহ+ ইক = ঐহিক’ শব্দে আদিস্বরের পরিবর্তন হয়েছে তাই এটি সন্ধিবদ্ধ নয়।
‘মধূসুদন’ শব্দ সন্ধিঘটিত নয়। তাই এর সঠিক উত্তর ()।

৬. কোনটি বাগযন্ত্র নয়?
ক. ওষ্ঠ                               খ. করোটি
গ. জিভ                             ঘ. দাঁত

ব্যাখ্যা : মানুষ যেসব প্রত্যঙ্গের সাহায্যে কথা বলে তাকে বাগযন্ত্র বলে। বাগযন্ত্রগুলো হচ্ছে– ফুসফুস, স্বরযন্ত্র, জিহ্বা, দাঁত, দাঁতের মাড়ি, তালু, আলজিহ্বা, ঠোঁট, নাসিকা ছিদ্র।
করোটি অর্থ মাথার খুলি। সুতরাং সঠিক উত্তর ()।

৭. কোনটি প্রত্যয়ান্ত শব্দ?
ক. লামা                             খ. গামা
গ. হেমা                             ঘ. জামা

ব্যাখ্যা : আমরা জানি যেসব শব্দ ভাঙলে প্রাসঙ্গিক অর্থ পাওয়া যায় না, তাকে মৌলিক শব্দ বলে। আর যেসব শব্দ ভাঙলে প্রাসঙ্গিক অর্থ পাওয়া যায় তাকে সাধিত শব্দ বলে। বিভিন্ন উপায়ে সাধিত শব্দ গঠিত হয় যার মধ্যে প্রত্যয় অন্যতম। প্রশ্নে বর্ণিত ‘লামা’ (তিব্বতীয় পুরোহিতদের উপাধি), গামা (গামা রশ্মি), জামা (পোশাক) মৌলিক শব্দ। অন্যদিকে ‘হেম’ অর্থ স্বর্ণ অন্যদিকে ‘হেমা’ অর্থ সুন্দরী নারী। তাই সঠিক উত্তর ()।

৮. নিচের কোন বানানটি ভুল?
ক. ঘুষ                                খ. ষাণ্মাসিক
গ. পরিষেবা                        ঘ. সুষুপ্তু

ব্যাখ্যা : ষ-ত্ব বিধান অনুসারে অ/আ ধ্বনি ছাড়া বাকি সব স্বরধ্বনির পর ‘ষ’ হবে। নিয়মানুসারে সবগুলো অপশনেই ‘ষ’ হওয়ার কথা কিন্তু প্রশ্নানুসারে একটি অপশন ভুল।
‘ণ-ত্ব/ ষ-ত্ব বিধান’ কেবল তৎসম শব্দের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এই মূলনীতি অনুসারে ঘুস বানানে ‘’ হবে। কারণ ‘ঘুস’ তদ্ভব শব্দ। সুতরাং সঠিক উত্তর ()।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart

You cannot copy content of this page

Scroll to Top