বাংলা ব্যাকরণ প্রশ্ন বিশ্লেষণ- প্রথম পর্ব

ব্যাকরণমূলক প্রশ্নের বিশ্লেষণ

প্রতিটি পরীক্ষায় ব্যাকরণ থেকে প্রশ্ন আসে। কঠিন ও জটিল প্রশ্নগুলো সহবোধ্য বিশ্লেষণ এখানে তুলে ধরা হল।

১. বিধবা শব্দের পুরুষবাচক রূপ কোনটি?
ক. বিধব                          খ. বিপত্নীক
গ. সধবা                          ঘ. কৃতদার

ব্যাখ্যা : স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে ‘বিধবা’ শব্দটি তো নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ। তাহলে এর পুরুষবাচক রূপ হবে কীভাবে?
এমন প্রশ্ন শতভাগ যৌক্তিক। ‘পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের’ অধ্যায়ে আমরা বলেছি যে, অনেক নিত্য পুরুষবাচক ও স্ত্রীবাচক শব্দ প্রায়োগিকভাবে লিঙ্গান্তর হতে পারে। যেমন- ‘রাষ্ট্রপতি’ নিত্য পুরুষবাচক শব্দ কিন্তু প্রায়োগিকভাবে ‘মহিলা রাষ্ট্রপতি’ স্ত্রীবাচক শব্দ।
প্রশ্ন অনুসারে অর্থগতভাবে বিধবা শব্দের পুরুষবাচক রূপ ‘বিপত্নীক’। কারণ ‘বিধবা’ বলা হয় যার স্বামী মারা গেছে। তেমনি ‘বিপত্নীক’ বলা হয় যার স্ত্রী মারা গেছে। সুতরাং সঠিক উত্তর (খ)।
সধবা : যার স্বামী জীবিত আছে।
কৃতদার : বিবাহিত।

২. কোনটি দ্বিরুক্ত শব্দ নয়?
ক. বাড়ি বাড়ি                    খ. শীত শীত
গ. টুপটাপ                        ঘ. চোখে চোখে

ব্যাখ্যা : বাংলা ভাষায় দ্বিরুক্ত শব্দ নিয়ে কিছু বিতর্ক আছে। প্রশ্নটি বিতর্ক অংশ থেকেই নেওয়া হয়েছে। প্রচলিত ধারণা অনুসারে সবগুলো অপশনই সঠিক। কিন্তু উত্তর হিসেবে একটি নেওয়া হবে।

*দ্বিরুক্ত শব্দ : অনেকের মতে দ্বিরুক্ত শব্দ বলতে একই শব্দ অবিকৃতভাবে পরপর ব্যবহারকে বুঝায়। যেমন- চোখে চোখে, যায় যায় ইত্যাদি।
*শব্দদ্বৈত : একই শব্দ আংশিক পরিবর্তনে পরপর ব্যবহার অর্থাৎ পরের অংশের পরিবর্তনের ফলে শব্দদ্বৈত সৃষ্টি হয়। যেমন- ফুটফাট, টুপটাপ ইত্যাদি। সুতরাং এই সংজ্ঞানুসারে সকল দ্বিরুক্তিই শব্দদ্বৈত কিন্তু সকল শব্দদ্বৈত দ্বিরুক্ত শব্দ নয়।

৩. কৃষক জমিতে ফসল ফলায়- বাক্যে ‘ফলায়’ কোন ধাতু?
ক. নাম ধাতু                       খ. কর্মবাচ্যের ধাতু
গ. প্রযোজক ধাতু              ঘ. সংযোজক ধাতু

ব্যাখ্যা : সাধারণভাবে লক্ষ্য করলে শিক্ষার্থীরা প্রযোজক ধাতু উত্তর করবে। কারণ, অন্য কিছু ফলানো বোঝাচ্ছে তাই এটি ‘প্রযোজক ধাতু’। কিন্তু উত্তর এটি নয়। প্রযোজক ধাতুর সূত্র হচ্ছে ‘মৌলিক ধাতু+ আ = অন্যকে দিয়ে করানো’।
কিন্তু ফলানো শব্দের মূল হচ্ছে ‘ফল’ যা একটি বিশেষ্য। আর বিশেষ্য থেকে তৈরি ধাতুকে ‘নাম ধাতু’ বলে। এমনিভাবে রাগানো, আটকানো, বেতানো ইত্যাদি। সুতরাং প্রশ্নটির সঠিক উত্তর (ক)

৪. দ্বৈপায়ন শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদ কোনটি?
ক. দ্বীপ+ অয়ন                  খ. দ্বীপ+ ষ্ণ্য
গ. দৈব+ আয়ন                  ঘ. দ্বীপ+ আয়ন

