সুচেতনা (মানুষের মধ্যে শুভবোধের কামনা)
সুচেতনা (শুভ চেতনা), তুমি এক দূরতর দ্বীপ (প্রেম, সত্য ও কল্যাণ নেই বলে সবার মধ্যে সুচেতনা বিরাজমান নয়)
বিকেলের নক্ষত্রের কাছে;
সেইখানে দারুচিনি-বনানীর ফাঁকে
নির্জনতা আছে। (দ্বীপের মতো বিচ্ছিন্ন এই চেতনার সবুজে নির্জনতা তথা শুভ চেতনা আছে)
এই পৃথিবীর রণ রক্ত সফলতা
সত্য; তবু শেষ সত্য নয়। (যুদ্ধের মাধ্যমে সভ্যতা বিকাশ হয়েছে এটা সত্য, তবে এটাই শেষ সত্য নয়)
আজকে অনেক রূঢ় রৌদ্রে (প্রতিকূল পরিস্থিতি) ঘুরে প্রাণ
পৃথিবীর মানুষকে মানুষের মতো (কল্যাণ ও সত্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে পৃথিবীতে অগণিত প্রাণহানি ঘটেছে)
ভালোবাসা দিতে গিয়ে তবু
দেখেছি আমারি হাতে হয়তো নিহত
ভাই বোন বন্ধু পরিজন প’ড়ে আছে;
পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন;
মানুষ তবুও ঋণী পৃথিবীরই কাছে। (হিংসা বিদ্বেষ অকল্যাণ পৃথিবীর এখন গভীর অসুখ। তবু অনেক মানুষ শুভবুদ্ধির অধিকারী। এই ইতিবাচক মনোভাবের কারণে মানুষ পৃথিবীর নিকট কৃতজ্ঞ)
সুচেতনা, এই পথে আলো জ্বেলে— এ-পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে;
সে অনেক শতাব্দীর মনীষীর কাজ; (বহু মনীষীর প্রচেষ্টার মাধ্যমে পৃথিবীতে কল্যাণ ফিরে আসবে)
এ-বাতাস কি পরম সূর্যকরোজ্জ্বল; (আশাবাদ)
প্রায় তত দূর ভালো মানব-সমাজ (সূর্যকিরণের মতো উজ্জ্বল বাতাস যতদূর যায় ততদূর পর্যন্ত ব্যাধিমুক্ত মানব সমাজ গড়ে তুলা হবে)
আমাদের মতো ক্লান্ত ক্লান্তিহীন নাবিকের হাতে
গ’ড়ে দেবো, আজ নয়, ঢের দূর অন্তিম প্রভাতে। (প্রতিকূল পরিস্থিতিতে)
মাটি-পৃথিবীর টানে মানবজন্মের ঘরে কখন এসেছি,
না এলেই ভালো হ’তো অনুভব ক’রে; (পৃথিবীর সংকট দেখে মানবরূপে জন্ম না নেওয়াটা আকাঙ্ক্ষা করেছেন)
এসে যে গভীরতর লাভ হ’লো সে-সব বুঝেছি (পৃথিবীর শুভবোধ দেখে কবি অনুপ্রাণিত হন)
শিশির শরীর ছুঁয়ে সমুজ্জ্বল ভোরে; (প্রকৃতির মধ্যে মুক্তির স্বাদ)
দেখেছি যা হ’লো হবে মানুষের যা হবার নয়—
(চিরন্তন অন্ধকার) শাশ্বত রাত্রির বুকে সকলি অনন্ত সূর্যোদয়। (সংকট উত্তরণের প্রত্যাশা)
- সুচেতনা কবিতাটি বনলতা সেন কাব্য থেকে নেওয়া হয়েছে। এটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত।
- আরও পড়ুন- প্রতিদান কবিতার বিশ্লেষণ