ব্যাখ্যা : এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে অনেক মতবিরোধ দেখা যায়। প্রথম কথা হচ্ছে, ‘দ্বৈপায়ন’ মূলত সন্ধি বিচ্ছেদ না এটি প্রত্যয়ঘটিত শব্দ। কারণ, সন্ধি বিচ্ছেদে শব্দের আদিস্বরের পরিবর্তন হয় না কিন্তু প্রত্যয়ে গুণ-বৃদ্ধির নিয়মে আদিস্বরের পরিবর্তন ঘটে। যেমন- শারদীয় (শরৎ+ঈয়), বাহুল্য (বহুল+য), দৈব (দেব+ ষ্ণ)। তবে অনেক প্রত্যয়ঘটিত শব্দও পরীক্ষায় সন্ধি বিচ্ছেদে আসে।

সংস্কৃতে ‘অয়ন’‘আয়ন’ দুটি প্রত্যয় আছে। ‘অয়ন’ প্রত্যয় দিয়ে গঠিত শব্দে সাধারণত আদিস্বরের পরিবর্তন হয় না। যেমন- নগরায়ন, রামায়ণ, নারায়ন (নার+অয়ন)।
কিন্তু ‘আয়ন’ প্রত্যয়ঘটিত শব্দে আদিস্বরের পরিবর্তন হয়। যেমন- বাৎস্যায়ন। ‘দ্বৈপায়ন’ শব্দের বিশ্লেষণে অভিধানে দেওয়া আছে ‘দ্বীপ+অয়ন+অ’- এই থেকেই বিতর্ক শুরু। যেহেতু শব্দের আদিস্বরের পরিবর্তন হয়েছে, তাই ‘দ্বীপ+আয়ন’ অর্থাৎ (ঘ) অপশনটিই অধিক যুক্তিযুক্ত।

৫. কোন ভাষার নিজস্ব লিপি নেই?
ক. আরবি                      খ. ফরাসি
গ. চীনা                          ঘ. ফার্সি

ব্যাখ্যা : প্রতিটি ভাষারই নিজস্ব লিপি আছে তাহলে এই প্রশ্নের উত্তর কী হতে পারে। মূলত এটি একটি সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন। চীনা ভাষা বলতে কোনো ভাষা নেই। বরং চীনা ভাষাকে মান্দারিন বলা হয়। তাই উত্তর হবে (গ)

৬. ঢাকার প্রথম প্রেসের নাম কী?
ক. বার্তাবহ প্রেস             খ. বাঙ্গালা প্রেস
গ. ঢাকা প্রেস                  ঘ. ফরিদপুর প্রেস

ব্যাখ্যা : প্রশ্নে ঢাকার প্রথম প্রেসের নাম জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা অনেকেই এর উত্তর ‘বাঙ্গালা প্রেস’ দিই যা ঠিক নয়। ঢাকায় অবস্থিত প্রথম প্রেসের নাম ‘ঢাকা প্রেস’ যা ১৮৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই প্রেস থেকে বাংলা অক্ষরে ছাপানো হত না বরং এখান থেকে ‘ঢাকা নিউজ’ নামে ইংরেজি পত্রিকা বের হত।
পরবর্তীতে ১৮৬০ সালে বাঙ্গালা প্রেস প্রতিষ্ঠিত হয় যেখান থেকে ‘নীল দর্পণ’ ‘কবিতা কুসুমাবলী’ বের হত। আর পূর্ববঙ্গের রংপুরে সর্বপ্রথম ‘বার্তাবহ যন্ত্র’ নামে প্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। আর ফরিদপুর প্রেস থেকে ‘অমৃতবাজার’ পত্রিকা বের হত। সুতরাং সঠিক উত্তর (গ)

৭. বর্গীয় নাসিক্য বর্ণ কতটি?
ক. ৫                         খ. ৩
গ. ৭                          ঘ. ৮

ব্যাখ্যা : নাকের সাহায্যে উচ্চারিত বর্ণগুলোকে আমরা নাসিক্য বর্ণ বলি। প্রশ্নে বর্গীয় নাসিক্য বর্ণের সংখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা জানি বাংলা বর্ণগুলো পাঁচটি (ক/ চ/ ট/ ত/ প) বর্গে বিভক্ত। আর বর্গীয় পঞ্চম বর্ণগুলো (ঙ/ ঞ/ ণ/ ন/ ম) নাসিক্য বর্ণ হিসেবে স্বীকৃত। সুতরাং সঠিক উত্তর (ক)
**তবে মনে রাখতে হবে ধ্বনি ও বর্ণ এক নয়। যদি বলা হত বর্গীয় নাসিক্য ধ্বনি কয়টি? তাহলে তিনটি উত্তর হত। যথা- ঙ, ন, ম।
**মোট নাসিক্য বর্ণ সাতটি। যথা- ঙ, ঞ, ণ, ন, ম, ং, ঁ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart

You cannot copy content of this page

Scroll to Top